রেমালের জেরে ঘরে হাঁটুজল। তার মধ্যেই রান্না। সোমবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
‘‘দাদা, একেবারে ডান দিক চেপে হাঁটুন। বাঁ দিকে বড় নর্দমা।’’ পিছন থেকে
সাবধানবাণী আসার পরেই থমকে গিয়েছিলাম। এরই মধ্যে তাকিয়ে দেখি, কিছুটা দূরে জমা জলের নীচে যে গভীর নর্দমা রয়েছে, তা বুঝতে না পেরে আছাড় খেয়ে পড়লেন হাওড়া পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ দফতরের এক অফিসার। প্রায় দু’ফুট জলের নীচে কোথায় কী আছে, তা ঠাহর করার উপায় নেই যে!
জায়গার নাম ‘কেলভিন কোর্ট’। পূর্ব রেলের অফিসার-কর্মীদের দীর্ঘদিনের পুরনো আবাসন। কয়েক একর জায়গা নিয়ে তৈরি হওয়া ওই আবাসনের এক দিকে হাওড়া ময়দান মেট্রো স্টেশন, অন্য দিকে পূর্ব রেলের হাওড়া শাখার রেললাইন। মাঝখান দিয়ে গিয়েছে চার্চ রোড। একটু এগোলেই হাওড়া পুরভবন, জেলাশাসকের বাংলো, জেলা প্রশাসনের একাধিক অফিস। এমন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থাকা রেলের ওই আবাসনটি আশপাশের জমি থেকে নিচু হওয়ায় সেখানে ভারী বৃষ্টিতে জল জমা বাসিন্দাদের কাছে নতুন অভিজ্ঞতা নয়। কিন্তু, রবিবার রাত থেকে শুরু হওয়া ঝড়বৃষ্টিতে যে ভাবে আবাসন জুড়ে জলস্তর ক্রমাগত বেড়েছে, তাতেই আতঙ্কিত হয়েছেন তাঁরা।
‘‘আতঙ্কিত কেন হব না বলুন? ছোট বাচ্চা নিয়ে থাকি। আমপান, ইয়াসের সময়ে যা ঘটেছিল, সে কথা মনে করে সারা রাত জেগে কাটিয়েছি।’’— জলমগ্ন আবাসনের ভিতরে একটি ঘরের বিছানায় বসে বলছিলেন রাসমতি মহাপাত্র। আবাসনের প্রতিটি ঘরে হাঁটুর উপরে জল। তাতে ভাসছে আবাসনে থাকা ৮৪টি পরিবারের সংসারের জিনিসপত্র। রাসমতির পাশের ঘরের ঋতু দেবী, কমলেশ্বর প্রসাদদের অবস্থাও তথৈবচ। বেলা ১২টাতেও ঘরে হাঁড়ি চড়েনি। ‘‘রান্না করব কী ভাবে? বিছানার উপরে তো আর রান্না করা যায় না!’’ বলছিলেন ঋতু। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ঝড়বৃষ্টি হলে কি প্রতি বার এ ভাবে ভুগতে হবে?’’
ঘূর্ণিঝড় রেমালের জেরে রবিবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হয়েছিল দমকা হাওয়া আর প্রবল বৃষ্টি। যার রেশ চলেছে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত। ঝড়ের দাপটে গাছ পড়েছে ফোরশোর রোড, ধাড়সা মল্লিকপাড়া, বকুলতলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। তবে পুরসভার কর্মীরা সকালের মধ্যেই সেই সব গাছ কেটে সরিয়ে দেন।
হাওড়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, অতিবৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ে পঞ্চাননতলার দেশপ্রাণ শাসমল রোড, বেলগাছিয়ার বেনারস রোড, ড্রেনেজ ক্যানাল রোড-সহ উত্তর হাওড়ার একাধিক নিচু এলাকা। তবে চার্চ রোডে রেলের ওই আবাসনের মতো পরিস্থিতি কোথাও হয়নি।
‘কেলভিন কোর্ট’-এর আবাসিকদের দুরবস্থার কথা জেনে হাঁটুজল ভেঙে সেখানে আসেন পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন পুর কমিশনার স্মৃতিরঞ্জন মোহান্তি-সহ জঞ্জাল অপসারণ বিভাগ ও নিকাশি বিভাগের পদস্থ ইঞ্জিনিয়ারেরা এবং প্রাক্তন পুরপ্রতিনিধি শৈলেশ রাই।
পুর চেয়ারপার্সন বলেন, ‘‘আবাসনের উল্টো দিকে রেলওয়ে ক্লাবের নীচে থাকা ম্যানহোলের আবর্জনায় বুজে গিয়েছে আবাসনের নিকাশি নালা। ফলে, সেই জল বেরোতে পারেনি। ঘরে এসে ঢুকেছে।’’ তিনি আরও জানান, আশা করা যাচ্ছে, বৃষ্টি কমলে সাত-আট ঘণ্টার মধ্যে শহরের অন্য এলাকাগুলি থেকেও জল নেমে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy