Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
লক্ষ্য ফ্রান্সে স্কুল জিমন্যাস্টিক্সে পদক
Gymnastic

Sports: গরমেও দু’বেলা প্র্যাকটিস অষ্টাদশীর

জয়িতা এ বার হুগলি গার্লস স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিল। বয়স সদ্য আঠেরো ছুঁয়েছে। বুধবার পরীক্ষা শেষ হয়েছে।

একনিষ্ঠ: পথেই অনুশীলন জয়িতার।

একনিষ্ঠ: পথেই অনুশীলন জয়িতার। নিজস্ব চিত্র।

প্রকাশ পাল ও তাপস ঘোষ
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২২ ০৬:৫৮
Share: Save:

প্রবল গরমেও প্র্যাকটিসে কামাই নেই মেয়েটির। রোজ দু’বেলা ঘাম ঝরিয়ে চলেছে সে। লক্ষ্য একটাই। বিদেশ থেকে সম্মান কুড়িয়ে আনতে হবে দেশের জন্য। সেই লক্ষ্যেই কঠোর পরিশ্রমে নিজেকে ডুবিয়ে দিয়েছে চুঁচুড়ার চকবাজার সোনাটুলির জয়িতা মালিক। আগামী ১৪-২২ মে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে আন্তর্জাতিক স্কুল জিমন্যাস্টিক্স চ্যাম্পিয়নশিপ। সেখানেই নামতে চলেছে এই বঙ্গকন্যা। ভারতের হয়ে কয়েক জন কিশোরী ওই প্রতিযোগিতায় যোগ দেবে। পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র প্রতিনিধি জয়িতাই।

জয়িতা এ বার হুগলি গার্লস স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিল। বয়স সদ্য আঠেরো ছুঁয়েছে। বুধবার পরীক্ষা শেষ হয়েছে। পরীক্ষার দিনগুলিতেও নিয়ম করে প্র্যাকটিস চালিয়ে গিয়েছে। অষ্টাদশীর কথায়, ‘‘বিদেশের মাটিতে যাতে সেরা হতে পারি, তার জন্য চেষ্টার খামতি রাখব না। তা হলে এক দিকে যেমন দেশের মুখ উজ্জ্বল হবে, তেমনই বাবা-মায়ের চেষ্টা ও স্বপ্ন সার্থক হবে।’’

বাবা জয়ন্ত মালিক জানান, ছোট থেকেই খেলার প্রতি মেয়ের ঝোঁক। ফলে, তাঁরাও মেয়েকে উৎসাহ জুগিয়ে এসেছেন। জিমন্যাস্টিক্সে আগ্রহ দেখে মেয়েকে তাঁরা বাঁশবেড়িয়ার একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি করে দেন। জয়ন্তবাবু প্রতিদিন ভোরে মেয়েকে সাইকেলে চাপিয়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নিয়ে যেতেন। প্রশিক্ষণর শেষে একই ভাবে নিয়ে আসতেন। ক্রমে জিমন্যাস্টিক্সই তার ধ্যানজ্ঞান হয়ে ওঠে।

জয়িতা আর্টিস্টিক জিমন্যাস্ট। তার আদর্শ দীপা কর্মকার। বাঁশবেড়িয়া তরুণ সঙ্ঘে কোচ মৌনা সরকারের কাছে জয়িতা অনুশীলন করে। সকালে মৌনার বাড়ির সামনের রাস্তায় চলে কসরত। বিকেলে ক্লাবে। জয়ন্তবাবু জানান, আন্তর্জাতিক ওই প্রতিযোগিতায় মেয়ের যোগদানের জন্য নিয়ম অনুযায়ী আড়াই লক্ষ টাকা জমা দিতে হয়েছে দেশের স্কুল গেমস ফেডারেশনে। শুক্রবার আরও পাঁচ হাজার টাকা পাঠাতে হয়েছে।

জয়ন্ত চকবাজার ডাকঘরে অস্থায়ী কাজ করেন। পোস্টম্যান কোনও কারণে না এলে বা ছুটি নিলে চিঠি বিলির জন্য তাঁর ডাক পড়ে। স্বভাবতই রোজ কাজ মেলে না। কাজ না-পেলে পয়সাও মেলে না। সংসার চালাতে মেলায় খেলনাও বিক্রি করেন তিনি। কিন্তু, গত দু’বছরে করোনা-কালে মেলা সে ভাবে না হওয়ায় এই রোজগারেও থাবা দিয়েছে পরিস্থিতি। স্ত্রী সুমিতা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকা। তাঁর রোজগার মাসে ছ’হাজার টাকা। দু’জনের সামান্য আয়ে কোনও রকমে সংসার চলে।

মেয়ের বিদেশযাত্রার আড়াই লক্ষ টাকা জোগাড় হল কী ভাবে?

জয়ন্ত জানান, আত্মীয়স্বজন ধার দিয়েছেন। স্ত্রীর গয়না বন্ধক দিতে হয়েছে। মেয়ের স্কুলের তরফে কিছু অর্থ সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

সাধারণ মানুষের অনেকেরই বক্তব্য, ক্রীড়া দফতরের উচিত ছিল মেয়েটির পাশে দাঁড়ানো। তাঁরা নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। হুগলি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি তনুময় বসু বলেন, ‘‘ওর বাড়ির লোক আমাদের কিছু জানাননি। জানালে আমরা অবশ্যই ওর পাশে দাঁড়াব।’’

জয়ন্ত বলেন, ‘‘খেলাধুলোর প্রতি আমারও আগ্রহ কম ছিল না। কিন্তু পোলিয়ো রোগের জন্য এগোতে পারিনি। মেয়ের মধ্যে দিয়ে সেই সাধ পূরণ করতে চাই।’’ জয়িতাকে তাঁরা বলেছেন, টাকার ব্যাপারে তাকে ভাবতে হবে না। সে শুধু খেলায়
মন দিক।

জয়িতা অন্য কিছু ভাবছেও না। তার লক্ষ্য— আন্তর্জাতিক পদক।

অন্য বিষয়গুলি:

Gymnastic Girl
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy