অস্ত্রোপচার করে পিত্তথলির পাথর বাদ দিতে গিয়ে বৃহদান্ত্রের অংশ কেটে যায় বলে অভিযোগ। চিকিৎসকের এই ‘ভুলে’ চুঁচুড়া শহরের পাত্রপুকুরের বাসিন্দা, বছর পঁয়তাল্লিশের সঙ্গীতা রাউতের চিকিৎসায় প্রচুর টাকা খরচ হয়ে যায়। বিষয়টি জানিয়ে ওই টাকার বন্দোবস্তের আর্জিতে বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দেয় সঙ্গীতার পরিবার। তাতেই সমস্যা মিটল। নবান্নের মধ্যস্থতায় শুক্রবার রাতে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন সঙ্গীতা।
সঙ্গীতার ছেলে অনিকেত জানান, ২৫ লক্ষ টাকা বিল হয়েছিল। চিকিৎসা বিমার সাড়ে ৪ লক্ষ এবং গয়না বন্ধক দিয়ে আরও ৭ লক্ষ টাকার বেশি জোগাড় হয়নি। ফলে, মাকে ছুটি দেওয়া হচ্ছিল না। মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘নবান্নের আধিকারিকেরা হাসপাতালের সঙ্গে যোগযোগ করেন। সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সে নিখরচায় মাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। চিঠি দেওয়ার এক দিনের মধ্যেই সমস্যা মিটে যাবে, ভাবতে পারিনি!’’
শনিবার সকালে সঙ্গীতাদের বাড়িতে যান চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার। বাড়ির লোকেরা জানান, তিন মাস পরে ফের সঙ্গীতাকে ওই হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। বিধায়ক বলেন, ‘‘দ্বিতীয় পর্যায়ে চিকিৎসার আনুমানিক খরচের হিসাব দিতে বলেছি। সরকারি তহবিল থেকে ব্যবস্থা করার চেষ্টা করব।’’
শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালের কর্মী সঙ্গীতার আত্মীয়েরা জানান, গত ৩০ ডিসেম্বর চুঁচুড়ার কারবালা মোড়ে একটি নার্সিংহোমে তাঁর অস্ত্রোপচার করেন প্রবীণ শল্য চিকিৎসক প্রকাশ সামন্ত। পয়লা জানুয়ারি ছুটি হয়। দু’দিন পর থেকেই শ্বাসকষ্ট, বমি শুরু হয়। প্রকাশের চেম্বারে গেলে তিনি ‘স্বাভাবিক ব্যাপার’ বলে ওষুধ দিয়ে ছেড়ে দেন। সমস্যা না মেটায় তাঁর পরামর্শে ৮ জানুয়ারি তাঁর তত্ত্বাবধানেই সঙ্গীতাকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অভিযোগ, অস্ত্রোপচারের জন্য পেটের কাটা অংশ দিয়ে মল বেরিয়ে আসতে থাকে। ২৭ জানুয়ারি কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই অস্ত্রোপচারের ‘ভুল’ ধরা পড়ে।
মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠির প্রতিলিপি হুগলি জেলা স্বাস্থ্য দফতরে দেন অনিকেত। জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। চিকিৎসক প্রকাশ সামন্তের দাবি, তিনি সফল অস্ত্রোপচারই করেছিলেন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)