খানাকুলের উদনা এলাকার নদীবাঁধে চাষ করা হয়েছে ঘাস। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ ছবি: সঞ্জীব ঘোষ।
খানাকুলের হাত ধরে দশ বছর আগেই নদী বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে ভেটিভার ঘাসের কার্যকারিতার প্রমাণ মিলেছে। তারপরও প্রাকৃতিক উপায়ে বাঁধ সুরক্ষার ওই ব্যবস্থাপনার বিশেষ প্রয়োগ দেখা যায়নি। প্রশাসনেরই একটা অংশের অভিযোগ, পরিকল্পনার অভাবেই এই হাল। প্রকল্পটিকে ঘিরে ১০০ দিনের শ্রমদিবস বাড়ানো ছাড়া কাজের কাজ কিছু হয়নি।
সোমবার মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে ভেটিভার লাগানোতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে বলেছেন। গঙ্গার ভাঙন রুখতে প্রাকৃতিক ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী ওই ঘাস লাগানোর নির্দেশ দেন। মঙ্গলবার সেই সরকারি বিজ্ঞপ্তি পৌঁছে গিয়েছে সংশ্লিষ্ট বন্যাপ্রবণ জেলাগুলিতে।
হুগলি জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ রাজ্যে প্রথম, ২০১১ সালের ২২ নভেম্বর আরামবাগ মহকুমার খানাকুলের অতি ভাঙনপ্রবণ উদনার মুণ্ডেশ্বরী নদীর বাঁধে পরীক্ষামূলকভাবে ওই ঘাস পুঁতেছিলেন তৎকালীন জেলাশাসক শ্রীপ্রিয়া রঙ্গরাজন। ২০১০ সাল নাগাদ তৎকালীন মহকুমা তথ্য আধিকারিক ভাস্করজ্যোতি বেরা, তৎকালীন মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী ও জেলাশাসক শ্রীপ্রিয়া রঙ্গরাজনকে এ বিষয়ে সন্ধান দেন। জেলাশাসকের বিশেষ উদ্যোগে রাজ্যের সেচ দফতর প্রকল্পটি অনুমোদন করে। এবং উদনায় মোট ৬০০ মিটার এলাকায় ১০০ দিন প্রকল্পে সেই গাছ লাগানো হয়। এমনিতে যেখানে ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার কিউসেক জলের চাপেই বাঁধ ভেঙে যাওয়ার রেওয়াজ, সেখানে ২০১৩ সালে ডিভিসির ছাড়া ১ লাখ ৬৩ হাজার কিউসেক জলের চাপও সেখানের মাটি ধসাতে পারেনি।
সেই সাফল্যের পর ২০১২ সালে আরামবাগ ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে মলয়পুর-১ পঞ্চায়েত এলাকার বালিয়া গ্রাম সংলগ্ন মুণ্ডেশ্বরী নদী বাঁধের অতি ভাঙনপ্রবণ ৪০০ মিটার এলাকাতেও ভেটিভার ঘাস লাগানো হয়। এরপর দফায় দফায় আরামবাগ মহকুমার খানাকুলের মাড়োখানা পঞ্চায়েত এলাকার কামদেবচক এবং শশাপোতা সংলগ্ন মুণ্ডেশ্বরী নদী বাঁধে ভেটিভার চাষ হয়। ওই পঞ্চায়েত এলাকারই ঢলডাঙায় রূপনারায়ণের বাঁধ এবং মানিকবিট এলাকা-সহ বেশ কিছু জায়গায় ভেটিভার চাষ করে
সাফল্য মেলে।
ভেটিভার কী ধরনের ঘাস এবং কিভাবে বাঁধ রক্ষা করছে?
মহকুমা প্রশাসন এবং উদ্যান পালন দফতর সূত্রে জানা যায়, এই ঘাসের উচ্চতা দুই থেকে আড়াই ফুট হলেও শিকড় ১৪ ফুট গভীর কঠিন মাটিতে প্রবেশ করে মাটি আঁকড়ে থাকে। গাছ শীঘ্র নষ্ট হয় না, গরুতে মুড়িয়ে খেয়ে নিলেও ফের তা গজিয়ে উঠে। রক্ষণাবেক্ষণেরও প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া বাঁধ মেরামতির ক্ষেত্রে ইউক্যালিপটাস বল্লা পাইলিং প্রক্রিয়া সময় ও খরচ সাপেক্ষ। ভেটিভার রোপণের ক্ষেত্রে সময় খুব কম লাগবে এবং খরচও চার ভাগের একভাগ হবে।
২০১৫ সাল থেকে হুগলি জেলার পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতেই ওই ঘাসের নার্সারি করার পরিকল্পনাও হয়। সেসময় জেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়, নদীবাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে ভেটিভার ঘাসের কার্যকারিতা প্রমাণ হয়েছে। বাইরে থেকে ওই ঘাস আনাতে হত। এ বার যাতে হাতের কাছেই পাওয়া যায় সেই উদ্যেশেই নদী এলাকার পঞ্চায়েত স্তরেই নার্সারি তৈরি করার পরিকল্পনা হয়েছে। সে সময় ১০০ দিন প্রকল্পে ১০ কাটা থেকে ২০ কাঠা জায়গা নিয়ে কিছু নার্সারি হলেও এখন অধিকাংশরই অস্তিত্ব নেই।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “নদী বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে ভেটিভার ঘাস লাগানোয় সুফল মিলেছে। আরও পলকা নদী বাঁধ চিহ্নিত করে সর্বত্র লাগানো হবে। সব কটি পঞ্চায়েতই হাতের কাছে যাতে ওই ঘাস পায় তার জন্য ভেটিভার নার্সারিতেও ফের জোর দেওয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত নদী বাঁধ, বিভিন্ন খাল, পুকুর পাড় এবং রাস্তার ধার মিলিয়ে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার এলাকায় ভেটিভার লাগানো হয়েছে। আর ২০৭টা পঞ্চায়েতের মধ্যে ৭৮টা পঞ্চায়েতে ভেটিভার নার্সারি হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy