স্ত্রীর সঙ্গে হরিপদ দাস। ছবি: কেদারনাথ ঘোষ
সরকারি নথিতে হরিপদ দাস আবিষ্কার করলেন, তিনি আর বেঁচে নেই। স্ত্রী, মেয়েও মৃত। একমাত্র উত্তরাধিকারী নাতি তাঁর জমি বিক্রি করেছেন।
বৃদ্ধ অবাক। তিনি, তাঁর স্ত্রী দু’জনেই জীবিত। তাঁদের মেয়ে নেই। তাঁর মৃত্যুরও প্রশ্ন নেই। দম্পতির তিন ছেলে রয়েছেন। তবে, নথিতে সে উল্লেখ নেই।
অতঃপর হরিপদ জমি জালিয়াতির মামলা করেছেন। মূল অভিযুক্তকে সোমবার রাতে গ্রেফতার করেছে হুগলির শ্রীরামপুর থানার পুলিশ। ধৃত দুলাল দত্তের বাড়ি শ্রীরামপুর শহরের জে এন লাহিড়ী রোডে। ধৃতকে মঙ্গলবার শ্রীরামপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক ৭ দিন পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছেন। চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, তদন্ত চলছে।
বাকি অভিযুক্তদের ক্ষেত্রেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হরিপদ থাকেন শ্রীরামপুরের মিল্কি বাদামতলার সত্যপিরতলায়। পরিবারের দাবি, কাছেই পিয়ারাপুর পঞ্চায়েতের বেলুমিল্কি মৌজায় তাঁর ১.১৭ একর জমি রয়েছে। সম্প্রতি তার একাংশ বিক্রি করার জন্য তিনি ভূমি দফতরে যান। নথিতে দেখেন, ওই জমির মধ্যে ১.১৩ একর শালিজমির মালিক কলকাতার এন্টালির একটি সংস্থা। ২০১৯ সালের ৯ মার্চ তাদের ওই জমি বিক্রি করেছেন দুলাল। বাকি ৪ শতক বাস্তুজমি দুলালের নামে রয়েছে। নথি বলছে— দুলাল হরিপদর ‘মেয়ে উমা দাস দত্তের একমাত্র ছেলে’। সরকারি নথিতে ১৯৯০ সালে হরিপদ, ’৯২ সালে হরিপদর স্ত্রী অমিয়া, ২০০৩ সালে উমা মারা গিয়েছেন। সত্তরোর্ধ্ব হরিপদর অভিযোগ, দুলাল তাঁর কেউ নয়। জাল নথি দিয়ে সে কোটি টাকার ওই জমি হাতিয়েছে। নথিতে সাক্ষী হিসেবে হাওড়ার শিবপুরের সুনিতা চক্রবর্তী ও রতন গিরি, শনাক্তকারী হিসেবে সজল মান্নার নাম রয়েছে।
হরিপদর আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধ্যায় জানান, গত ১৩ সেপ্টেম্বর শ্রীরামপুর থানায়, ২৬ অক্টোবর কমিশনারেটে বিষয়টি লিখিত ভাবে জানান হরিপদ। পুলিশ ব্যবস্থা না নেওয়ায় কলকাতা হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেন। শ্রীরামপুর আদালতেও মামলা করেন। শ্রীরামপুর আদালত শ্রীরামপুর থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। ২৪ নভেম্বর থানা প্রতারণা, মূল্যবান সম্পত্তি জালিয়াতি, জাল ব্যক্তি সেজে প্রতারণা, জ্ঞাতসারে নকল নথি পেশ করা-সহ ৭টি ধারায় মামলা রুজু করে।
তদন্তকারীরা দেখেন, দুলালকে হরিপদর ‘উত্তরাধিকার’ সংশাপত্র দিয়েছেন শ্রীরামপুরের তৎকালীন পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায়। অমিয়বাবুকে পুলিশ নোটিস পাঠায়। তিনি লিখিত ভাবে পুলিশকে জানান, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর (বর্তমানে কো-অর্ডিনেটর) রাজীব দত্তের শংসাপত্রের ভিত্তিতে তিনি ওই শংসাপত্র দিয়েছিলেন। আনন্দবাজারের তরফে জিজ্ঞাসা করা হলেও অমিয়বাবু একই কথা জানান। তদন্তকারীরা রাজীবের সঙ্গেও কথা বলেন। রাজীব বলেন, ‘‘উত্তরপাড়া পুরসভার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ডেথ সার্টিফিকেট আমাকে দেখানো হয়েছিল। তার ভিত্তিতেই শংসাপত্র দিয়েছিলাম। পুলিশকেও এটা জানিয়েছি।’’ দুলাল তাঁর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নন। কেন তাঁকে শংসাপত্র দিলেন? রাজীবের বক্তব্য, ‘‘অন্য ওয়ার্ডের লোকরাও আমাদের কাছে আসেন। লোকটিকে চিনতাম। ডেথ সার্টিফিকেট দেখেই শংসাপত্র দিয়েছিলাম।’’ পুলিশের দাবি, উত্তরপাড়া পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, তারা এমন কোনও ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ দেয়নি।
গোটা পদ্ধতিতে ভূমি দফতরের কোনও ফাঁক রয়েছে কি না— সেটাও প্রশ্ন। রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে গত ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট দু’মাসের মধ্যে পুলিশের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে বলে খবর। হরিপদর বড় ছেলে মানিক দাস বলেন, ‘‘বেআইনি ভাবে জমি হাতানো হয়েছে। আমরা জমি ফেরত চাই। দোষীরা সাজা পাক।’’
হরিপদ এবং তাঁর স্ত্রী জীবিত বলে শংসাপত্র দিয়েছে স্থানীয় পঞ্চায়েত। এক্ষেত্রে তাঁদের অবশ্য আর ‘মরিয়া প্রমাণ’ করতে হয়নি, তাঁরা সত্যিই বেঁচে আছেন— এটুকুই ভরসা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy