বিশ্বাসবাড়ি নিজস্ব চিত্র।
নেহাতই এক সাদামাটা গ্রাম হুগলির সোমড়া বাজারের সুখড়িয়া। কিন্তু আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে মৃণাল সেনের স্মৃতি। ‘আকালের সন্ধানে’ ছবিটি তৈরি্ করতে গোটা ইউনিটকে নিয়ে এই গ্রামে এসেছিলেন বরেণ্য চিত্র পরিচালক। বেশ কিছুদিন ছিলেন এখানে। শনিবার ছিল তাঁর শততম জন্মবার্ষিকী। বিশেষ দিনটিতে তাঁর স্মৃতিচারণায় ডুব দিল ওই গ্রামের বিশ্বাসবাড়ি বা ‘রাধাকুঞ্জ’। তাঁর জন্ম-শতবর্ষের সূচনায় দাবি উঠল, ওই বাড়ির সামনে স্মৃতিফলক বসানোর। স্থানীয় ইতিহাস নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন, তাঁরা জানান, নানা কারণে বাড়িটি উল্লেখযোগ্য। ফলে, জীর্ণ হয়ে পড়া বাড়িটি সংস্কার হোক, চাইছেন তাঁরা।
বিশ্বাসবাড়িতেই মৃণালবাবু-সহ ছবির কুশীলবরা থাকতেন। সিনেমার সিংহভাগ জুড়ে এই বাড়ির ছবি রয়েছে। ঢোকার মুখে রাধাকুঞ্জের বিরাট থামওয়ালা গেট ছিল। গেটের মুখে ছাদ দেওয়া চাতাল। ভিতরে সোজাসুজি দুর্গাদালান। তিন দিক ঘেরা বিরাট দোতলা বাড়ি। নীচের ঘরগুলি এক সময় জমিদারি খাজনা আদায় ও অন্য কাজে ব্যবহৃত হত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়িটি জীর্ণ হয়ে পড়েছে। পলেস্তারা খসে পড়েছে। দরজা-জানলায় বয়সের ছাপ। থাম, ছাদ— সবই ভগ্নপ্রায়। যে ঘরগুলিতে শুটিং হয়েছে, মৃণাল সেনরা থেকেছেন, তার অবস্থাও তথৈবচ।
বিশ্বাসবাড়িতে এ দিন প্রয়াত পরিচালকের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয় বলাগড় বিজয়কৃষ্ণ মহাবিদ্যালয়ের জাতীয় সেবা প্রকল্প (ইউনিট-২) এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘সোমড়া প্রবাহ’র যৌথ উদ্যোগে। উপস্থিত ছিলেন চিত্র পরিচালক শীলা দত্ত, কলেজের অধ্যক্ষ প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়, নাট্যকর্মী বিদ্যুৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং স্থানীয়েরা। ‘আকালের সন্ধান’ ছবিতে অভিনয় করেছেন এই গ্রামেরই প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়। তিনিও ছিলেন। সিনেমাটির শুরুতে গান রয়েছে— ‘হেই সামালো ধান হো / কাস্তেটা দাও শান হো...’। সেই গান গাওয়া হয়।
বিজয়কৃষ্ণ কলেজের বাংলার শিক্ষক তথা জাতীয় সেবা প্রকল্পের প্রোগ্রাম অফিসার পার্থ চট্টোপাধ্যায় আঞ্চলিক ইতিহাসের চর্চা করেন। তিনিই অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা। তিনি জানান, ছবিতে আকালের সময়ের একটি গ্রামের কথা তুলে ধরা হয়েছিল। সুখড়িয়া তথা সোমড়ার বিভিন্ন জায়গায়, গঙ্গার পাড়ে হয়েছিল শুটিং। তার মধ্যে ছিল দোতলা বিশ্বাসবাড়ির অন্দর, বিশাল থামযুক্ত দালান, মন্দির। মৃণালবাবু তিন মাস এই বাড়িতে থেকেছেন ছবিটি তৈরির প্রয়োজনে। পরেও একাধিক বার এসেছেন। পার্থবাবু জানান, বাড়িটি সংস্কার ও তার সামনে ইতিহাস লেখা একটি ফলক বসানোর জন্য এ দিন বলাগড় ব্লক প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
১৯৪৩ এর দুর্ভিক্ষ নিয়ে সিনেমার ‘হাতুই’ গ্রাম আদতে সুখড়িয়াই। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি সিনেমা তৈরির জন্য সিনেমা-নির্মাতাদের একটি ইউনিট এসেছে গ্রামে। তাঁরা সিনেমা বানাবেন আকাল নিয়ে। যেখানে তাঁরা তুলে আনছেন সেই সময়ে মানুষের জীবন, ব্যথা-যন্ত্রণা, স্বার্থপরতার কথাকে। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৮০ সালে। অভিনয় করেছিলেন ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়, স্মিতা পাটিল, দীপঙ্কর দে, জোছন দস্তিদার প্রমুখ। পরিচালকের স্ত্রী গীতা সেনও অভিনয় করেছেন এই ছবিতে। ডি কে ফিল্মসের এই ছবির সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন সলিল চৌধুরী।
কেমন আছে সিনেমার সেই ‘হাতুই’ গ্রাম? কেমন আছে বিশ্বাসবাড়ি? সেই ফিরে দেখাই যেন এ দিন চলল দিনভর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy