Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
TMC

‘অশালীন’ অসিত? মহিলা পুরকর্মীর অভিযোগ নিয়ে অস্বস্তি শাসকদলে, ‘চুপ’ তৃণমূলের বিধায়ক

চুঁচুড়া পুরসভার এক মহিলা কর্মীর বক্তব্যের একটি ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেই ভিডিয়োতে ওই মহিলা নিজেকে তৃণমূল কর্মী বলে পরিচয় দিয়েছেন।

Harassment allegation against TMC MLA Asit Majumder, poster in Chunchura

চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদার। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:৫১
Share: Save:

সাদা কাগজে কালো কালিতে লেখা দু’টি লাইন— ‘বিধায়ক তুমি দূর হটো, চুঁচুড়ার নারীদের সম্মান বাঁচাও’। বুধবার সকাল থেকেই হুগলির চুঁচুড়ার বিভিন্ন জায়গায় নজরে পড়েছে এই পোস্টার। কে বা কারা রাতের অন্ধকারে এই পোস্টার সাঁটিয়েছেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে এই পোস্টারকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে জেলা জুড়ে। মঙ্গলবারই চুঁচুড়া পুরসভার এক মহিলা কর্মীর একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয় (যদিও ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেননি আনন্দবাজার অনলাইন)। সেখানে তাঁকে এক বিধায়কের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ তুলতে শোনা গিয়েছে। যদিও সেই বিধায়ক চুঁচুড়ার কি না, তা ওই ভিডিয়োয় তাঁকে বলতে শোনা যায়নি। প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, বিজেপি নেতা সজল ঘোষেরা সেই ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে সুর চড়াচ্ছেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সজলের দাবি, মহিলার সমস্ত অভিযোগ চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদারের বিরুদ্ধে। তবে এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত চুপ অসিত। কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক।

ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিয়োয় একের পর এক প্রশ্নের জবাব দিতে দেখা গিয়েছে অভিযোগকারিণীকে। তাঁর কথায়, ‘‘মহিলাদের উনি (বিধায়ক) সম্মান করেন না। ওঁর মুখের ভাষা খুবই খারাপ। মহিলাদের কুকথা বলেন। ভিডিয়ো কল এবং মেসেজ করেন মহিলাদের। উনি এখন ধিক্কার মিছিল করছেন শহরে, কিন্তু উনিই তো মহিলাদের সম্মান দিতে জানেন না।’’ কেন এত দিন অভিযোগ করা হয়নি? মহিলার দাবি, ‘‘মহিলারা ভয়ে অভিযোগ করেন না। আমরা ভয় পাই না, তাই অভিযোগ করি। আমার কাছে অনেক প্রমাণ আছে। সময় মতো সেগুলো সামনে আনব।’’

ভিডিয়োয় ওই মহিলাকে অসিতের নাম সরাসরি বলতে শোনা যায়নি। তবে বিধায়ক বলে বার বার উল্লেখ করেছেন তিনি। তাঁর দাবি, ২০১৬ সাল থেকে তিনি ‘বিধায়কের বাড়িতে’ কাজ করছেন। পুরসভার কর্মী হওয়ার পরেও তাঁকে বিধায়কের বাড়িতে কাজ করতে হত। শুধু তিনি একা নন, তাঁর স্বামীও বিধায়কের টুকটাক লেখালিখির কাজ করে দিতেন। মহিলার অভিযোগ, ‘‘পুরসভায় ঢুকতে দিতেন না বিধায়ক। পুরসভার হাজিরার খাতা সই করতে হত বিধায়কের বাড়িতে। ব্যক্তিগত কাজ করাতেন। জুতো পরিষ্কার করাতেন, টেবিল মোছাতেন। চা দিতে হত।’’

ওই মহিলার দাবি, মাস ছয় আগে বিধায়কের বাড়ির কাজ ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি যত দিন নিজের সম্মান পেয়েছিলাম, তত দিন ওঁর সঙ্গে ছিলাম। যখন সম্মানহানি হল, তখন বেরিয়ে এসেছি। যখন আমি ওঁর কুপ্রস্তাবে রাজি হইনি, তখনই আমায় চোর বদনাম দিয়ে তাড়িয়ে দিলেন।’’ শুধু তিনি একা নন, অনেক মহিলাকেই নাকি কুপ্রস্তাব দিতেন ওই বিধায়ক, এমন অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। অভিযোগকারিণীর দাবি, ‘‘আমার কাছে ভিডিয়ো কলের চ্যাট আছে।’’ তবে তিনি আশাবাদী দল ব্যবস্থা নেবে বিধায়কের বিরুদ্ধে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি দলকে জানিয়েছি।’’

অভিযোগকারিণীর দাবি, গত জুলাই মাসে ওই বিধায়কের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছিলেন তিনি। সেখানে তোলাবাজি থেকে মহিলাদের সঙ্গে খারাপ আচরণের কথা উল্লেখ করেছিলেন। এ বার তাঁর প্রকাশ্যে মুখ খোলার ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। সেই ভিডিয়ো পোস্ট করে তৃণমূলকে নিশানা করতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। লকেটের কথায়, ‘‘এমন আর কত মহিলার সঙ্গে আপনি সেফ সাইড করতেন বিধায়কবাবু! আপনি আবার নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে। হাস্যকর! রক্ষক যে নিজেই ধর্ষক, এটাই তৃণমূলের মেরুদণ্ড।’’ সজলের সমাজমাধ্যমেও একই পোস্ট ঘুরছে।

তবে এই অভিযোগ সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে চাননি চুঁচুড়ার বিধায়ক। হুগলি-শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল চেয়ারপার্সন অসীমা পাত্র এই ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমি নিজেই জানি না বিষয়টা। প্রমাণ ছাড়া কিছু বলতে পারি না। যাঁরা অভিযোগ করছেন, তাঁদের সঙ্গে আমরা কথা বলব। কী অভিযোগ আছে সব শুনব।’’

সেই আবহেই এ বার পোস্টার পড়ল চুঁচুড়া শহরে। এলাকাবাসীদের কথায়, ‘‘ঘুম থেকে উঠেই দেখি পোস্টার পড়েছে। কে বা কারা পোস্টার দিয়েছে, কেউ বলতে পারছে না। বিধায়কের নামে এ ভাবে পোস্টার পড়া খুবই খারাপ ব্যাপার।’’

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Chunchura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE