চন্দননগর কলেজ। ছবি: তাপস ঘোষ
এ ভাবেও ফিরিয়ে আনা যায়!
স্বাধীনতা সংগ্রামের অংশ হয়ে যাওয়ায় ১৯০৮ থেকে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত বন্ধ ছিল এই প্রতিষ্ঠান। পরে স্বমহিমায় ফিরলেও সময়ের ধাক্কায় ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছিল ভবনের। সংস্কারের পরে এখন সে ঝকঝকে। চন্দননগর কলেজে গড়ে ওঠা মিউজ়িয়ামে ফিরে এসেছে এ শহরের ইতিহাস। ধরা রয়েছে তিন গ্রাম নিয়ে গঠিত সদ্যোজাত চন্দননগর থেকে আজকের চন্দননগর। রাসবিহারী বসু, শ্রীঅরবিন্দ, কানাইলাল দত্ত, মাখনলাল ঘোষাল, শ্রীশচন্দ্র ঘোষ, মোতিলাল রায়-সহ বহু বিপ্লবীর প্রতি শ্রদ্ধাও নিবেদন করা হয়েছে এখানে। অগ্নিযুগের সশস্ত্র সংগ্রামের রিভলভার থেকে ফাঁসির মঞ্চ— রোমাঞ্চ জাগায়।
দীর্ঘকাল বন্ধ এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উজ্জ্বল প্রত্যাবর্তন রোমাঞ্চকর। সেই ভবন ‘পুনরুদ্ধার’ এবং তাকে শহরের সমাজ-শিল্প-সংস্কৃতি, বিপ্লব আর কলেজের ইতিহাসের মিউজিয়াম হিসাবে প্রতিষ্ঠাও চমকপ্রদ। গত ৩১ অগস্ট (১৮৬২ সালের এই দিনেই কলেজ প্রতিষ্ঠিত) চালু হয় এই মিউজ়িয়াম। শুক্রবার তা উৎসর্গ করা হল বিপ্লবীদের স্মৃতির প্রতি। সাধারণ মানুষ যাতে এই মিউজ়িয়াম দেখতে আসতে পারেন, সেই ব্যবস্থার চেষ্টা হবে বলে আশ্বাস কলেজ কর্তৃপক্ষের।
কেন এই মিউজ়িয়াম?
স্বাগত ভাষণে নিজেই এ প্রশ্নের অবতারণা করে অধ্যক্ষ দেবাশিস সরকার জানিয়ে দেন, এ তাঁদের ‘বাধ্যবাধকতা’। এই কাজ আগেও হতে পারত। এখন হল। অধ্যক্ষের গর্ব, স্বাধীনতার লড়াইয়ে জড়িয়ে ২৩ বছর বন্ধ থাকার পরেও ফিরে এসেছে, পৃথিবীতে এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দ্বিতীয় নেই। এই স্বাতন্ত্র্যের অধিকারী একমাত্র এই কলেজ। একাধিক বার এই কলেজের নাম পরিবর্তন হয়। ১৯০১ সালে নাম হয় ডুপ্লে কলেজ। ১৯৪৮ সালে চন্দননগর কলেজ নাম হয়।
প্রাচীন ভবনটি ২০১০ সালে হেরিটেজ তকমা পায়। তবে, পলেস্তারা খসে পড়ছিল। মেঝে, ছাদ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ২০২০ সালে পূর্ণাঙ্গ সংস্কার হয়। প্রদর্শশালার পাঁচটি ঘরের প্রথমটিতে লিপিবদ্ধ চন্দননগরের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। দ্বিতীয় কক্ষে বিপ্লবীদের শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। তৃতীয় ঘরে চন্দননগর থেকে হওয়া নানা বৈপ্লবিক কাজের তথ্য। চতুর্থ ঘরে এখানকার তাঁত, চরকা, নৌকা প্রভৃতি। পঞ্চম ঘরে কলেজের কথা। তদানীন্তন সহ-অধ্যক্ষ চারুচন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে ডুপ্লে কলেজ বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল।
এ দিনের অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ, চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তী, রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের সদস্য পার্থরঞ্জন দাস, জাতীয় কাউন্সিল অব সায়েন্স মিউজ়িয়ামের পরিচালক নটরাজ দাশগুপ্ত প্রমুখ। প্রদর্শশালা রূপায়ণে উল্লেখযোগ্য অবদান থাকা শিল্পীদের সংবর্ধনা দেওয়া হল। শহরের বিশিষ্টজন, কলেজের প্রাক্তনীরাও সাক্ষী রইলেন গঙ্গাপাড়ের এক সময়ের ফরাসি উপনিবেশ এই প্রাচীন শহরে নতুন এক হেরিটেজ-যাত্রার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy