শেওড়াফুলি (বাঁ দিেক) এবং উলুবেড়িয়াতে বিক্রি হচ্ছে ঘুড়ি। নিজস্ব চিত্র
চিনা মাঞ্জা নিষিদ্ধ। পুলিশি অভিযানও জারি আছে। তা সত্ত্বেও আজ, বিশ্বকর্মা পুজোতে ঘুড়ি ওড়াতে ওই মাঞ্জার ব্যবহার কি আদৌ পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে? নাকি অলি-গলি থেকে ওই মাঞ্জার দাপট ফের প্রকাশ্যে আসবে? মৃত্যু হবে পাখির, জখম হবেন মানুষ!
দুই জেলার (হাওড়া-হুগলি) পুলিশ প্রশাসন অবশ্য দাবি করেছে, সর্বত্র অভিযান চলছে। ঘুড়ি ব্যবসায়ীদের ওই মাঞ্জা বিক্রি করতে নিষেধ করা হয়েছে। প্রচারও চলেছে।
কয়েক বছর ধরেই চিনা মাঞ্জার (সিন্থেটিক সুতো) দাপটে নানা প্রান্তে পাখিরা কখনও প্রাণ, কখনও ওড়ার ক্ষমতা হারাচ্ছে, কখনও জখম হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। মাসছয়েক আগে উলুবেড়িয়ার কালীনগরের যুবক স্নেহাংশু মণ্ডল উলুবেড়িয়া উড়ালপুল দিয়ে মোটরবাইকে যাওয়ার সময় চিনা মাঞ্জায় আহত হন। কিছু দিন আগে পাঁচলার এক যুবকেরও একই দশা হয়।
পরিবেশকর্মীরা জানান, চিনা মাঞ্জায় গত এক বছরে শুধু হাওড়া জেলাতেই অন্তত ২০টি পাখি মারা গিয়েছে। আহত পাখির সংখ্যা আরও অনেক। ‘হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চ’-এর সম্পাদক শুভদীপ ঘোষ বলেন, ‘‘আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বেশ কিছু ব্যবসায়ী জেলার অলি-গলিতে ওই মাঞ্জা বিক্রি করছেন। প্রশাসনকে একাধিক বার জানানোর পর কয়েক দিন ধরে নজরদারি চালানো হচ্ছে। কিন্তু এখানেই শেষ করলে হবে না। নজরদারি চালিয়ে যেতে হবে।’’
উলুবেড়িয়ার কাজি কামালউদ্দিন নামে এক ঘুড়ি ব্যবসায়ীর দাবি, ‘‘পুলিশের ভয়ে এ বার চিনা মাঞ্জা বিক্রি করা যায়নি। তাই সুতোর মাঞ্জা বিক্রি করছি। তাতে এ বছর ঘুড়ি বিক্রি কমে গিয়েছে।’’ হুগলিতেও পুলিশের তৎপরতা দেখে পরিবেশবিদরা মনে করছেন, আজ, বিশ্বকর্মা পুজোতে পাখিরা অনেকটাই নিশ্চিন্তে উড়তে পারবে। গত বছর শ্রীরামপুর থানা এলাকাতেই চিনা মাঞ্জায় কয়েকটি চিল জখম হয়েছিল বলে জানিয়েছেন এক পুলিশ অফিসার। এ বার অবশ্য অভিযানে জোর বেড়েছে।
বৈদ্যবাটী পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের গোস্বামী বাগান লেনে বেশ কয়েকটি ঘুড়ির দোকান আছে। এখানে বৃহস্পতিবার চিনা মাঞ্জা মেলেনি। শেওড়াফুলি ঘুড়ির বাজার থেকে উধাও হয়েছে চিনা মাঞ্জা। পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুলিশ প্রশাসন যে কাজটা করেছে তা সত্যিই ভাল। তবে, কী ভাবে এই চিনা মাঞ্জা বাজারে আসছে, সে দিকেও নজর রাখতে হবে। যাঁরা চিনা মাঞ্জা ব্যবহার করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াও জরুরি। তবেই মানুষ আরও বেশি সচেতন হবেন।’’
বৃহস্পতিবার শেওড়াফুলি বাজারে ঘুড়ি কিনতে এসেছিলেন এক যুবক। তিনি বলেন, ‘‘এখানে শস্তায় ঘুড়ির সুতো পাওয়া যায়। তাই প্রতি বছর আসি। চিনা মাঞ্জা বিক্রি বন্ধ হয়ে যাওয়াতে খুব ভাল হয়েছে। নিজেরা রাত জেগে মাঞ্জা দিয়ে প্যাঁচ খেলে, ঘুড়ি কাটতে পারার মজাই আলাদা।’’
শেওড়াফুলির ঘুড়ি বিক্রেতা প্রভাত দে বলেন, ‘‘প্রশাসন বারণ করায় আমরা চিনা মাঞ্জা বিক্রি করছি না। মাঞ্জাসুতোর দাম বেশি। সেই কারণে ঘুড়ি ওড়ানোর রেওয়াজ অনেক কমে গিয়েছে।’’
এ সবের পরেও চিনা মাঞ্জা নিয়ে পুরোপুরি নিশ্চিন্ত থাকা যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ঠিক যে ভাবে কালীপুজোতে দাপট জানান দেয় নিষিদ্ধ শব্দবাজি, সে ভাবে চিনা মাঞ্জাও আজ আকাশ ঘিরবে না তো!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy