হাওড়ার বেলগাছিয়া ভাগাড়ে ধস নামার পরে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে এলাকার নিকাশি সমস্যার সমাধান করতে মাইক্রো টানেলিং করা হবে বলে জানিয়েছিল পুরসভা। কিন্তু ধস নামার পরে প্রায় তিন সপ্তাহ কেটে গেলেও এখনও সেই কাজ শুরুই করা যায়নি। ফলে, গোটা এলাকা জুড়ে জমে থাকা দুর্গন্ধে ভরা নোংরা জলের হাত থেকে রেহাই পাননি বাসিন্দারা। হাওড়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, উঁচু-নিচু জমি সমান করার (লেভেলিং) সমস্যা দেখা দেওয়ায় কেএমডিএ-র ইঞ্জিনিয়ারেরা মাইক্রো টানেলিংয়ের কাজ শুরু করেও আটকে গিয়েছেন। পুর কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, পাইপলাইন পাতার কাজ শেষ। শীঘ্রই সমস্যা মিটে যাবে। যদিও কেএমডিএ সূত্রেই জানা যাচ্ছে, অন্তত এক সপ্তাহের আগে এই সমস্যা মেটার আশা নিতান্তই ক্ষীণ।
গত ২১ মার্চ বেলগাছিয়া ভাগাড়ে ভয়াবহ ধসের জেরে এলাকার একাধিক বাড়ি, বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ার পাশাপাশি উত্তর হাওড়ার ৭, ৮ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মূল নিকাশি নালাটি পুরোপুরি ভেঙে যায়। বাসিন্দাদের ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে পদ্মপুকুর জল প্রকল্পের পাইপলাইনে পানীয় জল সরবরাহ শুরু হতেই তার সঙ্গে নর্দমার জল মিশে প্লাবিত হয় লিলুয়ার বি রোড, সি রোড-সহ বামনগাছির বিস্তীর্ণ অংশ।
জমা জল সাফাইয়ের দাবিতে গত সপ্তাহের মঙ্গলবার ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা দীর্ঘক্ষণ পথ অবরোধ করেন। তাঁদের অভিযোগ, যে ভাবে মশার উপদ্রব বেড়ে গিয়েছে, তাতে ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়ার মহামারির আকার নেওয়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র। ওই দিন বিক্ষোভকারীদের দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেওয়ার পরেও কাজ শুরু হয়নি। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুরসভা শুধুই মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছে। ফলে তাদের সদিচ্ছা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। মঙ্গলবারও বামনগাছির সি রোডে গিয়ে দেখা যায়, পাঁক-জলে ভরে রয়েছে পথঘাট। সেই জলে ভাসছে মল। বাসিন্দারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, আজ, বুধবারের মধ্যে সমস্যা না মিটলে তাঁরা ফের রাস্তায় নামবেন। এক বাসিন্দা রুনু নিয়োগী বলেন, ‘‘দু’দিন ধরে পাইপ ফেলে কেএমডিএ স্রেফ বসে আছে।’’
এ বিষয়ে হাওড়া পুরসভার সাফাই দফতরের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য গৌতম চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা বি রোড ও সি রোডে সিড পাইলিং করে নর্দমা কাটার কাজ করছি। বি রোডের জল নেমেছে। সি রোডে কিছুটা জল জমে আছে। আমরা মানুষকে বলেছি একটু ধৈর্য ধরতে।’’
কিন্তু প্রতিশ্রতি দেওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ পরেও জমা জল যে নামানো গেল না, সেই দায় কার? হাওড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কেএমডিএ মাইক্রো টানেলিংয়ের কাজ করছে। ইঞ্জিনিয়ারেরা জানিয়েছেন, কিছুটা কাজ হওয়ার পরে জমির লেভেলিংয়ের সমস্যার কারণে তা থমকে গিয়েছে। তবে শীঘ্রই সমস্যা মিটে যাবে বলে তাঁরা আশাবাদী।’’
যদিও কেএমডিএ-র এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘ওই জায়গায় ভূমি স্তরে সমস্যা রয়েছে। স্বয়ংক্রিয় মেশিন দিয়ে টানেল কাটতে সমস্যা হচ্ছে। পুর ইঞ্জিনিয়ারেরা ব্যাপারটা দেখেছেন। এখনই সমস্যা মিটছে না। কিছু দিন সময় লাগবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)