দিনটা ছিল ১৯৫৭ সালের ১২ ডিসেম্বর। পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনের প্রথম ইএমইউ লোকাল ট্রেন চালু হয় হাওড়া থেকে শেওড়াফুলি স্টেশনের মধ্যে। কথা ছিল, ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু আসবেন হাওড়া থেকে সেই ট্রেনের উদ্বোধন করতে। কিন্তু হাওড়া স্টেশনে জায়গার অভাব। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করার জন্য বাছা হল শেওড়াফুলি স্টেশনকে। হাওড়া থেকে একটি ইঞ্জিনে চড়ে নেহরু, রেলমন্ত্রী জগজীবন রাম, রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়-সহ অতিথিরা শেওড়াফুলি স্টেশনে পৌঁছলেন। জওহরলালের সঙ্গে ছিল তাঁর ছোট্ট নাতি, রাজীব গান্ধী।
গোটা স্টেশন ফুল আর তোরণে সুন্দর করে সাজানো। প্রচণ্ড ভিড়। পতাকা নেড়ে বিদ্যুৎচালিত লোকাল ট্রেন পরিষেবার উদ্বোধন করলেন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। তাঁকে ঘিরেই হইচই চলছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হওয়ার পরে দেখা গেল, নেহরুর পাশে রাজীব নেই! শুরু হল খোঁজ। কিন্তু কোথায় সে!
হঠাৎ দেখা গেল, পাশের লাইনে একটি কয়লার স্টিম ইঞ্জিন-সহ রেলগাড়ি দাঁড়িয়ে। সামনে দাঁড়িয়ে ইঞ্জিনটিকে অবাক চোখে দেখছে রাজীব। তার যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন ইঞ্জিন-চালক। রাজীব কোমরে হাত দিয়ে অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে সেই সব প্রশ্নের উত্তর শুনছে।
পাওয়া গেল প্রধানমন্ত্রীর নাতিকে। সকলেই নিশ্চিন্ত। সেই প্রথম ট্রেনে চেপেই সবাই আবার যাত্রা শুরু করলেন হাওড়া স্টেশনের উদ্দেশে। ইঞ্জিন-চালক জানতেই পারলেন না, তিনি এতক্ষণ কার সঙ্গে কথা বলছিলেন। কার প্রশ্নের উত্তর মেটাচ্ছিলেন।
তথ্য: দেবাশিস মুখোপাধ্যায় (প্রাবন্ধিক)।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)