Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
House Wife Death

শ্বশুরবাড়িতে রহস্য-মৃত্যু তরুণীর, অভিযুক্তদের পেটালেন এলাকাবাসী

কিন্তু কী এমন হল যে, এক জন উচ্চশিক্ষিতা, নাচে ও আঁকায় পারদর্শী ২৪ বছরের তরুণী বিয়ের মাত্র এক বছরের মাথায় শ্বশুরবাড়িতে আত্মঘাতী হলেন?

সঙ্গীতা দে।

সঙ্গীতা দে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৩ ০৭:০৯
Share: Save:

রাতে শুতে যাওয়ার আগে এবং সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে মায়ের সঙ্গে রোজই ফোনে কথা হত মেয়ের। বুধবার রাতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এমনকি, মন্টেসরি প্রশিক্ষণের জন্য জীবনবিজ্ঞান নিয়ে ছোট বোনের সঙ্গেও আলোচনা করেছিলেন দিদি। তখনও তাঁর কথায় কোনও হতাশা বা ক্ষোভের বিন্দুমাত্র আঁচ পাননি বাড়ির লোক। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে সেই মেয়েকে বার বার ফোন করেও পাননি মা। শেষে মেয়ের ফোন ধরে শ্বশুর জানিয়েছিলেন, তাঁর বৌমা সিলিং ফ্যান থেকে গলায় দড়ির ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

কিন্তু কী এমন হল যে, এক জন উচ্চশিক্ষিতা, নাচে ও আঁকায় পারদর্শী ২৪ বছরের তরুণী বিয়ের মাত্র এক বছরের মাথায় শ্বশুরবাড়িতে আত্মঘাতী হলেন? বৃহস্পতিবার সকালে হাওড়ার চ্যাটার্জিহাট থানার ওলাবিবিতলায় একটি বাড়িতে সঙ্গীতা দে নামে ওই তরুণী গৃহবধূর রহস্য-মৃত্যুর পরে এই প্রশ্নকে ঘিরেই উত্তেজনা ছড়াল এলাকা জুড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে মৃতদেহ উদ্ধার করতে চাইলে এলাকার বাসিন্দা এবং সঙ্গীতার পরিজনেরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। ভাঙচুর চালানো হয় ওই তরুণীর শ্বশুরবাড়িতে।

পরিজনদের অভিযোগ, সঙ্গীতাকে খুন করার পরে গলায় দড়ির ফাঁস দিয়ে দেহটি সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলিয়ে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালানো হচ্ছে। এ দিন পুলিশ আসার পরে এলাকাবাসী দাবিতোলেন, ওই গৃহবধূর স্বামী জয়দীপচন্দ্র দে, শ্বশুর জয়ন্ত দে ও শাশুড়ি ভিখারিনী দে-কে গ্রেফতার না করলে মৃতদেহ নিয়ে যেতে দেওয়া হবে না। শেষমেশ প্রায় তিন ঘণ্টা পরে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে পুলিশ ভ্যানে তুলতে গেলে উত্তেজিত জনতা তাঁদের জুতোপেটা করে, চুলের মুঠি ধরে বেধড়ক মারধর করে।পুলিশ কোনও রকমে অভিযুক্তদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে তরুণীর মৃতদেহ ময়না তদন্তে পাঠানো হয়।

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটির সামনে ভিড় করে আছেন এলাকার লোকজন। তরুণীর মৃতদেহ কাপড়ে ঢেকে একটি মালবাহী গাড়িতে রেখে দেওয়া হয়েছে। সঙ্গীতার পরিজনেরা জানিয়েছেন, গত বছরের ২ এপ্রিল তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয় জয়দীপের। জয়দীপের পরিবারে আছেন তাঁর বাবা এবং সৎমা। বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তাঁর সঙ্গে পরিবারের খুব একটা যোগাযোগ নেই। জয়দীপ একটি বেসরকারি সংস্থায় নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করেন। বুধবার রাতেও তিনি ডিউটিতে গিয়েছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।

সঙ্গীতার মা সুমিতা দাস বলেন, ‘‘আমার মেয়ে ইতিহাসে এমএ। নাচে ও আঁকায় পারদর্শী ছিল। খুব চাপা স্বভাবের ছিল মেয়ে। ওর শরীরে দু’বার মারধরের চিহ্ন দেখলেও ওনিজে কিছু বলতে চায়নি। তবে আত্মহত্যা করার মতো মেয়ে ও নয়। মন্টেসরি পরীক্ষা দিয়ে চাকরির চেষ্টা করছিল। গতকাল রাতেও কথা বলেছে স্বাভাবিক ভাবে। আসলে ওর শ্বশুর, শাশুড়ি আর স্বামী মিলে ওকে মেরে ফেলেছে।’’

এলাকার বাসিন্দারা জানান, জয়দীপের পরিবারের লোকজন পাড়ায় কারও সঙ্গে তেমন মেশেন না। এক বাসিন্দা অনিমেষ রায় বলেন, ‘‘মাঝেমধ্যে সঙ্গীতাদের বাড়ি থেকে গোলমালের আওয়াজ পেয়েছি। মনে হয়, মেয়েটির উপরে সবাই মিলে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার করত। পারিবারিক ব্যাপার বলে আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারিনি।’’

হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘বধূ নির্যাতন ও খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। ধৃতদের এ দিন হাওড়া আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

House Wife Death Howrah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy