প্রায় আড়াই বছর ধরে এ রাজ্যে ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ বন্ধ। ফলে, দেখভালের অভাবে ওই প্রকল্পে হুগলিতে যে ক’টি ইকো-পার্ক এবং জীব বৈচিত্র পার্ক হয়েছিল, তার অধিকাংশই সঙ্কটের মুখে। কারণ, ওই প্রকল্পেরই পার্কগুলির রক্ষণাবেক্ষণের কথা ছিল। তহবিলের অভাবের কথা জানিয়ে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতগুলি পার্ক রক্ষার দায় নিতে চাইছে না।
২০২০ সালের শেষ দিকে তিনটি ইকো পার্কের কাজ শুরু হয়েছিল গোঘাট ২ ব্লকে। তার মধ্যে কামারপুকুর পঞ্চায়েতের দ্বারিয়াপুর ইকো ট্যুরিজ়ম পার্কটি খালি সুসজ্জিত আছে। কামারপুকুর মঠে আসা দর্শনার্থীরা পার্কের কটেজগুলিতে (মোট ৮টি) ভাড়ার বিনিময়ে রাত কাটান। রক্ষণাবেক্ষণে থাকা চার কর্মীর মাসিক পারিশ্রমিক মেটানোর পরেও পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিলে মাসে গড়ে ১০ হাজার টাকা জমা পড়ে বলে জানান প্রধান রাজদীপ দে।
তবে, ওই ইকো পার্কের অবস্থা ব্যতিক্রমীই বলে মানছেন পঞ্চায়েতের অনেকে। একই ব্লকের বদনগঞ্জ-ফলুই ১ পঞ্চায়েত এলাকার কর্ণপুরে অর্জুনগেড়িয়ায় ২.০২ একরে যে ইকো-পার্কটি গড়া হয়েছিল, তা এখন বিপন্ন। তদারকির কোনও লোকই নেই। খড়ের ছাউনি দেওয়া পাঁচটি কটেজের মধ্যে দু’টি ভেঙে গিয়েছে। বাকি তিনটিরও ভগ্নদশা। পুরো চত্বর যে বেড়া দিয়ে ঘেরা ছিল, তা উধাও। জলের দু’টি ট্যাঙ্ক চুরি হয়ে গিয়েছে। ভিতরের পুকুর সংস্কার করে মাছ চাষ হয়েছিল। মাছও চুরি হয়ে গিয়েছে। পঞ্চায়েতের উপপ্রধান প্রসেনজিৎ ঘোষাল বলেন, “১০০ দিন কাজ প্রকল্পে কাজগুলি হয়েছিল। প্রকল্পটি বন্ধ হওয়াতেই এই দশা। আমাদের নিজস্ব তহবিলও মজবুত নয়। আমরা পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের তহবিলে ইকো পার্কটিকে সাজানো যায় কি না, তা নিয়ে ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলছি।”
কুমারগঞ্জ পঞ্চায়েতের কুমারগঞ্জ গ্রাম সংলগ্ন দ্বারকেশ্বর নদের গায়ে প্রায় ২ হেক্টর জমিতে সাজানো ইকো-পার্কটিরও এখন সবই অগোছালো। গাছের ফল চুরি হচ্ছে। পার্কটি সমাজবিরোধীদের আড্ডাস্থল হয়ে উঠেছে বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ। ১১টি কটেজের মধ্যে মাত্র চারটি অক্ষত আছে। ব্লক প্রশাসন অবশ্য পার্কটি নতুন করে সাজানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে।
যুগ্ম বিডিও কুন্তলকুমার মণ্ডল বলেন, “আপাতত মূল রাস্তা থেকে ইকো পার্ক পৌঁছতে পথশ্রী প্রকল্পে একটি রাস্তা করা হয়েছে। তদারকির কাজ ১০০ দিনের প্রকল্প থেকেই হত। এখন রক্ষণাবেক্ষণ কঠিন হয়ে উঠছে। বিকল্প পথ খুঁজছি।”
জেলার মাত্র দু’টি জীব বৈচিত্র পার্কের একটি আরামবাগের বাতানল পঞ্চায়েতের নারায়ণপুরে। এখানকার প্রজাপতি পার্কটি ঠিক থাকলেও তদারকির অভাবে বেশ কিছু আম গাছ শুকিয়ে গিয়েছে। কলা, লেবু ইত্যাদি চুরি হচ্ছে। বিডিও সুব্রত মল্লিক বলেন, “ওই পার্ককে যথাযথ রাখতে এবং আরও উন্নত করতে জেলা প্রশাসনের তহবিলে কিছু কাজ করার পরিকল্পনা করেছি। যাতে সেখান থেকেই ওই পার্ক তদারকির আয়টা উঠে আসে। নইলে ব্লক প্রশাসন থেকে ক্রমাগত তহবিল দিয়ে পার্ক বাঁচানো সম্ভব হবে না।”
কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিটি পঞ্চায়েতে ইকো পার্ক ও জীববৈচিত্র ব্যবস্থাপনা গড়ার নির্দেশ দিয়েছিল ২০১৯ সালের শেষ দিকে। জীববৈচিত্র পর্ষদের সুপারিশে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের সেই নির্দেশে প্রতিটি পঞ্চায়েতে এ সংক্রান্ত ৭ জনের কমিটিও গঠন হয়। কিন্তু হুগলির ১৮টি ব্লকের ২০৭টি পঞ্চায়েতের মধ্যে এ পর্যন্ত খালি আরামবাগের বাতানল পঞ্চায়েতের নারায়ণপুরে এবং বলাগড়ের চর কৃষ্ণবাটী পঞ্চায়েতের চরকৃষ্ণবাটী গ্রামে জীববৈচিত্র পার্ক হয়েছে বলে জেলা প্রাশসন সূত্রে জানা গিয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, পঞ্চায়েতগুলিতে জমির অভাব এবং ১০০ দিনের কাজ বন্ধ হওয়ায় প্রকল্পটি গতি পাচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy