লেলিহান: জ্বলছে রঙের কারখানা। বুধবার, শালিমারে। ছবি: রণজিৎ নন্দী
তখন দুপুর সওয়া দুটো হবে। বাড়ির টুকটাক কাজ করছিলাম। প্রথমে কানে এল নীচ থেকে অনেকের চিৎকার। তার পরেই দেখলাম, আমার চারতলার জানলা দিয়ে কালো ধোঁয়া ঘরে ঢুকছে। ধোঁয়ায় ভরে যাচ্ছে গোটা ঘর। সেই ঝাঁঝালো, উৎকট ধোঁয়ার গন্ধে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। পরমুহূর্তে বিকট বিস্ফোরণের শব্দে পুরো চারতলা আবাসনটা যেন কেঁপে উঠল।
আতঙ্কিত হয়ে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে আসতেই দেখলাম, পাশের ফ্ল্যাটেরও সকলে বেরিয়ে এসেছেন। জানতে পারলাম, আমাদের আবাসনের গা-ঘেঁষে থাকা বার্জার পেন্টসের কারখানায় ভয়াবহ আগুন লেগেছে। আগুনের সেই লেলিহান শিখা জানলা দিয়ে দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছিল, গোটা আবাসনটাকেই আগুন গ্রাস করবে। কী করব বুঝতে না পেরে ফের ফ্ল্যাটে ঢুকে মূল্যবান জিনিসপত্র আলমারি থেকে বার করে একটা ব্যাগে ঢুকিয়ে প্রায় হুড়মুড়িয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করলাম।
তত ক্ষণে আমাদের আবাসনের সমস্ত ফ্ল্যাটের বাসিন্দারাই আতঙ্কে দিশাহারা হয়ে ছোটাছুটি শুরু করে দিয়েছেন। ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে প্রাণ বাঁচাতে সকলেই সিঁড়ি দিয়ে নামছেন তখন। এমন সময়ে দ্বিতীয় বিস্ফোরণটা হল। ফের কেঁপে উঠল গোটা আবাসন। আতঙ্কে জড়সড় হয়ে কোনও রকমে রাস্তায় নেমে সিঁড়িতে বসে হাঁপাতে থাকলাম। আমার সঙ্গে নীচের ফ্ল্যাটের বুলবুল মণ্ডল-সহ বাকিরাও যে যার মতো জিনিসপত্র নিয়ে নেমে এসেছিলেন।
বেরিয়ে দেখি, এলাকার মানুষজন এবং কারখানার কর্মীরা উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটোছুটি করছেন। দমকলের গাড়ি তখনও এসে পৌঁছয়নি। ওই রঙের কারখানার কর্মী আর পাড়ার ছেলেরাই হাত লাগিয়েছেন আগুন নেভানোর কাজে। সকলের মুখে তখন একটাই কথা, আগুন ছড়িয়ে পড়লে ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটবে। সেই কথা শুনে আমার হাত-পা ঠান্ডা হওয়ার জোগাড়।
তবে আশ্চর্য হলাম এটা দেখে যে, এত বড় আগুন লাগার বহু ক্ষণ পরে দমকল এল। তত ক্ষণে গোটা এলাকা কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে।আগুন ভয়াবহ আকার নিয়েছে। তবুও এক-এক করে দমকলের ইঞ্জিনগুলি ঢুকছে দেখে অনেকটা আশ্বস্ত হলাম।
ওই কারখানায় আগুন লাগার এটা আমার দ্বিতীয় অভিজ্ঞতা। আগেও আগুন লেগেছিল। কিন্তু তখন এতটা ভয় পাইনি। পর পর দু’বার এমন হতে দেখে মনে হচ্ছে, ফ্ল্যাট বিক্রি করে অন্য কোথাও চলে যেতে হবে। কারণ, রঙের কারখানা দাহ্য পদার্থে ঠাসা থাকবেই। আমার মনে হয়, এ জন্য যতটা সচেতন থাকার কথা কর্তৃপক্ষের, ততটা সচেতন তাঁরা নন। কারখানার অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থায় খামতি আছে। আমার প্রশ্ন, যেখানে এত কর্মী কাজ করেন এবং কারখানাটি বসতি এলাকার মধ্যে, সেখানে এই ধরনের কারখানার অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা কেন বার বার পরখ করা হবে না?
লেখক স্থানীয় বাসিন্দা
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy