মদে বিষক্রিয়ার কারণ কী? গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
মালিপাঁচঘড়ার গজানন বস্তিতে এক দিন আচমকাই ছড়িয়ে পড়েছিল, ‘প্রতাপের মদে নেশা বেশি!’ রাতারাতি বিক্রি বেড়ে যায় বেআইনি ওই মদের ভাটির। তারই পরিণতি, বিষমদ পান করে ১১ জনের মৃত্যু!
গজানন বস্তিতে বেআইনি মদের কারবার চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন প্রতাপ কর্মকার নামে এক ব্যক্তি। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রতাপকে জেরা করে মিলেছে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য। তা থেকে কী ভাবে মদে বিষক্রিয়া, তা-ও ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে পুলিশের কাছে।
তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় চার দশক আগে, গজানন বস্তিতে বেআইনি মদের কারবারের শুরু হয়েছিল ধৃত প্রতাপের বাবার হাত ধরে। তার পর বাবার মৃত্যুর পর ব্যবসার ভার নেন প্রতাপ। মূলত নিম্নবিত্ত পরিবারের বাস গজানন বস্তিতে। প্রতাপের ক্রেতাও ছিলেন মূলত তাঁরাই। ব্যবসা নিজের হাতে পাওয়ার পরেই মুনাফা বৃদ্ধির পরিকল্পনা ছকে ফেলেন প্রতাপ। ঠিক হয়, বাইরে থেকে দেশি মদ কিনে তাতে এমন কিছু মেশাতে হবে, যাতে কম খরচেও ভরপুর নেশার জোগান দেওয়া যায়। সেই মতো, প্রতাপ বাইরে থেকে বাংলা মদ কিনে এনে তাতে ঘুমের ওষুধের গুঁড়ো মেশানো শুরু করেন। কিন্তু তাতেও প্রত্যাশিত লাভের মুখ দেখা যাচ্ছিল না। অতঃপর, বাংলা মদে রাসায়নিক মেশানো শুরু।
তদন্তকারীদের কাছে প্রতাপ স্বীকার করেছেন, তিনি বাংলার বোতল কিনে এনে তা থেকে মদ বার করে ফেলতেন। সেই মদে জলের সঙ্গে মেশানো হত আসবাবপত্রে রং করার বার্নিশের স্পিরিট। সামান্য পরিমাণে তা মেশালেই ভরপুর নেশা হত ক্রেতাদের। তার পর পাঞ্চিং মেশিন দিয়ে আবার বোতলের ছিপি লাগিয়ে তা বিক্রি করা হত। কিন্তু সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মদের এই মিশ্রণ যে কোনও দিন ভয়ঙ্কর ঘটনার পক্ষে যথেষ্ট ছিল। কারণ স্পিরিটের পরিমাণ সামান্য এ দিক ও দিক হলেই মৃত্যু অনিবার্য!
অন্য দিকে, প্রতাপের মদে নেশা বেশি হওয়ার তত্ত্ব চাউর হতেই তার বিক্রিও রাতারাতি বেড়ে যায়। এর পরেই গত বুধবার ঘটে যায় ভয়ঙ্কর কাণ্ড। বিষমদে ১১ জনের মৃত্যু হয়। এখনও আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আরও কয়েক জন। পুলিশের কাছে যদিও প্রতাপ দাবি করেছেন, প্রকাশ মিত্র নামে এক জনকে তিনি ওই মদের ভাটি দেখাশোনার ভার দিয়েছিলেন। পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতদের ভিসেরা পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয়েছে। সেই পরীক্ষার ফল এলে স্পষ্ট হবে, মদে বিষক্রিয়ার জেরেই কি এত জনের মৃত্যু হয়েছে। সেই রিপোর্টের ফল যা-ই আসুক না কেন, একটা বিষয় পরিষ্কার, জেলায় এখনও বেআইনি ভাবে মদ বিক্রির রমরমা জারি রয়েছে।
রঙের জন্য ব্যবহৃত স্পিরিট যে অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে, তা জানিয়ে কলকাতার জয়পুরিয়া কলেজের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক অন্বেষা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ইথানল মানুষের পক্ষে তেমন ক্ষতিকারক না হলেও মিথানল অত্যন্ত বিপজ্জনক। রঙের স্পিরিটে থাকে মিথানল। এটা শরীরে অতিরিক্ত ঘোর আনতে পারে। সেই সঙ্গে মিথানল শরীরের মধ্যে জারিত হয়ে ফর্মালিন ও ফরমিক অ্যাসিডে পরিণত হয়। ফলে বিষক্রিয়া হতেই পারে। এটা এতই বিষাক্ত যে অন্ধত্ব, এমন কি মৃত্যুর কারণও হয়ে উঠতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy