স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও অস্ত্রোপচার না হওয়ায় চিন্তিত জাহানারা। নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যের অন্যতম নামী প্রকল্প ‘স্বাস্থ্যসাথী’। যে কার্ড থাকলে নিখরচায় চিকিৎসা মেলার কথা, সেখানে চুঁচুড়া ইমামবাড়া সদর হাসপাতালে ১৯ দিন ধরে অস্ত্রোপচারই হচ্ছে না জাহানারা বিবি নামে এক মহিলার। তাঁর স্বামী মইনুদ্দিনের অভিযোগ, অস্ত্রোপচারের উপযুক্ত সামগ্রী মিলছে না বলে গড়িমসি করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে, কবে স্ত্রীর অস্ত্রোপচার হবে তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে তাঁর।
এ নিয়ে হাসপাতালের সুপার অমিতাভ মণ্ডলকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মৃগাঙ্কমৌলি কর বলেন, ‘‘কী হয়েছে, খোঁজ নিচ্ছি। সুপারের সঙ্গে কথা বলব। মহিলার চিকিৎসা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় প্রাধান্য দেওয়া হবে।’’
গত ১১ জুলাই রাতে বাড়িতে পড়ে গিয়ে বাঁ হাত ভাঙেন বলাগড়ের দ্বারপাড়া পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা জাহানারা। পরের দিন ভোরে তিনি ওই সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। মইনুদ্দিন জানান, সে দিন চিকিৎসক বলেছিলেন, অস্ত্রোপচার করে হাতে প্লেট বসাতে হবে। সেইমতো গত ২১ জুলাই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ‘ব্লক’ (সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার তথ্য দেওয়া) করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কথা ছিল পরের দিন অস্ত্রোপচার হবে। কিন্তু প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অভাবে বুধবার পর্যন্ত তা হয়নি বলে অভিযোগ মইনুদ্দিনের।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, দুর্ঘটনাজনিত কারণে অস্থি সংক্রান্ত (অর্থোপেডিক) সমস্যায় স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে অস্ত্রোপচার হয়। বেসরকারি হাসপাতালে সেই অস্ত্রোপচার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই করতে হয়। তবে, সরকারি হাসপাতালে কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। অস্ত্রোপচার করতে হবে বুঝলেই বেসরকারি হাসপাতাল তাই দিনে দিনেই কার্ডটি ‘ব্লক’ করে। রোগী সুস্থ হলে ছুটির শংসাপত্র সংক্রান্ত তথ্য ওই ওয়েবসাইটে নথিভুক্ত করলে কার্ড থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কেটে নেওয়া হয়। সরকারি হাসপাতালেও প্রায় একই নিয়ম।
বর্তমানে রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলিতে প্রায় বিনামূল্যেই চিকিৎসা মেলে। তবে, কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ কিংবা অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম প্রয়োজন হলে রোগীর স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ‘ব্লক’ করে নির্দিষ্ট সংস্থা বা দোকান থেকে সেই সামগ্রী কিনে নেয় হাসপাতাল। জাহানারার ক্ষেত্রে হাসপাতালের দেওয়া ‘রিক্যুইজ়িশন’ (লিখিত আবেদন) নিয়ে সেখানকার ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে গিয়েছিলেন মৈনুদ্দিন। ওই সামগ্রী এই মুহূর্তে নেই বলে সে দিনই (২১ জুলাই) ফর্মে জানিয়ে দিয়েছেন দোকান কর্তৃপক্ষ। এখন প্রায় প্রতিদিন মৈনুদ্দিন রিক্যুইজ়িশন নিয়ে দোকানে যান আর ফিরে আসেন।
মৈনুদ্দিন জানান, তিনি একটি প্যাথলজি কেন্দ্রে কাজ করতেন। কানে কম শোনায় সম্প্রতি কাজ হারিয়েছেন। স্ত্রী বিড়ি বেঁধে কোনওক্রমে সংসার চালান। তিনি বলেন, ‘‘এই অবস্থায়, এতদিন ধরে একমাত্র রোজগেরে হাসপাতালে পড়ে থাকলে কী ভাবে চলবে!" পাশাপাশি, সময়ে অস্ত্রোপচার না হলে অন্য সমস্যা হওয়ার ভয়ও পাচ্ছেন তিনি।
হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক পার্থসারথি দাস বলেন, "সরকারের কাছে অনেক টাকা পাওনা। তাই সংস্থার কথামতো প্রায় দেড় মাস ধরে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে সামগ্রী বিক্রি বন্ধ রেখেছি। আমরা অপারগ।’’ কিন্তু বিষয়টি রোগীর পরিবারকে জানানো হচ্ছে না কেন? পার্থসারথির জবাব, ‘‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তো জানেন। ওঁরাই বা আমাদের কাছে পাঠাচ্ছেন কেন?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy