মৃত শ্রেয়াংশু শর্মা। —নিজস্ব চিত্র।
ঘরে গমগম করে টিভি চলছিল। কী ব্যাপার জানতে খুড়তুতো দিদি ঢুকেছিল ঘরে। তাঁর চিৎকারে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। ঘরে এসে সবারই চক্ষুস্থির। আট বছরের শিশুকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে শিহরিত সবাই। কিন্তু কী ভাবে মারা গেল আট বছরের শিশু? কেউই জানেন না। হুগলির কোন্নগরের আদর্শনগরে শিশুর রহস্যমৃত্যু নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে। বাবার অভিযোগ, ‘‘ছেলেকে পাশবিক ভাবে হত্যা করেছে কেউ।’’
শুক্রবার রাতে ঘরের মধ্যে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় স্কুলছাত্র শ্রেয়াংশু শর্মার দেহ। শিশুর বাবা-মা কর্মসূত্রে বাইরে ছিলেন। প্রতিবেশীদের মারফত খবর পেয়ে বাড়ি ফিরে ছেলের নিথর দেহ দেখেন তাঁরা। আগেই ছেলেকে খুনের অভিযোগ করেছেন বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত যুবক পঙ্কজ শর্মা। ছেলের খুনিদের শাস্তির দাবি করে পঙ্কজের অভিযোগ, বাড়িতে থাকা বিভিন্ন জিনিস দিয়ে মারধর করা হয়েছে তাঁর একমাত্র সন্তানকে। তিনি জানান, বাড়ির সিঁড়ির কাছে একটি থান ইট ছিল। সেটা দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়েছে। ঘরে একটি গণেশমূর্তি ছিল। সেটা দিয়েও আঘাত করা হয়েছে। আর রান্নাঘরে যে সব্জি কাটার ছুরিটা ছিল, সেটি ঘরেই মিলেছে রক্তমাখা এবং বেঁকে যাওয়া অবস্থায়। পঙ্কজ কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘এটা ব্রুটালি মার্ডার (নির্মম ভাবে খুন)।’’ যদিও ছেলের খুনি ঠিক কারা, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি তিনি। তিনি দাবি করেন, বাড়িতে যে ভলিউমে টিভি চলছিল, তা কোনও বাড়িতেই চলে না। তাঁর ছেলেও কখনও এত ভলিউম দিয়ে টিভি চালাত না।
তিনি বলেন, ‘‘সব্জি কাটার ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয় ছেলেকে। টেবিলে মাথা ঠোকা হয়েছে। তা ছাড়া থান ইট, গণেশমূর্তি দিয়ে মারা হয়েছে। ছেলের মাথার সামনে থেকে পিছনের দিকে আঘাতের চিহ্ন।’’ পঙ্কজ আরও জানান, যে সময় শ্রেয়াংশুকে খুন করা হয়, সেই সময় বাড়িতে তাঁরা কেউই ছিলেন না। সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে খুনি। পঙ্কজ শর্মা কলকাতায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করেন। স্ত্রী কোন্নগরেই একটি ক্যাফেতে কাজ করেন। ঘটনার সময় কেউই বাড়িতে ছিলেন না। তবে যৌথ পরিবার তাঁদের। তাই ছেলেকে দেখভালের জন্য কেউ না কেউ থাকতেন। কিন্তু ঘটনার সময় পরিবারের বাকি সদস্যরা কোথায় ছিলেন, এ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, বিকেল থেকে রাত, বাইরের কাউকে পঙ্কজদের বাড়িতে ঢুকতে বা বেরোতে দেখেননি তাঁরা।
অন্য দিকে, পঙ্কজ জানান,বাড়িতে পোষ্য কুকুর রয়েছে। শুক্রবার রাতে তারস্বরে ডাকছিল সে। কিন্তু এত জোরে টিভি চলছিল যে কেউই কিছু বুঝতে পারেননি।
পুলিশ ইতিমধ্যে খুনে ব্যবহৃত জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করেছে। এই ঘটনা প্রসঙ্গে ডিসিপি শ্রীরামপুর অর্ণব বিশ্বাস বলেন, ‘‘ঘর থেকে কিছু জিনিসপত্র উদ্ধার হয়েছে। শ্রীরামপুরের হাসপাতালে দেহের ময়নাতদন্ত হচ্ছে। সেই রিপোর্ট হাতে এলে মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হয়ে যাবে। মৃতের পরিবার এবং এলাকার লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। শীঘ্রই অপরাধীদের ধরা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy