Advertisement
E-Paper

কলকাতার মণ্ডপ থেকে মুখ ফেরাচ্ছে চন্দননগরের বহু পুজো

চন্দননগরের অনেক পুজো উদ্যোক্তাই জানাচ্ছেন, বর্তমানে কলকাতার বহু নামী পুজোর বাজেট কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। সেই সব মণ্ডপ চন্দননগরে আনতে কমপক্ষে ২০-২৫ লক্ষ টাকার প্রয়োজন।

—ফাইল চিত্র।

সুদীপ দাস

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:৫০
Share
Save

দুর্গাপুজোয় চন্দননগরের আলো জ্বলবে কলকাতায়, আর কলকাতার মণ্ডপ উঠে আসবে চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোয়। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত এই ধারাই চলেছে বহু ক্ষেত্রে। সময় পাল্টাচ্ছে, বদল হচ্ছে ধারাতেও।

দরে না পোষানোয় আলোর শহরের অনেক শিল্পীই আর পুজোয় কলকাতাকে সাজাতে সে ভাবে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন। কারণ, কলকাতায় পুজোর দিনের সংখ্যা বাড়লেও তাঁদের আলোর দর সেই অনুপাতে মিলছে না বলে তাঁদের দাবি। তা ছাড়া, কলকাতায় এলইডি-র সাজ আসছে অন্য জায়গা থেকেও। একই ভাবে বাজেট ছাপিয়ে যাওয়ার কারণে কলকাতার থিম কিংবা মণ্ডপ থেকে মুখ ফেরাচ্ছে চন্দননগরের বহু জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটিই।

চন্দননগরের অনেক পুজো উদ্যোক্তাই জানাচ্ছেন, বর্তমানে কলকাতার বহু নামী পুজোর বাজেট কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। সেই সব মণ্ডপ চন্দননগরে আনতে কমপক্ষে ২০-২৫ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। অথচ, এ শহরে বড় বাজেটের পুজো এখন সর্বোচ্চ ৩৫-৪০ লক্ষ টাকা ছোঁয়। যার অর্ধেক বা তার কিছুটা বেশি ব্যয় হয় মণ্ডপে। কলকাতার মণ্ডপ আনতে গেলে চার দিনের পুজো, আলো, শোভাযাত্রা-সহ আনুষঙ্গিক খরচ চালানো মুশকিল। আগে তফাত এতটা থাকত না।

চন্দননগর বড়বাজারে গত বারও কলকাতার মণ্ডপ আনা হয়েছিল। এ বার মেদিনীপুরের এক নবীন শিল্পীর হাতে তৈরি হচ্ছে নতুন থিম। কলকাতা থেকে থিম তুলে আনার খরচ ঢের বেশি হচ্ছে, মানছেন পুজো কমিটির সম্পাদক প্রণব শীল। তিনি বলেন, "এ বার একেবারে নতুন ভাবনা। আশা করছি কলকাতার থিমের থেকে কোনও অংশে কম যাবে না।’’

কলুপুকুর ধার পুজো কমিটির সম্পাদক সুদীপ্ত ঘোষ জানান, ২০১৯ সালে শেষবার কলকাতা থেকে তাঁরা থিম তুলে এনেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘কলকাতা থেকে মণ্ডপ বা থিম আনতে অনেক হ্যাপা। এখন অন্য জায়গার থিম আনলেও কলকাতায় ঠিক মন চায় না।’’

মানকুন্ডুর নিয়োগীবাগান সর্বজনীনের পুজো এ বার ৩৫তম বর্ষের। পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাপস দাস জানান, ২০১৯ সালের পর আর কলকাতার মণ্ডপ তাঁরা আনেননি। এ বার থাইল্যান্ডের একটি মন্দিরের আদলে ৬০ ফুট উঁচু মণ্ডপ হচ্ছে সম্পূর্ণ অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে। দুর্গাপুজোর আগেই কাজ শুরু হয়েছে।

নতুনপাড়াতেও এ বার নতুন থিম। কমিটির সভাপতি জয়দীপ ভট্টাচার্য জানান, অনেক দিন আগেই তাঁরা কলকাতার পুজোর মণ্ডপ আনা ছেড়ে দিয়েছেন। কারণ, সেই দর। উত্তরাঞ্চল সর্বজনীনে অবশ্য এ বার কলকাতার কাশী বোস লেনে হওয়া শিশুকন্যা পাচারের উপরে তৈরি থিম দেখা যাবে। কমিটির সভাপতি সূর্যকান্ত দাস বলেন, ‘‘ডেকরেটরের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনিই ওই থিম করে দেবেন বলায় আমরা রাজি হয়েছি। না হলে অন্য কিছু ভাবতে হত।’’

পুজো উদ্যোক্তারা জানান, কলকাতার পুজো কমিটিগুলির বেশিরভাগই মণ্ডপের কাঠামো কিংবা থিমের যাবতীয় উপকরণ নিজেরাই কিনে দেয়। কাঠামো বাঁধেন ডেকরেটর। সাজিয়ে তোলেন শিল্পী। স্বাভাবিক ভাবেই কলকাতার থিমকে চন্দননগরে তুলে আনতে গেলে পুজো কমিটি থেকে শুরু করে ডেকরেটর, যিনি থিম ভেবেছেন, আলোকশিল্পী— সকলের সঙ্গেই আলাদা করে বায়না করতে হয়। যার জেরে বাজেট বাড়ে। পুজো কমিটির থেকে নেওয়া উপকরণ কিনে নিতে হয়। ফলে, পুজো শেষে সেই সব জিনিস বিক্রির বিষয়টিও মাথায় রাখতে হয়। কারণ, জগদ্ধাত্রী পুজোর পর সে ভাবে বড় পুজো না থাকায় পরের বারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।

কয়েক বছরের ব্যবধানে কলকাতার বিভিন্ন পুজোর বাজেট যে হারে বেড়েছে, সে হারে চন্দননগরে বাড়েনি বলে জানিয়েছেন এখানকার অনেক পুজো উদ্যোক্তা। চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির সম্পাদক শুভজিৎ সাউ বলেন, ‘‘১৭০টির বেশি পুজো কেন্দ্রীয় কমিটির অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে ১০টির মতো পুজো কমিটি কলকাতা থেকে হয়ে যাওয়া থিম তুলে আনে। সংখ্যায় যা নগণ্য। বাকি সবই প্রায় নতুন। আলোর পাশাপাশি চন্দননগর নতুন থিমেরও জন্ম দিচ্ছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Chandannagar Durga Puja 2023 Kolkata

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}