(বাঁ দিকে) উত্তরকাশীর ভাঙা সুড়ঙ্গে চলছে উদ্ধারকাজ। (ডান দিকে) সৌভিক পাখিরার মা। —নিজস্ব চিত্র।
আজ ফিরবে, কাল ফিরবে করে অনেকগুলো দিন পেরিয়েছে। কিন্তু এখনও ঘরে ফেরেনি উত্তরকাশীর ভাঙা সুড়ঙ্গে আটকে থাকা হুগলির দুই ছেলে। ছেলেদের ঘরে ফেরা নিয়ে আশঙ্কা আর উদ্বেগে দিন কাটছিল। তবে বৃহস্পতিবারের আশাভঙ্গের পর সেই উৎকণ্ঠা আরও বেড়েছে হুগলির সৌভিক পাখিরা এবং জয়দেব প্রামাণিকের পরিবারের।
উত্তরকাশী জেলার ব্রহ্মতাল-যমুনোত্রী জাতীয় সড়কের উপর সিল্কিয়ারা এবং ডন্ডালহগাঁওের মধ্যে নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গে কাজ করতে গিয়েছিলেন হুগলির পুরশুড়ার বাসিন্দা সৌভিক এবং জয়দেব। গত ১২ নভেম্বর হঠাৎই সেই সুড়ঙ্গের একাংশে ধস নামে। সাড়ে আট মিটার উঁচু এবং প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গের ভিতরে আটকা পড়েন সৌভিক, জয়দেব-সহ মোট ৪১ জন শ্রমিক। সেই ঘটনার ১২ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও উদ্ধার করা যায়নি তাঁদের। তবে সৌভিকের মা লক্ষ্মী পাখিরা এবং জয়দেবের বাবা তাপস প্রামাণিক বুধবার শুনেছিলেন, আর ১০ মিটার খুঁড়ে ফেলতে পারলেই উদ্ধারকারীরা পৌঁছে যাবেন আটকে থাকা শ্রমিকদের কাছে। সুড়ঙ্গ থেকে বার করে আনা হবে সৌভিক-জয়দেবদের। উদ্ধার করেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে। এ-ও জানানো হয়েছিল, বৃহস্পতিবার সকালেই তাঁদের ছেলেরা সুড়ঙ্গ থেকে বাইরে বেরিয়ে আসতে পারেন। তার পর থেকেই এক এক করে প্রহর গুনছিলেন সৌভিক এবং জয়দেবের পরিবার। আশার আলো জেগেছিল হুগলির দুই পরিবারের মনে। কিন্তু সকাল গড়িয়ে দুপুর হলেও খুশির খবর এখনও আসেনি। এর মধ্যেই খবর আসে, ছেলেদের উদ্ধার করতে আরও সময় লাগতে পারে। এক দিনও লেগে যেতে পারে। এর পর থেকে উৎকণ্ঠা আরও বেড়েছে দুই পরিবারের। আর কত ক্ষণ? বার বার সেই প্রশ্নই ঘুরেফিরে আসছে।
জয়দেবের বাবা তাপস প্রামাণিক বলেন, ‘‘আমার ভাইঝি রিঙ্কু উত্তরাখণ্ডে থাকে। ছেলে যে সংস্থায় কাজ করে, আমার জামাইও সেখানে কাজ করে। মাস ছয়েক আগে ছেলে বাড়ি এসেছিল। সুড়ঙ্গে আটকে পড়ার পর দুশ্চিন্তায় ছিলাম। এখন উদ্ধারকারীরা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছেন। তবে এখন আবার শুনছি আরও সময় লাগবে। ছেলেটাকে দেখতে পাব বলে বসেছিলাম, সব তো পিছিয়ে গেল। কী হচ্ছে বুঝতে পারছি না। যত ক্ষণ না ছেলে ফিরছে, চিন্তা দূর হবে না। এই ক’দিন কী ভাবে সময় কেটেছে ছেলের তা জানি না। এই পরিস্থিতি যেন কারও জীবনে না আসে।’’
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সৌভিক এবং তাঁর সহকর্মীদের মঙ্গলকামনা করে পুজো শুরু করেছেন সৌভিকের মা লক্ষ্মী। তিনি চান, শুধু তাঁর ছেলে নয়, উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে আটকে থাকা সব ছেলেই যেন মায়ের কোলে সুস্থ ভাবে ফিরতে পারে। ঈশ্বরের কাছে তেমনটা তিনি প্রার্থনা করছেন বলেও জানিয়েছেন। তিনি। লক্ষ্মীর কথায়, ‘‘আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি যে, শুধু আমার ছেলে না, সকলে যেন সুস্থ ভাবে বাড়ি ফিরতে পারে।’’
ছেলেদের ফিরতে দেরি হবে শুনে দুশ্চিন্তা বাড়লেও আশা ছাড়েনি সৌভিক এবং তাপসের পরিবার। দুই পরিবারেরই বক্তব্য, ‘‘এত দিন অপেক্ষা করেছি। তাই আরও কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করে নেব। কিন্তু ছেলেরা যেন সুস্থ ভাবে বাড়ি ফেরে।’’
সৌভিকের মা লক্ষ্মী জানিয়েছেন, আচার্য জগদীশচন্দ্র কলেজ থেকে পড়াশোনা করে উত্তরাখণ্ডের ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থায় চাকরি করেতে গিয়েছিল ছেলে। ১০ মাস আগে কাজে যোগ দেয়। দুর্গাপুজোর সময় বাড়ি এসে লক্ষ্মীপুজোর পর আবার উত্তরাখণ্ডে ফিরে যায়। তার কয়েক দিনের মাথাতেই উত্তরকাশীর ভাঙা সুড়ঙ্গে ছেলের আটকে পড়ার খবর পান লক্ষ্মী। তার পর থেকেই দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাঁর। লক্ষ্মী জানিয়েছেন, বিগত কয়েক দিন ধরে আশঙ্কা এবং উৎকণ্ঠার মধ্যেই কেটেছে পরিবারের। তবে শেষমেশ ছেলের ভিডিয়োবার্তা পেয়ে খানিকটা আশ্বস্ত তাঁরা। এখন শুধু সৌভিকের বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন পরিবারের সকলে। লক্ষ্মী বলেন, ‘‘আমার ছোট ছেলে ঋত্বিক ঝাড়খণ্ডে কাজ করে। বড় ছেলে সৌভিক উত্তরকাশীতে কাজে গিয়ে এমন বিপদে পড়ল। এই ক’দিন ঠাকুরকে ডেকেছি। দু’চোখের পাতা এক করতে পারিনি। শুধু ছেলের কথা মনে পড়ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy