শিলান্যাসের ফলক থাকলেও শুরু হয়নি কাজ। বন্ধ হাওড়ার পোদরা ঘাট। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
লঞ্চ নয়, গঙ্গায় ফের বেআইনি যন্ত্রচালিত নৌকা বা ভুটভুটি চলুক। এই ব্যবসায় যুক্ত অনেকেই এমনটা চান। মূলত তাঁদের চক্রান্তেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে শিলান্যাস করার পরেও হাওড়ার পোদরা লঞ্চঘাট তৈরির কাজ এখনও শুরু করা যায়নি বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, কলকাতার রাজাবাজার এবং নাজিরগঞ্জের প্রভাবশালীদের একটি চক্র চায়, ওই ঘাট দিয়ে সরকারি লঞ্চ নয়, আগের মতোই বেআইনি ভুটভুটি চলুক। ভুটভুটি চললে সেখান থেকে নিয়মিত ‘কাটমানি’ ঢুকবে ওই চক্রের মাথাদের পকেটে। বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, ওই চক্রের যোগসাজশেই কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জেটিঘাট তৈরির সরকারি অনুমোদন এখনও নেওয়া হয়নি।
ইতিমধ্যে এলাকার বাসিন্দাদের করা একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ হাওড়ার জেলাশাসক এবং কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষকে একসঙ্গে বসে রাস্তার দখলদারি ও লঞ্চঘাট তৈরি নিয়ে সমস্যা মেটাতে নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু তার পরেও কাজের কোনও অগ্রগতি হয়নি বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
হাওড়ার নাজিরগঞ্জে অবস্থিত পোদরা ঘাট ওই এলাকার জলপথ পরিবহণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই ঘাট দিয়ে নিত্যদিন আট-ন’হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ ওই ঘাটকে কেন্দ্র করে বহু মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতেন। ঘাটটিকে কেন্দ্র করে কাটমানি তোলার একটি চক্রও গড়ে উঠেছিল। তারাই নিয়ন্ত্রণ করত ওই ঘাট থেকে বেআইনি ভাবে চলাচল করা সমস্ত ভুটভুটি। কিন্তু এলাকার বাসিন্দারা
আদালতে মামলা করায় ২০০৫ সালে ভুটভুটির চলাচল বন্ধ করে দেন তৎকালীন জেলাশাসক। এর পরে ২০০৯ সালে জেটিঘাট তৈরির ব্যাপারে সরকারি নির্দেশিকা জারি হয়। ২০১৩ সালে তেলকল ঘাটের একটি জেটি নিয়ে এসে ফেরিঘাট তৈরির কাজ শুরু করে অন্তর্দেশীয় জলপথ পরিবহণ সংস্থা। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই জেটিঘাট নির্মাণের কাজ যখন প্রায় শেষ দিকে, তখন রাতের অন্ধকারে শাসকদলের স্থানীয় এক নেতার মদতে এক দল দুষ্কৃতী গ্যাস কাটার দিয়ে জেটি কেটে পন্টুন সরিয়ে দেয়। এমনকি, ওই জেটিতে লাগানো লোহার সমস্ত ভারী জয়েস রাতারাতি কেটে পাচার করে দেওয়া হয়। তার পরেই বন্ধ হয়ে যায় লঞ্চঘাট তৈরির কাজ। পরিবর্তে ফের শুরু হয়ে যায় বেআইনি ভুটভুটি চলাচল।
এলাকার বাসিন্দা তরুণ মণ্ডল বললেন, ‘‘যখন দেখলাম, রাজনীতির কারবারিরা ওই ঘাটে লঞ্চঘাট না করে মোটা টাকা কাটমানির জন্য ভুটভুটি চালাতে চান, তখন আমরা আর আন্দোলন করিনি। জেলা প্রশাসন ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর স্থায়ী ভাবে ভুটভুটি বন্ধ করে দেওয়ার পরে আমরা ২০২২ সালে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গণ-দরখাস্ত দিই ও কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করি। এর পরে এ বছর সাঁতরাগাছিতে তিনি ভার্চুয়ালি পোদরা লঞ্চঘাটের শিলান্যাস করেন। কিন্তু তার পরেও কোনও কাজ হয়নি।’’
শুধু তরুণ নন, এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দা যখন চাইছেন, লঞ্চঘাট তৈরি হোক, তখন তৃণমূলের স্থানীয় থানামাকুয়া গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান আবু মণ্ডল বলছেন, ‘‘না, লঞ্চঘাট নিয়ে আমাদের করণীয় কিছু নেই। নির্দেশ এলে সেই মতো ব্যবস্থা নেব। রাস্তা দখলের ব্যাপারেও আমি কিছু জানি না।’’ এ প্রসঙ্গে হাওড়া জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যখন
শিলান্যাস করেছেন, তখন পোদরা ঘাটের কাজ হবেই। ঠিক কোথায় আটকেছে, তা আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy