শ্রীরামপুর কফি হাউস। — নিজস্ব চিত্র।
কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের সঙ্গে বাংলার শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির নাড়ির যোগ। কফির পেয়ালায় তুফান তুলে কত আলোচনার জন্ম হয়েছে সেখানে। সেই ইন্ডিয়ান কফি হাউস এ বার ডানা মেলে কলকাতার চৌহদ্দির বাইরে এল। নতুন বছরের আগে, বুধবার শ্রীরামপুরে চালু হল কফি হাউস। তবে, এ তল্লাটের সংস্কৃতি জগতের পরিচিত কোনও মুখকে এ দিন সেখানে দেখা গেল না। যা নিয়ে প্রাচীন এই শহরে সাংস্কৃতিক চর্চার সঙ্গে যুক্ত লোকজন ‘ব্যথিত’। অনুষ্ঠান জুড়ে রইল রাজনীতির লোকেদের ভিড়।
পড়ন্ত বেলায় ঝাঁ-চকচকে কফি হাউসের উদ্বোধন করলেন পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী। সঙ্গে অভিনেতা তথা বিধায়ক চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী। উদ্বোধন হয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে প্রবেশ করেন আর এক অতিথি, কলকাতার বাসিন্দা অভিনেত্রী শ্রীময়ী চট্টরাজ।
মন্ত্রী বলেন, ‘‘কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় কফি হাউসে কম আড্ডা দিইনি। ছয়ের দশকের উত্তাল সময়ে কফি হাউস বার বার আলোচনায় এসেছে। এখানে আড্ডার এমনই সুন্দর জায়গা হল।’’
এই প্রতিষ্ঠান অবশ্য ইন্ডিয়ান কফি হাউসের সঙ্গে একটি বেসরকারি সংস্থার মেলবন্ধনে তৈরি হয়েছে। কলকাতার নানা ছবি, মান্না দে’র তৈলচিত্র নতুন কফি হাউসের দেওয়ালে ঠাঁই পেয়েছে। কফি হাউসের তরফে সন্দীপ রায় জানান, কলেজ স্ট্রিটের পুরনো ছন্দের সঙ্গে আধুনিকতা মিশিয়ে এই প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়েছে। ওখানে যে সব খাবার মেলে, এখানেও সব মিলবে। সাদা পোশাক, মাথায় পাগড়ি পরে পরিবেশন করবেন কর্মীরা। তবে, দামের কিছুটা হেরফের হবে।
সন্দীপ বলেন, ‘‘প্রতি জেলাতেই একটি করে কফি হাউস খোলার ভাবনা রয়েছে। শ্রীরামপুর থেকে শুরু হল। এই শহর শিক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের শহর। সকলের জন্য দরজা খোলা রইল।’’
কাছেই দু’শো বছর পেরিয়ে যাওয়া শ্রীরামপুর কলেজ। মাহেশের রথযাত্রা ছয় শতকের পুরনো। ডেনিশ আমলে তৈরি নানা ভবন ছড়িয়ে রয়েছে। সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় প্রতিষ্ঠিত মানুষজন রয়েছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বারে বারেই উঠে এল ঐতিহ্যের কথা। তবে, সাংস্কৃতিক জগতের কাউকে দেখা গেল কই!
শহরের প্রবীণ সাংস্কৃতিক কর্মী হারাধন রক্ষিত বলেন, ‘‘কলেজ স্ট্রিট কফি হাউস আমার কাছে উষ্ণ আবেগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে না-গিয়েও ওখানে যেতাম। শ্রীরামপুরে এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বেসরকারি সংস্থার নাম যুক্ত হলে কৌলিন্য থাকে না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতির সঙ্গে কফি হাউসের নিবিড় যোগ বহু কালের। উদ্বোধনে সংস্কৃতি জগতের লোকজনকে ব্রাত্য রাখা ব্যথা দেয়। আমি মনে করি, অভিনেতাকে দিয়ে উদ্বোধনের অর্থ ঐতিহ্যের সঙ্গে সমঝোতা করে বাণিজ্যিকীকরণের পথে এগিয়ে যাওয়া।’’ কলকাতার মতো নন-এসি নয়, শ্রীরামপুরের কফি হাউস বাতানুকুল।
কফি হাউসের সঙ্গে শিল্প-সংস্কৃতির লোকজন তথা বুদ্ধিজীবীদের মেলবন্ধন এবং আড্ডায় মশগুল হওয়ার ধারাবাহিকতার কথা শুনিয়ে বিশিষ্ট কবি রামকিশোর ভট্টাচার্যও মনে করেন, গান, সাহিত্য, কবিতা, নাটক, চিত্রশিল্প প্রভৃতি সংস্কৃতি জগতের নানা শাখার দু’-এক জন করে প্রতিষ্ঠিত মানুষকে প্রথম দিন ডাকা উচিত ছিল। সাংস্কৃতিক কর্মী সমীর সাহার বক্তব্য, ‘‘কফি হাউজের ঐতিহ্যের তকমা জুটেছে সাহিত্য-সংস্কৃতির আভিজাত্যের কারণে। এই শহরে গুণী মানুষের অভাব নেই। তাঁদের কয়েক জনকে ডাকাই যেত।’’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুরপ্রধান গিরিধারী সাহা-সহ একঝাঁক কাউন্সিলর। ঘোষকের ভূমিকায় ছিলেন স্থানীয় কাউন্সিলর তথা পুর-পারিষদ সন্তোষ সিংহ। এসেছিলেন চাঁপদানির বিধায়ক অরিন্দম গুঁইনও। রাস্তা বন্ধ করে অনুষ্ঠান হল। অনুষ্ঠানে মান্না দে’র বিখ্যাত গান, ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই...’ বাজল। তার সূত্র ধরে চিরঞ্জিৎ গাইলেন, ‘‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজও আছে শ্রীরামপুরে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy