ডোমজুড়ের এই দোকানগুলি থেকেই চলে ডিজ়িটাল লটারি। নিজস্ব চিত্র।
কে বলবে ওগুলো ‘দোকান’! ছবিটা বছর তিনেক ধরে একই রকম।
সকাল ৮টা বাজলেই ডোমজুড় থানা এলাকার বেশ কিছু একচিলতে টালির চালের ঘরে ভিড় জমায় স্কুল পড়ুয়া থেকে বয়স্করা। কেউ বাজারের ব্যাগ হাতে ঢোকে, কেউ বা কাজে যাওয়ার সময়। বেরোবার সময় কেউ হাসেন, কেউ মাথা চাপড়ান। ভিতরে কী হচ্ছে, দেখে বোঝার উপায় নেই। দরজার সামনে পর্দা ঝোলে।
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, দোকান আবার কী! ওই সব ঘরে ডিজ়িটাল লটারির নামে আদতে জুয়া চলে। এখানে প্রতিদিন সর্বস্বান্ত হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। তবু, খেলার বিরাম নেই। লটারির নেশায় মানুষ এতটাই বুঁদ হয়ে গিয়েছেন যে সকালে বাজারের টাকা নিয়ে বেরিয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন। অশান্তি হচ্ছে। তবু, খেলা চাই। স্কুল পড়ুয়ারা টিফিনের টাকা নিয়ে স্কুলে না গিয়ে সোজা ঢুকে পড়ছে দোকানে। বেশি ভিড় করছেন বেকাররা। ওই সব ঘরে রয়েছে একাধিক কম্পিউটার।প্রতিটি কম্পিউটারে একজন করে অপারেটর আছে।
ডোমজুড়ের বেগড়ির বাসিন্দা অমরনাথ প্রধান জানান, এই ডিজ়িটাল জুয়া নিয়ে তাঁরা একাধিকবার ডোমজুড় থানা, স্থানীয় নেতা, পঞ্চায়েত— সব স্তরে জানিয়েছেন। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অমরনাথ বলেন, ‘‘এই জুয়ার জন্য সংসার ভাঙছে। বিপথে যাচ্ছে পুরো যুবসমাজ। পুরো ঘটনার সঙ্গে পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতারা জড়িত থাকায় কেউ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’’
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই জুয়া চলছে ডোমজুড়ের বলুহাটি, সলপ সেতুর কাছে, সরস্বতী সেতু এলাকায়, মাকড়দহে, জালান কমপ্লেক্স, বেগড়িবাজার জলট্যাঙ্ক, আলমপুর রশিকলের নিউ করোলা, আমরিয়া-সহ ৪০টি জায়গায়। সকাল ৮টা থেকে রাত পর্যন্ত খোলা থাকছে দোকানগুলি। কাঁচা টাকা আয়ের লোভে ভিড় জমাচ্ছে এলাকার দুষ্কৃতীরাও।
কী ভাবে এই ডিজ়িটাল জুয়া চলে?
এক কারবারি বলেন, ‘‘এটা এক রকম আধুনিক সাট্টা। ১০ টাকা খেললে ১০০ টাকা পাওয়া যায়। অনেকে ১০০ টাকা লাগিয়ে এক হাজার টাকা আয় করেন। আবার কেউ হাজার টাকা লাগিয়ে সর্বস্বান্ত হন। এই পুরো লটারিটা চলে কম্পিউটারে একটি বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে।’’
কী ভাবে পাওয়া যায় এই বিশেষ সফটওয়্যার?
ওই কারবারি জানান, কলকাতার মানিকতলার পিতলপট্টির এক ব্যবসায়ীর থেকে এই সফটওয়্যার ভাড়া পাওয়া যায়। শর্ত হিসেবে তাঁকে সারাদিনের আয়ের ১০ শতাংশ দিতে হয়। আর যে সব এলাকায় এই ব্যবসা চালু করতে হয়, সেখানে স্থানীয় থানা ও রাজনৈতিক নেতাদের মোটা টাকা দাদন দিতে হয়। এ ছাড়া থাকে মাসোহারার ব্যবস্থাও। কারণ, এই ব্যবসা থেকে প্রতিদিন ৫০-৬০হাজার টাকা আয় হয় এক-একটি দোকান থেকে। তাই সবাইকেই ‘তোলা’ দিতে হয়।
ডোমজুড় চুনির মাঠ এলাকার এক শিক্ষক বলেন, ‘‘এলাকার বেকারদের আয় বলতে এখন এই লটারি। তাই রমমিয়ে চলছে। পড়াশোনা শিকেয় উঠেছে অনেক পড়ুয়ার। গ্রাম্য সমাজ ব্যবস্থাটাই পুরো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।’’
যদি এই ধরনের অবৈধ কোনও লটারির খবর পাননি বলে দাবি করেছেন ডোমজুড়ের বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি কল্যাণ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের লটারির খবর আমার জানা নেই। দলের কেউ যুক্ত কিনা জানি না। খোঁজ নিতে হবে। এটা চলতে দেওয়া যায় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy