জেলার সর্বত্রই দেখা গেল দূষণ-চিত্র। ছবি: সুব্রত জানা
কোথাও বিকেল থেকেই শুরু হল, কোথাও সন্ধ্যায়।
সবুজ বাজির তত্ব, পুলিশ-প্রশাসনের প্রচার, ধরপাকড়, সর্বোপরি আদালতের নির্দেশের বাইরে বাজি পোড়ানো বন্ধে ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি কাজে এল না হুগলি এবং হাওড়ায়। যথারীতি কানে এল শব্দবাজির আওয়াজ। আতশবাজিও পুড়ল। কোথাও কম, কোথাও বেশি। ফলে, দূষণ রোখা গেল না।
হুগলির আরামবাগ শহরে বিকেল ৪টে থেকেই বিক্ষিপ্ত ভাবে বাজি ফাটানো শুরু হয়ে যায়। সময় যত গড়িয়েছে, বাজির বহর বেড়েছে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে ঘনঘন বাজি ফাটতে থাকে। রাত ৮টার পরে তা কার্যত বিরামহীন হয়ে যায়। থানার কাছেও প্রচুর বাজি ফাটে বলে অভিযোগ। শহরের বিভিন্ন কালীপুজো কমিটি অবশ্য বাজি ফাটানো নিয়ে সচেতনতা দেখিয়েছে। সদরঘাট ক্লাব-সহ বিভিন্ন পুজো কমিটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত বছর থেকেই বাজি ফাটানো বন্ধ। মানুষ তাঁদের এই সিদ্ধান্তে খুশি। তবে, সার্বিক ভাবে শব্দ-দৌরাত্ম্যে লাগাম না পরায়, সেই স্বস্তি স্থায়ী হয়নি।
দিলীপ চক্রবর্তী নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘সবুজ বাজির গ্যাঁড়াকলে গত বারের চেয়ে বেশি ফাটছে। পুলিশ নাম-কা-ওয়াস্তে দৌড়ঝাঁপ করছে।’’ এই প্রশ্নে এক পুলিশকর্মীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘সবই সবুজ বাজি। দু’টো মোবাইল ভ্যান চক্কর কাটছে। আমরা সতর্ক আছি।’’ এসডিপিও (আরামবাগ) অভিষেক মণ্ডল বলেন, ‘‘বাজি নিয়ে অভিযোগের জন্য এসডিপিও অফিস এবং থানায় কন্ট্রোল-রুম খোলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। পুলিশি নজরদারি, অভিযান চলছে।’’ পুলিশের দাবি, বুধবার খানাকুল, আরামবাগ এবং গোঘাটে ১২০ কেজি বাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
হুগলি শিল্পাঞ্চলে সন্ধে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত শব্দদানব বোতলবন্দি ছিল। তার পর থেকে পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। ছোটদের হাতে হাতে ফুলঝুরি, রংমশাল থেকে চরকি ঘুরেছে। বসন্ত-তুবড়ির ফুলকি আলোর ঝরনা তৈরি করেছে। আকাশে রং ছড়িয়ে বাজি ফেটেছে একের পর এক। বিভিন্ন জায়গা থেকে শব্দবাজি ফাটার অভিযোগ মিলেছে। পুলিশকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, অনেক ক্ষেত্রেই অলিগলি, বাড়ির ছাদ থেকে বাজি ফাটছে। পুলিশের পক্ষে সে ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।
পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, একে বাজি পোড়ানো নিয়ে বিস্তর টালবাহানা চলেছে। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট কালীপুজোর রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত দু’ঘণ্টা শুধু সবুজ বাজি পোড়ানোয় ছাড়পত্র দেয়। যদিও, সবুজ বাজির উপস্থিতি নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। নিষিদ্ধ আতশবাজি এবং শব্দবাজিই দেদার ফেটেছে বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবারেও শ্রীরামপুর, শেওড়াফুলির বিভিন্ন দোকানে প্রকাশ্যেই বাজি বিক্রি হয়েছে।
বাজি ফাটানোর অভিযোগ জানানোর জন্য পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’ হুগলিতে কন্ট্রোল-রুম খুলেছে। এই সংস্থার কাছে শব্দবাজি নিয়ে জেলার গঙ্গাপাড়ের বিভিন্ন শহর থেকে অভিযোগ এসেছে। উত্তরপাড়ার মাখলা, হিন্দমোটরের নন্দনকানন, চুঁচুড়ার মোগলটুলি, তালডাঙা, সত্যপিরতলা, ব্যান্ডেলের গ্রিন পার্ক, নিউ কলোনি, চন্দননগরের ফটকগোড়া, শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালের অদূরে, চাতরায় শ্মশানের আশপাশে শব্দবাজি
ফেটেছে বলে অভিযোগ। মাহেশেও ভালই বাজি ফেটেছে। বৈদ্যবাটী, ভদ্রেশ্বর, চাঁপদানিতেও একই পরিস্থিতি ছিল। রিষড়ার বাগখাল এলাকায় জিটি রোড লাগোয়া জায়গগায় যথেচ্ছ শব্দবাজি ফেটেছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। উত্তরপাড়ার কিছু জায়গায় বাজির দাপট অবশ্য ছিল না বললেই চলে।
গ্রামীণ হুগলির মগরা, পান্ডুয়া, বলাগড়ে বাজির দাপট কম ছিল। মগরা থানার পুলিশ এ দিন ৮ কেজি বাজি-সহ এক কারবারিকে আটক করে। পান্ডুয়া থানায় ১৫ কেজি বাজি-সহ ৩ জন আটক হয়েছেন। পোলবায় শব্দবাজি ফাটার অভিযোগ মিলেছে।
বৃহস্পতিবার রাতে গ্রামীণ হাওড়ায় শব্দবাজি ফাটলেও গত বারের থেকে কম ছিল। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাজি ফাটেনি বললেই চলে। তার পর থেকে বাজি ফাটতে শুরু করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy