ভাসছে চরাচর। সোমবার উদয়নারায়ণপুরে। ছবি: সুব্রত জানা।
জল ছাড়ার বিরাম নেই ডিভিসির। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাওড়ায় বেড়ে চলেছে প্লাবিত মানুষের সংখ্যা। সরকারি হিসেব বলছে, সোমবার রাত পর্যন্ত উদয়নারায়ণপুর ও আমতা-২ ব্লকের প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ দামোদর ও মুণ্ডেশ্বরীর জলে প্লাবিত হয়েছেন। অন্য দিকে, মুণ্ডেশ্বরী ও রূপনারায়ণের সাঁড়াশি আক্রমণে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছেন ভাটোরা এবং ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান পঞ্চায়েতের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। পানীয় জলের জন্যও চলছে হাহাকার।
ডিভিসি শনিবার ১ লক্ষ ৩০ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়ে। সেই জল দামোদর বয়ে রবিবার সকালে উদয়নারায়ণপুরের পাঁচটি পঞ্চায়েতকে ভাসিয়ে দেয়। রবিবার বিকেলে ডিভিসি জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়িয়ে করে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার কিউসেক। তার জেরে সোমবার উদয়নারায়ণপুরের প্লাবিত পঞ্চায়েতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১০। এ দিন ডোবে আমতা-২ ব্লকের পাঁচটি পঞ্চায়েত। এ দিন বিকেলেও ডিভিসি জল ছাড়ে ১ লক্ষ ৪০ হাজার কিউসেক হারে। ফলে ভোগান্তি কমার কোনও লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন না প্লাবিত এলাকার বাসিন্দারা।
উদয়নারায়ণপুরের যে দশটি পঞ্চায়েত প্লাবিত হয়েছে সেগুলি হল রামপুর-ডিহিভুরসুট-আসন্ডা, হরালি-উদয়নারায়ণপুর, কুর্চি-শিবপুর, কানুপাট-মনসুকা, সিংটি, ভবানীপুর-বিধিচন্দ্রপুর, গড়ভবানীপুর-সোনাতলা, পাঁচারুল, দেবীপুর এবং হরিশপুর। তার মধ্যে প্রথম সাতটি পঞ্চায়েত পুরোপুরি ডুবে গিয়েছে। শেষের তিনটি পঞ্চায়েত আংশিক প্লাবিত হয়েছে আংশিক। সরকারি হিসেব অনুযায়ী প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ প্লাবিত হয়েছেন। ২৯টি ত্রাণ শিবির করা হয়েছে। সেখানে পানীয়
জলের পাউচ, শিশুখাদ্য, চিঁড়ে, গুড় এবং রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও মজুত রাখা হয়েছে অতি প্রয়োজনীয় ওষুধ। প্লাবিত এলাকায় করোনা টিকাকরণের কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফের নতুন করে দিনক্ষণ ঠিক করা হবে।
ত্রাণ শিবির ছাড়াও বহু মানুষ বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন। যাঁরা চাইছেন, তাঁদের কাছে নৌকায় করে রান্না করা খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এর জন্য খোলা হয়েছে লঙ্গরখানা। জাতীয় ও রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা ত্রাণ ও উদ্ধার কাজে নেমেছেন। তবে কোনও প্রাণহানি বা আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক মুক্তা আর্য। উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক সমীর পাঁজা বলেন, ‘‘পরিস্থিতি ভয়াবহ। মুখ্যমন্ত্রীকে সব খুঁটিনাটি জানানো হচ্ছে। তাঁর নির্দেশে ত্রাণ ও উদ্ধারের কাজে প্রশাসন প্রয়াস চালাচ্ছে।’’
দামোদরের জলে আমতা-২ নম্বর ব্লকের বিকেবাটি, থলিয়া এবং অমরাগড়ি পঞ্চায়েত প্লাবিত হয়। এছাড়া মুণ্ডেশ্বরী এবং রূপনারায়ণের জল বেড়ে যাওয়ায় প্লাবিত হয়েছে আমতা-২ ব্লকেরই ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান এবং ভাটোরা পঞ্চায়েত। মালপত্র নিয়ে দোকানিরা উঠেছেন উঁচু জায়গায়। এলাকার বাসিন্দারা ডিঙি বা কলার ভেলায় চেপে জিনিস কিনে আনছেন। ভাটোরা পঞ্চায়েতের প্রধান অশোক গায়েন বলেন, ‘‘আমরা পঞ্চায়েতের তরফ থেকে প্রতিটি সংসদে একটি করে মোট ১২টি নৌকার ব্যবস্থা করেছি। তাতে চেপেও গ্রামবাসীরা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন।’’ যদিও এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রয়োজনের তুলনায় নৌকা অপ্রতুল। সব নলকূপ ডুবে গিয়েছে। পানীয় জল এবং ত্রাণ সামগ্রীর জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে এলাকায়।
আমতা-২ ব্লকে মোট ১ লক্ষ মানুষ প্লাবিত হয়েছেন বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর। আমতার প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্র বলেন, ‘‘দু’টি পঞ্চায়েতে পানীয় জলের অবিলম্বে ব্যবস্থা করা দরকার।’’ ত্রাণও সব জায়গায় পৌঁছচ্ছে না বলে তাঁর অভিযোগ। এলাকার বাসিন্দা তথা আমতা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি দেলওয়ার হোসেন মিদ্দা বলেন, ‘‘মুণ্ডেশ্বরীতে প্রবল জলের স্রোত। ফলে ত্রাণবাহী নৌকা সরাসরি আসতে পারছে না। রূপনারায়ণ নদ দিয়ে অনেকটা ঘুরে আসার ফলে দেরি হচ্ছে। সবাইকে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে।’’ আমতার বিধায়ক সুকান্ত পাল বলেন, ‘‘জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পানীয় জলের কুড়ি হাজার পাউচ সোমবারেই পাঠানো হয়েছে। আরও পাঠানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy