অবরোধের জেরে যানজট দ্বিতীয় সেতুতে নিজস্ব চিত্র।
বিজেপি নেত্রী নুপূর শর্মার ‘ঘৃণাভাষণ’-এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে বৃহস্পতিবার হাওড়ার ডোমজুড়ে দীর্ঘ সময় ধরে রাস্তা অবরোধ করেন একদল মানুষ। তাঁরা রাস্তার উপর টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। ফলে জাতীয় সড়কের উপর আটকে পড়ে হাজার হাজার গাড়ি। দীর্ঘ সময় ধরে অবরোধ চলার পর স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে অবরোধকারীদের হাতজোড় করে অনুরোধ করেন রাস্তা ছেড়ে দিতে।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধের পরেও অবরোধ চলছে। গোটা এলাকা জুড়ে তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে। এলাকায় রয়েছে ডোমজুড় থানার বিশাল পুলিশবাহিনী। প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী মমতা অবরোধকারীদের এ-ও বলেছেন যে, ‘‘আমি চাইলে পুলিশ দিয়ে অবরোধ উঠিয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু বিষয়টা স্পর্শকাতর বলে সেটা করছি না। আমি আপনাদের অনুরোধ করছি অবরোধ তুলে নিতে।’’
মমতা আরও বলেন, ‘‘দিল্লির ঘটনায় বাংলায় কেন প্রতিবাদ? আপনারা প্রতিবাদ করতে চাইলে থানায়-থানায় গিয়ে এফআইআর করুন। ওদের গ্রেফতারের জন্য আবেদন করুন। রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি লিখুন। প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীর কাছে আবেদন করুন। কিন্তু এ ভাবে রাস্তা অবরোধ করে রাখবেন না।’’
পাশাপাশিই, রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমকে সঙ্গে নিয়ে মমতা জানান, কোনও একজন ব্যক্তি নিজস্ব উদ্যোগে ওই অবরোধ ডেকেছেন। তিনি ‘ইমাম’ বলে নিজের পরিচিতি দিচ্ছেন। কিন্তু তিনি আদৌ ইমাম নন। মমতা জানান, তাঁর সঙ্গে নাখোদা মসজিদের ইমামের ফোনে কথা হয়েছে। তিনি একটি ভিডিয়োবার্তায় অবরোধকারীদের রাস্তা ছেড়ে দিতে বলেছেন। বস্তুত, ওই ভিডিয়োটি সাংবাদিক বৈঠকে দেখানোও হয়। যাতে বলা হচ্ছে, বিক্ষোভকারীদের ক্ষুব্ধ হওয়ার সঙ্গত কারণ রয়েছে। কিন্তু তাঁরা যেন রাস্তা ছেড়ে দিয়ে বিক্ষোভ দেখান।
মমতা এবং ফিরহাদ বলেন, ওই অবরোধের ফলে এমনকি, অ্যাম্বুল্যান্সও আটকে পড়েছে। কলকাতার বাইরে থেকে বহু মানুষ বিভিন্ন প্রয়োজনে কলকাতায় আসছিলেন। তাঁরাও দীর্ঘ সময় ধরে রাস্তায় আটকে রয়েছেন। মমতা বিক্ষোভকারীদের অনুরোধ করে বলেন, ‘‘আমি হাতজোড় করে বলছি, আপনারা বিক্ষোভ-অবরোধ তুলে নিন। আমরা তো আপনাদেরই ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকারে এসেছি। আপনারাই তো আমাদের ভোট দিয়েছেন। আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন। সংখ্যালঘুদের কোনও সমস্যা হলে সংখ্যাগুরুরা সেটা দেখে নেবেন। আবার সংখ্যাগুরুদের কোনও সমস্যা হলেও সেটা সংখ্যালঘুরা দেখে নেবেন। বাংলায় সকলে মিলেমিশে থাকেন। সেটাই বাংলার ঐতিহ্য।’’
ঘটনাচক্রে, ওই সাংবাদিক বৈঠকের আগে মমতা নিজেই নুপূর শর্মাদের গ্রেফতারি দাবি করে টুইট করেছিলেন। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হচ্ছে না দেখে তিনি নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন। সেখানে এক প্রশ্নের জবাবে মমতা বলেন, ‘‘এটা ইচ্ছে করে করা হচ্ছে বিভিন্ন অপশাসন থেকে নজর ঘোরাতে। আমি বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই লড়ছি। তীব্র বিরোধিতা করছি। কিন্তু বিজেপি এ ভাবে গোটা বিষয়টা থেকে নজর ঘুরিয়ে দিতে চাইছে।’’
অবরোধ শুরু হয় বৃহস্পতিবার বেলার দিকে। একদল মানুষ টায়ার জ্বালিয়ে হাওড়ার ডোমজুড়ের অঙ্করহাটির কাছে ১১৬ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। ওই জাতীয় সড়ক দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে সংযোগকারী অন্যতম একটি রাস্তা। ফলে গোটা এলাকার পাশাপাশিই দক্ষিণবঙ্গে হাওড়ার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতেও যানজট ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। বিকেলের পরেও অবরোধ ওঠেনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতার আবেদন এবং অনুরোধে কাজ হবে বলে প্রাশাসনিক আধিকারিকরা আশা করছেন। অবরোধকারীদের বুঝিয়ে বলার পালাও চলছে। ঘটনাচক্রে, অবরোধ চলছে প্রায় ছ’ঘণ্টা ধরে।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy