Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Conviction

পথের কাঁটা দেড় বছরের ছেলেকে খুন! আট বছর পর মা ও প্রেমিক দোষী সাব্যস্ত হাওড়ার আদালতে

অন্ধ্রপ্রদেশে মায়ের প্রেমের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল সন্তান। তাই সন্তানকে খুন করে ব্যাগে ভরে হাওড়াগামী ট্রেনের সিটের নীচে রেখে আসেন মা। সেই ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত মা ও তাঁর প্রেমিক।

representative image

— প্রতীকী চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
হাওড়া শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:২৬
Share: Save:

নিজের সন্তানকে খুন করার অভিযোগে মা এবং মায়ের প্রেমিককে দোষী সাব্যস্ত করল হাওড়ার এক ফাস্ট ট্র্যাক আদালত। ঘটনাটি অন্ধ্রপ্রদেশের। খুনের পর শিশুর দেহ ট্রেনে পাচার করা হয়েছিল হাওড়ায়। ফলকনুমা এক্সপ্রেসের কামরায় রেখে যাওয়া একটি ব্যাগ থেকে উদ্ধার হয় শিশুর দেহ। তদন্ত শুরু করে হাওড়া জিআরপি। সেই মামলাতেই মৃত শিশুর মা এবং তাঁর প্রেমিককে মঙ্গলবার দোষী সাব্যস্ত করল হাওড়া জেলার প্রথম ফাস্ট ট্র্যাক ও অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালত।

২০১৬ সালের ২৪ জানুয়ারি। ফলকনুমা এক্সপ্রেস তখন সদ্য হাওড়ায় এসে পৌঁছেছে। ট্রেন পরিষ্কার করতে কামরায় ঘুরছেন সাফাইকর্মীরা। আচমকাই চোখে পড়ে আসনের নীচে রাখা একটি দাবিদারহীন লাল-কালো ব্যাগ। ব্যাগ খুলতেই চোখ কপালে রেলকর্মীদের। কারণ, ব্যাগে ভরা ছিল, একটি শিশুর দেহ। দেহে গভীর আঘাতের চিহ্নও স্পষ্ট। কার সন্তান? কে খুন করল? তদন্ত শুরু করে হাওড়া জিআরপি। ফলকনুমা যে এলাকার উপর দিয়ে আসে, সেখানকার থানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তা করতে গিয়েই পুলিশের নজরে আসে অন্ধ্রপ্রদেশের টেনালি থানার জারি করা একটি লুকআউট নোটিস। তার পরেই পরত খুলে প্রকাশ্যে আসতে থাকে একের পর এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা।

ঘটনার সূত্রপাত অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুর জেলায়। সেখানে টেনালি থানার রাইসমিল কলোনিতে মা রশিদা বিবির কাছে দেড় বছরের ছেলে শেখ জিশান আহমেদকে নিয়ে থাকতেন মা হাসিনা সুলতানা। জানা গিয়েছে, গর্ভবতী অবস্থায় শ্বশুরবাড়িতে ঝগড়া করে স্বামীকে নিয়ে মায়ের কাছে এসে ওঠেন তিনি। জিশানের জন্মের কিছু দিন পর ঝগড়া করে মায়ের বাড়ি থেকে স্বামীকেও বার করে দেন হাসিনা। ইতিমধ্যেই হাসিনার সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক গড়ে ওঠে ছোটবেলার প্রেমিক ভান্নুর শায়ের। কিন্তু, হাসিনা-ভান্নুরের প্রেমের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল দেড় বছরের ছোট্ট জিশান। হাসিনা এবং ভান্নুর অনেক ভেবে স্থির করেন, পথের কাঁটা জিশানকেই চিরকালের জন্য সরিয়ে দেবেন। সেই মতো বিয়েবাড়ি যাওয়ার কথা বলে ২০১৫ সালের ২২ ডিসেম্বর ছেলে জিশানকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোন হাসিনা। কাউকে কিছু না বলে হাসিনা ছেলের হাত ধরে পাড়ি দেন হায়দরাবাদ। সেখানে ভান্নুরের সঙ্গে মিলিত হন। হায়দরাবাদের বান্‌জারা হিলসে নিজেদের স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন হাসিনা-ভান্নুর। জিশানকে তাঁদের ছেলে বলেই দাবি করতেন তাঁরা।

এ দিকে বিয়েবাড়ি থেকে ফিরে না আসায় হাসিনার মা রশিদা দুশ্চিন্তা করতে থাকেন। সে বছর ২৯ ডিসেম্বর থানায় মেয়ে এবং নাতির নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন রশিদা। এ দিকে, ২০১৬ সালের ২২ জানুয়ারি জিশানকে একসঙ্গে ১০টি ওষুধ গুঁড়ো করে খাইয়ে দেন মা। জিশান গভীর ঘুমে যখন আচ্ছন্ন তখন হাসিনা এবং ভান্নুর মিলে তাকে খুন করেন। হাসিনার ব্যাগে ছেলের দেহ ভরে ভান্নুর সেকেন্দ্রাবাদ স্টেশনে পৌঁছন। দেখেন, দাঁড়িয়ে আছে ফলকনুমা এক্সপ্রেস। যাত্রীর বেশে ট্রেনে উঠে একটি আসনের তলায় ব্যাগটি রেখে আবার নেমে চলে আসেন ভান্নুর। ট্রেন রওনা দেয় হাওড়ার উদ্দেশে।

অন্য দিকে, রশিদার অভিযোগের ভিত্তিতে হাসিনা এবং জিশানের ছবি দিয়ে লুকআউট নোটিস জারি করে টেনালি থানার পুলিশ। যে লুকআউট নোটিস নজরে পড়ে হাওড়া জিআরপিরও। সূত্রের খোঁজে মৃত শিশুর ছবি নিয়ে পুলিশ রওনা হয় অন্ধ্রপ্রদেশের টেনালি থানার উদ্দেশে। সেখানে গিয়ে দেখা যায় যে, মৃত শিশু ও নোটিসের শিশু, দু’জনে একই। খুঁজে বার করা হয় শিশুর বাবা শেখ রিয়াজকেও। তিনিও ছবি দেখে শিশুটিকে নিজের ছেলে বলে শনাক্ত করেন। পুলিশ এর পর শিশুর দিদা রশিদাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ইতিমধ্যে, হাসিনা মায়ের বাড়িতে ফিরে আসেন। তাঁকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করতেই ভেঙে পড়েন তিনি। পুলিশের কাছে সমস্ত দোষ কবুল করেন। এর পর ভান্নুরও দোষ স্বীকার করেন পুলিশের সামনে। দু’জনকেই অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ হাওড়া আদালতে হাজির করে।

জিজ্ঞাসাবাদে সামনে আসে সত্যিটা। সরকারি আইনজীবী অরিন্দম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই মামলার সাজা ঘোষণা করা হবে আগামী বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ২৯ ফেব্রুয়ারি। তার আগে দোষীদের কাছ থেকে আদালত জানতে চাইবে যে, সাজা সম্পর্কে তাঁদের কোনও বক্তব্য আছে কি?’’ সরকারি আইনজীবী আরও বলেন, ‘‘মা হয়ে নিজের দেড় বছরের সন্তানকে যে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছে এবং তার পরে খুব ঠান্ডা মাথায় ট্রেনে করে সন্তানের দেহ ভিন্‌রাজ্যে পাচার করা হয়েছে, তা সত্যিই বিরলের মধ্যে বিরলতম। সরকার পক্ষের তরফ থেকে এই মামলায় সর্বোচ্চ সাজা, অর্থাৎ ফাঁসির সাজা শোনানোর প্রার্থনা আদালতের কাছে রাখা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Mother killed son GRP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy