টোটোয় সওয়ার মনোরঞ্জন ব্যাপারী। ফাইল চিত্র
রিকশা বা টোটো ছেড়ে এ বার গাড়িতে সওয়ার বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। আর তা নিয়েই দানা বেঁধেছে বিতর্ক। গাড়ি কি তাঁর নিজের কেনা? নেটমাধ্যমে তাঁকে এই প্রশ্নে বিদ্ধ করেছেন অনেকেই। সাম্প্রতিক এই বিতর্কের জবাব দিতে গিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়ে নেটমাধ্যমে মনোরঞ্জন লিখেছেন, ‘আমি ফতুয়া-পাজামা পরে ঘুরে বেড়াই মানে এই নয় যে, আমি পথের ভিখারী।’ তাঁর বক্তব্য, ওই গাড়ি পাঁচ বছরের জন্য ভাড়া নেওয়া হয়েছে।
এক সময় রিকশা চালাতেন। বলাগড় বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ার পর তিনি মনোনয়নপত্র জমা গিয়েছিলেন সেই রিকশা চড়েই। বলাগড় কেন্দ্রে বিপুল ব্যবধানে জয়ের পর একটি টোটোও কিনেছিলেন। সেই বাহনে চড়েই নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রের কোণে কোণে পৌঁছে যাওয়ার আশ্বাসও দিয়েছিলেন তিনি। সেই মনোরঞ্জনকে এ বার দেখা যাচ্ছে গাড়িতে। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। তার জবাবও দিয়েছেন বলাগড়ের বিধায়ক। গাড়িতে চড়ার কথা অস্বীকার করেননি মনোরঞ্জন। প্রশ্নকারীদের উদ্দেশে ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘প্রিয় বন্ধু, নীচে যে বাহনের ছবি ওটাই আমার। আমি আমার মেহনতের পয়সায় এটা কিনেছি। এটা চড়ে আমি বলাগড়ের অলিগলিতে ঘুরে বেড়াতে পারি। মেন রোডে উঠতে পারি না। আর খুব বেশি দূরে যাওয়া চলে না। তখন চার্জ শেষ হয়ে গেলে খুব সমস্যায় পড়তে হয়। যেমন মাঝে মাঝে পড়ি। তাই কলকাতায় যেতে হলে, বিভিন্ন সময়ে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে যেতে হলে আমাকে একটা গাড়ি ভাড়া করতে হয়। আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানাই আমি দলিত সাহিত্য আকাদেমির চেয়ারম্যান কি না, তাই গোটা পশ্চিমবঙ্গ আমার কর্মক্ষেত্র।’
বলাগড়ের বিধায়ক আরও লিখেছেন, ‘সেই গাড়ি দেখে অনেকের বুক ফেটে যাচ্ছে। তাদের বলছি আপনারা একটু গুগল ঘেঁটে জেনে নিন না, ওটার মালিক কে? আমি চাপলেই সেটা আমার হয়ে যায় না। আমি তো মাঝে মাঝে প্লেনেও চাপি, ট্রেনেও চাপি তার মানে কি ওগুলোর মালিক আমি?’’ তৃণমূল বিধায়কের যুক্তি, ‘ওই গাড়িখানা পাঁচ বছরের জন্য আমি ভাড়া নিয়েছি। আর একটা কথাও আপনাদের জানিয়ে রাখি, আমি আগে একটা সরকারি চাকরি করতাম। যে কোনও সরকারি চাকুরে চাকরি ছাড়ার পর পিএফ, গ্র্যাচুইটি থেকে যে টাকা পায় ওরকম গাড়ি গোটা দুয়েক কিনতে পারে। আমার ছেলেও সরকারি চাকরি করে। সেও কিনতে পারে এমন একটা গাড়ি। আর একটা কথা, আমি অ্যামাজনের লেখক। প্রথম দিন চুক্তির সময় তারা যে টাকা দিয়েছিল সেই টাকায় কলকাতায় আমার দোতলা বাড়িটা হয়েও বেশ কিছু টাকা হাতে ছিল। যা দিয়ে ছেলের বিয়ে বৌমার একটা গলার হার হয়ে গিয়েছে। কাজেই আমি ফতুয়া-পাজামা পরে ঘুরে বেড়াই এর মানে এই নয় যে আমি পথের ভিখারী। আমি দামি জামাকাপড় পরি না। বিলাসিতা করি না। এই কারণে, আমি সেই না খাওয়া দিন, সেই দরিদ্র জীবন ভুলতে চাই না।’
মনোরঞ্জন সবিস্তার ব্যাখ্যা দিলেও গাড়ি নিয়ে বিতর্ক চলছেই। বিজেপি-র হুগলি জেলা যুব মোর্চার সভাপতি সুরেশ সাউ বলছেন, ‘‘ওঁকে প্রথম যখন দেখলাম, তখন উনি রিকশা চড়ে এসেছিলেন। তার পর টোটো কিনলেন। এখন দেখা যাচ্ছে উনি কালো স্করপিও চড়ছেন। শোনা যাচ্ছে, সেই গাড়ি হুগলির এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর দেওয়া। অথচ লোকজনকে বলছেন, ওটা না কি ভাড়ার গাড়ি। কিন্তু এ নিয়ে ওঁর দলের লোকজনই প্রশ্ন তুলছেন। তৃণমূল জনগণের উন্নতি করে কি না জানি না, তবে দলটা যাঁরা করেন তাঁদের ঢের উন্নতি হয়। তার পরিচয়ই দিচ্ছেন বিধায়ক।’’
একই সুরে সিপিএমের বলাগড় দুই নম্বর এরিয়া কমিটির সম্পাদক অতনু ঘোষ বলছেন, ‘‘ওঁর দলের পক্ষে এটা খুব স্বাভাবিক বিষয়। ভাড়া নেওয়া বিষয়টা পুরোটাই গল্প। এখনও অনেক কিছুই দেখা বাকি, এটা সবে শুরু। উনি এখানে এসেছিলেন রিকশা চালিয়ে। এ বার যত সময় গড়াবে ততই বলাগড়ের মানুষের কাছে বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে যাবে। ওঁকে তেমন না চিনলেও ওঁর সঙ্গীদের বলাগড়ের মানুষ জানেন। তাঁরা যেমন তেমন উনিও হবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy