একলাফে নৌকায় আমিরুল খোন্দকার হক। নিজস্ব চিত্র।
কয়েক দিন আগেও ছিল ঝকঝকে রাজপথ। কিন্তু দিন কয়েকের টানা বৃষ্টির জেরে খানাকুলের সেই রাজপথ এখন ‘অকূল’ দরিয়ার চেহারা নিয়েছে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগেও বিয়ের তারিখ বদলাননি খানাকুলের খোন্দকার আমিরুল হক। গাড়ির বদলে নৌকায় ভেসেই নতুন জীবন শুরু করতে রওনা দিলেন তিনি। সঙ্গী গুটিকয়েক বরযাত্রী।
খানাকুলের হীরাপুরের বাসিন্দা আমিরুলের বিয়ের ঠিক হয়েছে কিছু দিন আগে। পাত্রীর বাড়ি প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে শাবলসিংহপুরে। কিন্তু বিপত্তি গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে। টানা বর্ষণে আরামবাগ মহকুমা এমনিতেই জলমগ্ন। তার উপর শনিবার রাতে খানাকুলের ধান্যগড়ি এলাকায় রূপনারায়ণের বাঁধ ভেঙে যাওয়া যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া। তার জেরে এলাকায় জল ঢুকে রাস্তা এখন নদীর চেহারা নিয়েছে। যে রাস্তায় দিন কয়েক আগেও লোকে গাড়ি হাঁকিয়েছে, সেই রাস্তায় এখন অথৈ জল। নৌকা চলছে। আর সেই নৌকা চড়ে বিয়ে করতে রওনা দিলেন আমিরুল।
বর্ষায় হুগলির জেলার এই অংশ জলমগ্ন হওয়া নতুন কোনও ঘটনা নয়। তবে রবিবার আমিরুল যে ভাবে বিয়ে করতে রওনা দিলেন তেমন ঘটনা স্মরণে আনতে পারছেন না কেউই। তিনি বলছেন, ‘‘বিয়ে দু’মাস আগে স্থির হয়েছিল। এমন হঠাৎ করে বান আসবে ভাবিনি। ধান্যগড়িতে বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। তাই বন্দোবস্তে অনেক কাটছাঁট করতে হল। যেখানে বিয়ে করতে যাচ্ছি সেখানেও একই পরিস্থিতি। তাই নৌকা চড়েই যাচ্ছি।’’ তাঁর দাদা মহম্মদ ইবরাম বলেন, ‘‘এখানে প্রায় এক মানুষ জল। জনা দশেক যাচ্ছি। যাওয়ার কথা অনেকের ছিল।’’
আমিরুল অবশ্য নৌকা চড়ে সরাসরি পাত্রীর বাড়ি যাননি। হীরাপুর থেকে তিনি গিয়েছেন রাজহাটি পর্যন্ত। সেখানে কনেপক্ষের আলাদা নৌকায় উঠে রওনা দেন বিয়ে করতে। বিয়ে বাতিল না হলেও, এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগে কিছুটা হতাশ আমিরুল। বানভাসি পরিস্থিতি তাঁর সব পরিকল্পনাতেই জল ঢেলে দিয়েছে। রূপনারায়ণের বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে একাধিক এলাকা। হুগলি জেলা পরিষদের সভাধিপতি মেহেবুব রহমান জানিয়েছেন, আরামবাগ মহকুমার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খানাকুল এক এবং দুই নম্বর ব্লক। জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ২৫টি গ্রাম জলমগ্ন। ৮-১০ হাজার মানুষ জলবন্দি।
দামোদরের জলে বানভাসি জাঙ্গিপাড়ার রশিদপুর, রাজবলহাট ১ রাজবলহাট ২ এবং মুণ্ডলিকা গ্রাম পঞ্চায়েত। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় দু’হাজার মানুষ জলবন্দি। ত্রাণশিবিরেও আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর নৌকা নামিয়ে ত্রাণকার্য চালাচ্ছে। হুগলি জেলার কৃষি উপ অধিকর্তা জয়ন্ত পাড়ুই বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত যা হিসাব এসেছে তাতে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। জাঙ্গিপাড়ার ক্ষতি সবচেয়ে বেশি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy