অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করতে কালঘাম ছুটছে সাধারণ মানুষের। প্রতীকী চিত্র।
তাঁদের গাড়িতে না-ওঠায় সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের সালার গ্রামীণ হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স-চালকেরা এক রোগীকে অন্যত্র স্থানান্তরে বাধা দেন এবং অক্সিজেন মাস্ক খুলে দেওয়ায় তিনি মারা যান বলে অভিযোগ ওঠে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে গাড়ির অভাবে মৃত সন্তানের দেহ ব্যাগে ভরে বাড়ি ফেরেন এক যুবক। গ্রামীণ হুগলিতেও অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করতে কালঘাম ছুটছে অনেকের। ইচ্ছেমতো দর হাঁকার ‘দাদাগিরি’ সর্বত্র।
এই জেলার সরকারি হাসপাতালে প্রসূতি ও শিশুদের জন্য ১০২ আ্যম্বুল্যান্স, নিশ্চয়যান রয়েছে। অন্য রোগীদের জন্য সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স নেই। অ্যাম্বুল্যান্সের অভাবে তিন মাস আগে কামারপুকুর গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে শ্বাসকষ্টের রোগীকে আরামবাগ মেডিক্যালে স্থানান্তরিত করতে না-পারায় তিনি মারা যান বলে অভিযোগ ওঠে। বলাগড়ের বাকুলিয়া-ধোবাপাড়া পঞ্চায়েতের বাসিন্দা রুপালি সিংহের অভিজ্ঞতা, ‘‘আমপানে মাটির ঘর চাপা পড়ে জখম হই। পঞ্চায়েত থেকে বা বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স পাইনি। টোটোয় কালনা হাসপাতালে যাই।’’ অভিযোগ, বহু জায়গাতেই রাতবিরেতে অ্যাম্বুল্যান্স মেলে না। কুন্তীঘাটের এক যুবকের কথায়, ‘‘ভাড়াগাড়িই ভরসা।’’
বিভিন্ন জায়গায় পঞ্চায়েত, থানা, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে বিধায়কের দেওয়া অ্যাম্বুল্যান্স অকেজো। আরামবাগের প্রাক্তন বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরার খেদ, তাঁর বিধায়ক তহবিল থেকে আরামবাগ হাসপাতালে দেওয়া অ্যাম্বুল্যান্স নষ্ট হয়ে গিয়েছে। থানার শববাহী গাড়িও। তাঁর কথায়, ‘‘কে চালাবেন, কে তেল কিনবেন, তারই ঠিক নেই।’’ খানাকুল-২ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক রক্তিম চট্টোপাধ্যায় জানান, চালানোর খরচের ব্যবস্থা না থাকায় বছর কয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া একটি আ্যাম্বুল্যান্স পড়ে নষ্ট হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে বেশি ভাড়ায় ব্যাক্তি-মালিকানার অ্যম্বুল্যান্স বা গাড়িই ভরসা। পুরশুড়া ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সুব্রত বাগ জানান, জরুরি ক্ষেত্রে ১০২ অ্যম্বুল্যান্সকে (প্রসূতিদের জন্য) পাঠানো হয় ১০৮ অ্যাম্বুল্যান্স (অন্য জরুরি রোগীদের জন্য) হিসাবে। স্বাস্থ্য দফতরের খবর, জেলার বিভিন্ন স্তরের ২৩টি হাসপাতালে ১০২ অ্যম্বুল্যান্স ৫৫টি। নিশ্চয়যান আছে ৩৪টি। পোলবা-দাদপুর, সিঙ্গুর, কানাইপুর, আঁকড়ি-শ্রীরামপুর, নতিবপুর, নারায়ণপুর, কামারপুকুর গ্রামীণ হাসপাতাল, গোঘাট ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, শ্রীরামপুর ওয়ালশে নিশ্চয়যান শূন্য।
বলাগড় ব্লকের ১৩টি পঞ্চায়েতের ৭টিতে অ্যাম্বুল্যান্স অমিল। দু’টিতে সচল। ৪টিতে অকেজো। পঞ্চায়েত সমিতির দু’টি অ্যাম্বুল্যান্স গ্রামীণ হাসপাতালে পরিষেবা দেয়। নিশ্চয়যান ৪টি।
অ্যাম্বুল্যান্সে খরচ কেমন?
চালকেরা জানান, চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ২৬টি বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স থাকে। সর্বনিম্ন ভাড়া ৪০০ টাকা। চুঁচুড়া থেকে ধনেখালি ১২০০ টাকা। এসএসকেএম বা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে যেতে পড়ে ২২০০-২৫০০ টাকা (অক্সিজেন, এসি খরচ আলাদা)। ভুক্তভোগীদের অবশ্য দাবি, ধনেখালির ভাড়া চাওয়া হয় ১৮০০ টাকা। কলকাতার ক্ষেত্রে আড়াই হাজারের বেশি। রাতে ৩ হাজার ছাড়ায়। চন্দননগর হাসপাতালের ক্ষেত্রেও কার্যত তাই। পোলবা গ্রামীণ হাসপাতাল, দাদপুর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অ্যাম্বুল্যান্সের ভাড়া নিয়েও অভিযোগ রয়েছে।
পান্ডুয়ার এক যুবক বলেন, ‘‘কয়েক মাস আগে রাতে ইমামবাড়া হাসপাতাল থেকে এক বৃদ্ধার মৃতদেহ নিয়ে যেতে গাড়ি পাচ্ছিলাম না। এক অ্যাম্বুল্যান্সচালক বলেন, নিয়ে যাবেন। ৫ হাজার টাকা লাগবে। তার মধ্যে গাড়ি ধোওয়ার স্যানিটাইজ়ার, স্নানের তোয়ালে, সাবানের দর ধরে নেওয়া আছে।’’
বলাগড় ব্লক থেকে কলকাতা অ্যাম্বুল্যান্সে তিন হাজার। ইমামবাড়া হাজার। পান্ডুয়া ব্লকে ১৬টি পঞ্চায়েতে ৩৫টি অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে। গ্রামীণে ৮টি। দু’টি মাতৃযান। দু’টি শববাহী গাড়ি। এখান থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে ইমামবাড়ার ভাড়া ১২০০, এসএসকেএম ৩২০০ টাকা। কলকাতার অন্যান্য হাসপাতালে আরও বেশি। পার্কিং খরচ আলাদা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy