প্রতীকী ছবি।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের দেওয়া হল একাদশ শ্রেণির প্রশ্নপত্র। পরীক্ষা দিয়ে ছাত্রীরা বাড়ি চলে যাওয়ার পরে স্কুল কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। তারপর ফের তাদের বাড়ি থেকে ডেকে
এনে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। মঙ্গলবার এমন ঘটনারই সাক্ষী রইল বাগনান আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়।
এই স্কুলের পরীক্ষা ব্যবস্থার তত্ত্বাবধানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভেনু ইনচার্জ তথা বাগনান হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ভাস্কর আদক বলেন, ‘‘প্রশ্নপত্র বিলিতে একটা ভুল হয়ে গিয়েছিল। দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় ভুল করে একাদশ শ্রেণির প্রশ্নপত্র বিলি করা হয়েছিল। পরে অবশ্য ঠিক প্রশ্নপত্র বিলি করে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।’’ ভুল প্রশ্নপত্র বিলির দায় তিনি চাপিয়েছেন আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ঘাড়ে। তিনি বলেন, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষের বিষয়টি দেখে নেওয়া উচিত ছিল।’’ স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা দিপালী রায়ের পাল্টা দাবি, ‘‘আমি কিছু জানি না। যা করার করেছেন ভেনু ইনচার্জ।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ছিল উচ্চ মাধ্যমিকের শারীর শিক্ষার পরীক্ষা। ১০০ নম্বরের এই বিষয়ের লিখিত পরীক্ষা ছিল ৪০ নম্বরের। বাকি ৬০ নম্বর প্র্যাক্টিকালের জন্য বরাদ্দ। সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ছিল পরীক্ষার সময়। আর একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা চলছিল বেলা ২টো থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত।
এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের নিজের স্কুলেই পরীক্ষাকেন্দ্র হয়েছে। বাগনান আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা জানায়, প্রশ্নপত্র পেয়ে তারা দেখে, সিলেবাসের সঙ্গে কোনও মিল নেই। বিষয়টি জানানো হয়েছিল গার্ডকে। কিন্তু পরীক্ষার্থীদের কথায় গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। পরীক্ষা শেষে খাতা জমা দিয়ে বাড়ি চলে যায় পরীক্ষার্থীরা।
স্কুল সূত্রের খবর, খাতা গোছানোর সময় কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। তাঁরা বুঝতে পারেন গুরুতর ভুল হয়ে গিয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্রের বদলে বিলি হয়ে গিয়েছে একাদশ শ্রেণির প্রশ্নপত্র। এরপর যুদ্ধকালীন তৎপরতায় প্রতিটি ছাত্রীকে ফোন করে ডেকে পাঠানো হয়। উচ্চ মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র দিয়ে দুপুর ২টো থেকে ৪টে পর্যন্ত ফের পরীক্ষা নেওয়া হয়। উচ্চ মাধ্যমির পরীক্ষার্থীরা প্রথম ধাপে একাদশ শ্রেণির প্রশ্নপত্র নিয়ে বাড়ি চলে গিয়েছিল। তাদের সেই প্রশ্নপত্রও সঙ্গে করে আনতে বলা হয়। সেই প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া হয় একাদশ শ্রেণির।
এ দিনের ঘটনার পর এলাকার শিক্ষকদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন প্রশ্নপত্র বিলির ধরন নিয়ে। তাঁদের বক্তব্য, প্রশ্নপত্র বিলি করা হয় থানা থেকে। ১০-১২টি স্কুলের দায়িত্বে থাকা মেন ভেনু ইনচার্জ পরীক্ষা শুরুর ২ ঘণ্টা আগে থানা থেকে প্রশ্নপত্র নিয়ে যান। তিনি তাঁর দায়িত্বে থাকা স্কুলগুলির কাছে সেই প্রশ্নপত্র পৌঁছে দেন। নিয়ম হল, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা যেহেতু শুরু সকাল ১০টায়, ফলে সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ থানা থেকে সেই প্রশ্নপত্র দেওয়ার কথা। একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা যেহেতু শুরু হয় বেলা ২টোয়, তাই থানা থেকে সেই প্রশ্নপত্র নিয়ে যাওয়ার কথা বেলা ১২টা নাগাদ। ফলে এ দিন দ্বিতীয় ধাপের প্রশ্নপত্র আগে স্কুলে এল কী করে, সেই নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।
এ বিষয়ে ভাস্করবাবু বলেন, ‘‘এই নিয়ম দু’বছর আগে ছিল। এখন থানা থেকে দু’বার প্রশ্নপত্র আনার খরচ বাঁচাতে সকালে একবারেই সব প্রশ্নপত্র নিয়ে চলে আসা হয়। তা আলাদা আলাদা প্যাকেট করে বিভিন্ন স্কুলে পৌঁছে দেওয়া হয়।’’
এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকদের একটা বড় অংশ। তাঁদের বক্তব্য, পরীক্ষা শুরুর দু’ঘন্টা আগেই যদি একাদশ শ্রেণির প্রশ্নপত্র বিলি হয়ে যায়, সেটা তো প্রশ্ন ‘ফাঁস’-এর সামিল। অন্য দিকে দ্বিতীয়বার যখন দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীরা পরীক্ষা দিতে এল তার আগেই সেই পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। তার প্রশ্নও অনেকের হাতে চলে এসেছে। ফলে প্রশ্ন দেখে ফেলেছে তারাও। এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা। তবে ঘটনার কথা মানতেই চাননি হাওড়া জেলা স্কুল পরিদর্শক অজয়কুমার পাল, অতিরিক্ত জেলা স্কুল পরিদর্শক বনমালী জানা, স্কুল পরিদর্শকের তরফে বহাল হওয়া সেন্টার ইনচার্জ মমতা বোধক। তাঁদের দাবি, এ দিন এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy