Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
WB Panchayat Election 2023

প্রার্থিপদ বিক্রির অভিযোগ মনোরঞ্জনের, চাইছেন তদন্ত

নিয়োগ দুর্নীতিতে বলাগড়ের দুই যুবনেতা (এখন তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত) কুন্তল ঘোষ এবং শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ায় এমনিতেই এই ব্লকে তৃণমূল নেতৃত্ব অস্বস্তিতে ছিলেন।

বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী।

বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। — ফাইল চিত্র।

প্রকাশ পাল , সুশান্ত সরকার 
বলাগড় শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২৩ ০৯:৩৫
Share: Save:

গত দু’বছরে দলের ব্লক স্তরের নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে তাঁর ক্ষোভ বারবার সামনে এসেছে। এ বার পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন প্রত্যাহার পর্ব মিটতেই টাকা নিয়ে দলের টিকিট বণ্টনের অভিযোগ তুলে সিআইডি তদন্তের দাবি জানালেন বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। তাঁর নিশানায় দলের হুগলি-শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরিন্দম গুঁইন-সহ চার জন এবং তৃণমূলের পরামর্শদাতা সংস্থা আইপ্যাক-ও রয়েছে। এতেই না-থেমে প্রতিবাদ জানাতে মনোরঞ্জন বুধবার সকালে ফেসবুকে ‘ব্যক্তিগত’ কারণে দলের দুই পদ (রাজ্য সাধারণ সম্পাদক এবং হুগলি জেলা পঞ্চায়েত নির্বাচন কমিটির সদস্য) থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন। ইচ্ছে থাকলেও এই মুহূর্তে বিধায়ক পদ ছাড়তে না-পারার কথাও জানিয়েছেন।

বিধায়কের দাবি, ‘‘বলাগড় ব্লকে প্রচুর বাড়তি টিকিট বিলি হয়েছে। সিআইডি তদন্ত হলেই বেরোবে কারা টাকা তুলেছেন এবং সেই টাকা কাদের পকেটে গিয়েছে।’’ একইসঙ্গে তিনি অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁর কোনও ক্ষোভ নেই। কিন্তু, দলের নেতাদের একাংশের কীর্তিকলাপের লিখিত অভিযোগ করলেও তাঁদের কাছে পৌঁছয় না।

অভিযোগ মানেননি দলের হুগলি-শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরিন্দম। তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘উনি (বিধায়ক) ভুল বলছেন। টাকাপয়সা দিয়ে টিকিট বণ্টন হয়নি। সিআইডি তদন্ত হলে জবাব আমরাই দেব। পদ ছাড়ার কথা বিধায়ক দলকে লিখিত ভাবে জানাননি। জানালে দল সিদ্ধান্ত নেবে।’’

নিয়োগ দুর্নীতিতে বলাগড়ের দুই যুবনেতা (এখন তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত) কুন্তল ঘোষ এবং শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ায় এমনিতেই এই ব্লকে তৃণমূল নেতৃত্ব অস্বস্তিতে ছিলেন। মনোরঞ্জনের ফেসবুক পোস্টে সেই অস্বস্তি আরও বাড়ল।

মাস কয়েক আগে চাকরি দেওয়ার নামে এক ব্যক্তির থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে দলের ব্লক সভাপতি নবীন গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। তাঁকে দল থেকে সরানোর দাবি তোলেন বিধায়ক। দল নবীনেই ভরসা রাখে। ক্ষুণ্ণ মনোরঞ্জন জানিয়ে দেন, পঞ্চায়েত ভোটে প্রয়োজনে ‘একলা’ চলবেন। অভিষেকের ‘নবজোয়ার’ কর্মসূচির অধিবেশন বলাগড়ে হলেও বিধায়ক যাননি। অভিষেককে স্বাগতজানান রাস্তায়।

এত দিন তাঁর মুখে ‘লড়াই’য়ের কথা শোনা গিয়েছে। এ বার দলীয় পদ ছাড়ার ঘোষণায় ‘অন্য বার্তা’?

মনোরঞ্জন জানান, তাঁকে জেতাতে যে সব দলীয় কর্মী প্রাণপাত করেছিলেন, তাঁদের জন্য তিনি মানুষের কাছে যাবেন। সঙ্গে জানিয়ে দেন, সার্বিক ভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই ছাড়বেন না।

মনোরঞ্জন এ বার যাঁদের নিশানা করেছেন, তাঁদের মধ্যে নবীন ছাড়াও রয়েছেন দলীয় নেতা অসীম মাঝি, রুনা খাতুনও। কেউই অভিযোগ মানেননি। নবীন বলেন, ‘‘দল যাঁকে মনে করেছে, প্রার্থী করেছে। তদন্তে আপত্তি নেই। বিধায়ক কী করেছেন, সবাই জানেন।’’ জেলা পরিষদের বিদায়ী সদস্য এবং এ বারের প্রার্থী রুনার বক্তব্য, ‘‘টিকিট বণ্টনের দায়িত্বে আমি ছিলাম না। বিধায়কের অভিযোগ দল ভাববে। তদন্ত হোক।’’ জেলা পরিষদের প্রার্থী তথা প্রাক্তন বিধায়ক অসীমের প্রতিক্রিয়া, ‘‘নির্বাচনে বিজেপির হাত শক্ত করতে তৃণমূলের বদনাম করা হচ্ছে কি না, দল ভাবুক।’’

দলের দুই পদ ছাড়ার কথা ঘোষণা করলেও বিধায়ক পদ কেন ধরে রাখছেন?

মনোরঞ্জনের উত্তর, ‘‘আগের কর্মস্থলের পেনশন-গ্র্যাচুইটি পাচ্ছি না। বিধায়ক পদ ছাড়লে খেতে পাব না। পেনশন পেলে পেট চালানোর নিশ্চয়তা মিলবে। তখন নিশ্চিন্তে শুধু লিখে যেতে পারব। আমি লেখক।’’ এ কথা তিনি ফেসবুকেও লিখেছেন। তিনি রাজ্য সরকারের প্রাক্তন কর্মী।

শাসক দলকে বিঁধে হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই বিধায়ক প্রথম থেকেই দলের দুর্নীতি-অনিয়মের প্রতিবাদ করছেন বলে কোণঠাসা। ওদের বিধায়কেরই এই অবস্থা হলে, এর চেয়ে লজ্জার কিছু নেই।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy