Advertisement
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Santragachi Jheel

সংস্কারে নেই নজর, পানা ভর্তি সাঁতরাগাছি ঝিল থেকে মুখ ফিরিয়েছে পরিযায়ী পাখিরা

মৃত্যুঘণ্টা বেজে গিয়েছে পরিযায়ী পাখিদের ঠিকানা এই জলাশয়ের। ফলে মুখ ফিরিয়েছে তারা। তাই ডিসেম্বরের মাঝামাঝি এসেও এ বছরে ওই ঝিলে আসা পরিযায়ী পাখির সংখ্যা হাতে গোনা।

পরিষ্কার না করায় গোটা সাঁতরাগাছি ঝিল ভরে গিয়েছে কচুরিপানায়।

পরিষ্কার না করায় গোটা সাঁতরাগাছি ঝিল ভরে গিয়েছে কচুরিপানায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

দেবাশিস দাশ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:২২
Share: Save:

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জমিতেই রয়েছে আস্ত ঝিল। পরিযায়ী পাখিদের শীতের আস্তানা বলে পরিচিত সেই সাঁতরাগাছি ঝিল বাঁচাতে কয়েক বছর আগে এগিয়ে এসেছিল রাজ্য পরিবেশ দফতর, হাওড়া পুরসভা, হাওড়া সিটি পুলিশ, পরিবেশকর্মী-সহ একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। যদিও অভিযোগ, তাতে কাজ কিছুই হয়নি। আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও ঝিলের ধার থেকে সরানো যায়নি দখলদারদের। ঝিলের চার পাশে নর্দমার মালাও (গারল্যান্ড অব সুয়ারেজ) তৈরি হয়নি। আশপাশের এলাকা থেকে হাওড়া পুরসভার নিকাশি নালার আবর্জনা ওই ঝিলে এসে মিশছে অবাধে। তৈরি হয়নি নিকাশি পরিশোধন প্লান্টও। শুধু তা-ই নয়, চলতি বছরে গোটা ঝিল কচুরিপানা ও আর্বজনায় ভরে গেলেও কে তা পরিষ্কার করবে, তাই নিয়ে চলেছে চাপান-উতোর। এর জেরে কার্যত মৃত্যুঘণ্টা বেজে গিয়েছে পরিযায়ী পাখিদের ঠিকানা এই জলাশয়ের। ফলে মুখ ফিরিয়েছে তারা। তাই ডিসেম্বরের মাঝামাঝি এসেও এ বছরে ওই ঝিলে আসা পরিযায়ী পাখির সংখ্যা হাতে গোনা।

বস্তুত, আলিপুর চিড়িয়াখানা ও বটানিক্যাল গার্ডেন থেকে পরিযায়ী পাখিরা মুখ ফিরিয়ে নিলেও সাঁতরাগাছি ঝিলে গত কয়েক বছরেও প্রতি শীতে এসেছে প্রচুর অতিথি। অথচ,
ঝিলের অব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। এই ঝিল বাঁচাতে ২০১৬ সালে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা করেছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশ ছিল, হাওড়া পুরসভার সমস্ত নিকাশি নালার সঙ্গে ঝিলের সংযোগ বন্ধ করতে হবে। ঝিলকে দূষণমুক্ত করতে নিকাশি পরিশোধন প্লান্ট এবং নর্দমার মালা তৈরির নির্দেশও দিয়েছিল আদালত। কিন্তু সেই নির্দেশ গত সাত বছরেও কার্যকর করা হয়নি। এমনকি, রাজ্য পরিবেশ দফতরের জীববৈচিত্র বোর্ড, বন দফতর, পরিবেশ দফতর, হাওড়া পুরসভা, পরিবেশকর্মী এবং কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে নিয়ে সাত জনের যে কমিটি গড়া হয়েছিল, তারাও সর্ম্পূণ নিষ্ক্রিয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘পরিকল্পিত ভাবে সাঁতরাগাছি ঝিল থেকে পাখি তাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে পুর প্রশাসন ও রেল। পুরসভার সমস্ত নর্দমার আর্বজনা ওই ঝিলে পড়ছে। তারা ওই ঝিল সাফাইয়ের দায়িত্ব এড়াতে পারে না।’’

যদিও ঝিল পরিষ্কারের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে হাওড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওই ঝিলের জায়গা দক্ষিণ-পূর্ব রেলের। আমরা ঝিলের আশপাশ পরিষ্কার করছি। কিন্তু ঝিলের ভিতরে কচুরিপানা তোলার কাজ রেলের। অন্যের জায়গা আমরা পরিষ্কার করব কেন?’’ দক্ষিণ-পূর্ব রেলও অবশ্য ঝিলের সংস্কার সংক্রান্ত প্রশ্ন সাবধানে এড়িয়ে গিয়েছে। এ বিষয়ে সংস্থার মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক আদিত্য চৌধুরী বলেন, ‘‘সমস্ত তথ্য জোগাড় করার পরেই এ নিয়ে বলা যাবে।’’

প্রশ্ন হল, সাঁতরাগাছি ঝিলের সংস্কার নিয়ে সকলেই দায়িত্ব এড়ালে কি রাজ্যের অন্যতম এই পাখিরালয় ক্রমশ ইতিহাস হয়ে যাবে? না কি, আদালতের নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য বিবাদ ভুলে এগিয়ে আসবে সব পক্ষ? উত্তর মিলবে আগামী দিনে।

অন্য বিষয়গুলি:

Santragachi Jheel migrant birds
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy