অভয় ও সুপ্রিয়কে নিয়ে জামাইষষ্ঠী অশোকনগরের বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র
ঘটা করে জামাইষষ্ঠী পালন হল অশোকনগরের চক্রবর্তী বাড়িতে। ছেলে সুপ্রিয়ের জীবনসঙ্গী অভয়ের জন্য বৃহস্পতিবার এলাহি খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন হয়েছিল বাড়িতে।
২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের বাসিন্দা সুপ্রিয় চক্রবর্তী ভালবেসে বিয়ে করেন পঞ্জাবি যুবক অভয়কে। দু’জনে ফ্ল্যাট কিনে থাকেন হায়দরাবাদে। অভয় পেশায় সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। ছেলের সমপ্রেমী সম্পর্কের জানতে পেরে শুরুতে দ্বিধায় ছিলেন সুপ্রিয়ের বাবা-মা। মা জেনেছিলেন প্রথম। ছেলের ইচ্ছের কথা শুনে পায়ের তলার মাটি কেঁপে উঠেছিল ছাপোষা মধ্যবিত্ত ঘরের মানুষ সন্তোষ ও তাঁর স্ত্রী প্রীতির। তবে ছেলের সুখের কথা ভেবে ধাতস্থ হন। মেনে নেন সম্পর্ক।
তাঁদের ধারণা ছিল, পাড়া-পড়শি, আত্মীয়েরা হয় তো মেনে নেবেন না এই ঘটনা। তবু সাহসে ভর করে ছেলের বিয়ের পরে নিজের এলাকায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। সন্তোষদের অবাক করে দিয়ে সেই প্রীতিভোজে আসেন বহু মানুষ। নবদম্পতিকে দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করে যান।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ওই ঘটনার পরে বুকের উপর থেকে যেন পাথর নেমেছিল সে দিন সন্তোষ-প্রীতির।
অশোকনগক-কল্যাণগড় পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের শেরপুর মোড় উঁচু কালভার্ট এলাকায় বাড়ি সন্তোষদের। বাড়িতে ছেলে ও তাঁর সঙ্গীকে নিয়ে বৃহস্পতিবার জামাইষষ্ঠীর রীতিনীতি পালন করলেন তাঁরা। কুলোয় বরণডালা সাজিয়ে, প্রদীপ জ্বালিয়ে, মিষ্টি খাইয়ে বরণ করা হয় অভয়-সুপ্রিয়কে। অভয় নিরামিষ খান। তাঁর জন্য ডাল, পোস্ত, ছ’রকম ভাজা, পনিরের বিভিন্ন পদ রান্না করা হয়েছিল। পঞ্জাবি ও পদ রাখা হয়েছিল। আম-লিচুর মতো ফলমূলও ছিল খাবারের তালিকায়। বাকিরা মাছ-মাংস খেয়েছেন কব্জি ডুবিয়ে।
সুপ্রিয় গোটা ঘটনায় আপ্লুত। বললেন, ‘‘বাড়িতে আগে জামাইষষ্ঠীর অনুষ্ঠান দেখেছি দিদি-জামাইবাবুকে নিয়ে। আমার বিয়ের পরে জামাইষষ্ঠী এ বারই প্রথম।" তাঁর মতে, এ বিয়ে রাতারাতি সকলে মন থেকে মেনে নেবেন, সে সম্ভব নয়। সামাজিক বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান, পার্বণের মধ্যে দিয়ে সম্পর্ক পূর্ণতা পাবে। জামাইষষ্ঠী সেই প্রক্রিয়ারই একটি। অভয়ের কাছে বাঙালির এই পার্বণ সম্পর্কে ধারণাই ছিল না। শ্বশুরবাড়িতে এ হেন আদরযত্ন পেয়ে তিনি অভিভূত।
পাড়া-পড়শিদের অনেকেরই বক্তব্য, ঘটনা শুনে তাঁরাও প্রথমটায় হজম করে উঠতে পারছিলেন না। পরে সকলেই ভেবেছেন, তাঁদের পাড়ার ছেলে সুপ্রিয় নিজের জীবনে সুখী হল কি না, সেটাই একমাত্র বিবেচ্য হওয়া উচিত।
সুপ্রিয়েরা এখন সমলিঙ্গের বিয়ের আইনি স্বীকৃতির দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে লড়াই করছেন। সন্তোষ ও প্রীতি সেই লড়াইয়ে ছেলের পাশে আছেন। সন্তোষ বলেন, ‘‘ছেলে যে ভাবে লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছে, ওকে আশীর্বাদ করি, যেন সে জয়ী হতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy