Advertisement
১৮ মে ২০২৪
Madhyamik Examination 2024

অন্ধত্ব আর অভাবকে হারিয়ে সাফল্য ৯ জন পরীক্ষার্থীর

আট ছাত্রছাত্রীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছে প্রিয়ম পাত্র। ৫৪১। গড়ে ৭৭%। প্রিয়মের বাড়ি সিঙ্গুরে। তালান্ডুর লব মুর্মুর প্রাপ্ত নম্বর ৫৩৬।

মার্কশিট হাতে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র

মার্কশিট হাতে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র Stock Photographer

প্রকাশ পাল
উত্তরপাড়া শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২৪ ০৯:০৭
Share: Save:

পরীক্ষার্থী ৮ জন। চার ছাত্রী, চার ছাত্র। সকলেরই নম্বর ৭০ শতাংশের উপরে। ৭৫ শতাংশের বেশি পেয়েছে ৫ জন।

আপাতদৃষ্টিতে এই পরিসংখ্যানে চমক বিশেষ নেই। তবে, আর পাঁচটা ছেলেমেয়ের মতো জীবন ওদের নয়। ওরা প্রত্যেকেই দৃষ্টিহীন। উত্তরপাড়ার মাখলার সরকারপোষিত লুই ব্রেল মেমোরিয়াল স্কুল থেকে এ বার তারা মাধ্যমিক দিয়েছিল। বেশির ভাগই অভাবী পরিবারের সন্তান। স্কুলের হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করেছে। অভাবের পাশাপাশি তারা হেলায় হারিয়েছে শরীরের বিশেষ অক্ষমতাকে। তাদের ফলে সংশ্লিষ্ট সকলেই উচ্ছ্বসিত।

ওই আট ছাত্রছাত্রীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছে প্রিয়ম পাত্র। ৫৪১। গড়ে ৭৭%। প্রিয়মের বাড়ি সিঙ্গুরে। তালান্ডুর লব মুর্মুর প্রাপ্ত নম্বর ৫৩৬। স্বাগতালক্ষ্মী মুখোপাধ্যায়ও একই নম্বর পেয়েছে। প্রিয়মের বাবার উপার্জন বেশি নয়। ডানকুনির মেয়ে স্বাগতালক্ষ্মীর বাবা নেই। মা গৃহ-সহায়িকার কাজ করেন। আর এক পরীক্ষার্থী বৈঁচির আল্পনা টুডুও অভাবী পরিবারের সন্তান। তারও বাবা নেই। মা দিনমজুর। পড়াশোনার পাশাপাশি ভাল সিন্থোইজ়ার বাজায় আল্পনা। সে ৫০০ নম্বর পেয়েছে। বাকি চার পরীক্ষার্থীর মধ্যে রাহুল বালি ৫৩৪ নম্বর পেয়েছে। বাঁশবেড়িয়ার মেয়ে চন্দ্রিমা ঘোষ পেয়েছে ৫৩৩। সুমিত সাহা ৫২১ এবং তার থেকে ২ নম্বর বেশি পেয়েছে পিয়ালি মুখোপাধ্যায়।

স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, ওই পড়ুয়াদের মধ্যে কেউ ১০০ শতাংশ দৃষ্টিহীন, কারও দৃষ্টিশক্তি ৮০ ভাগ নেই। প্রত্যেককেই পরীক্ষা দিতে হয়েছে ‘রাইটারের’ সাহায্যে। হুগলি জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সুবীর মুখোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার ওই স্কুলে যান। সুবীর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চালান। তার মাধ্যমে তিনি স্বাগতালক্ষ্মীর পড়ার খরচ বহনের আশ্বাস দেন। বিদ্যালয়টি জনশিক্ষা প্রসার দফতরের আওতায়। দফতরের হুগলি জেলা অধিকর্তা তথা জেলা পরিষদের শিক্ষা বিভাগের সচিব সুদীপ্তা মজুমদারও স্কুলে গিয়েছিলেন।

প্রধান শিক্ষিকা সীমা মুখোপাধ্যায় জানান, বর্তমানে ৯২ জন পড়ুয়া রয়েছে। ৮৭ জন হস্টেলে থাকে। মাধ্যমিক পর্যন্ত এখানে থেকে পড়াশোনা করার ছাড়পত্র রয়েছে। পড়ুয়াদের পড়াশোনার কথা ভেবে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরেও ছাত্রছাত্রীদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। প্রধান শিক্ষিকার কথায়, ‘‘প্রতিবারই আমাদের ছেলেমেয়েরা মাধ্যমিকে ভাল ফলই করে। এ বারেও
তাই হয়েছে।’’

সুবীর বলেন, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষ সমাজের জন্য খুবই ভাল কাজ করছেন। কেউ কেউ সাহায্য করেন। তা থেকেই মাধ্যমিকের পরে ছেলেমেয়েদের প্রয়োজনে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। অসুবিধা হয়ে সামাজিক ভাবে এই প্রতিষ্ঠানের পাশে অবশ্যই দাঁড়াব।’’

ওই আট জন ছাড়াও শারীরিক ও আর্থিক প্রতিবন্ধকতাকে হেলায় হারিয়ে নবদ্বীপ এপিসি ব্লাইন্ড স্কুলের যে পাঁচ পরীক্ষার্থী মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরল, তাদের মধ্যে রয়েছে হুগলির পিনাকী ঘোষও। তার প্রাপ্ত
নম্বর ৩২৭।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Uttarpara
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE