হুগলির দেবানন্দপুরের কেষ্টপুরে সরস্বতী নদীর পাড়ে আনুমানিক ৫১৭ বছর ধরে চলে আসা ‘উত্তরায়ণ’ উৎসবকে ঘিরে মেলা বসে। সেই মেলাই কালক্রমে ‘মাছের মেলা’ নামে পরিচিত হয়েছে। কয়েক বছর আগেও দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসতেন মেলায়। তবে ভিড় এখন আগের তুলনায় অনেকটাই কমেছে। স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, মেলা প্রাঙ্গণের পাশেই চোলাইয়ের ভাটি। সেখানে বিক্রি ও খাওয়া দুই চলে। মেলায় পুলিশ থাকলেও এ দিকে নজর করে না বলে প্রতি বছর মদ্যপদের উৎপাত বাড়ছে বলে অভিযোগ। ফলে সাধারণ মানুষের আনাগোনা কমেছে।
আবগারি দফতরের সুপার কৌশিক মিত্র জানান, কেষ্টপুরে চোলাইয়ের ভাটিতে মাঝে মধ্যেই হানা দেওয়া হয়। মেলার সময়ে রমরমা বাড়ে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে তেমন হলে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীদের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে হবে। অভিযোগ মানেনি পুলিশ। চন্দননগর কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, মেলাকে ঘিরে পুলিশি বন্দোবস্ত থাকে। কেউ যদি বাগানের আড়ালে গিয়ে নেশা করেন, নজরে এলেই পুলিশ ব্যবস্থা নেয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, প্রতি পয়লা মাঘ এক দিনের এই মেলাকে ঘিরে আশপাশে বনভোজন করতে আসা মানুষের একটা বড় অংশ প্রকাশ্যে মদ্যপান করেন। মদ্যপ অবস্থায় তাঁদের অশান্তিও লেগে থাকে। গত বছর কয়েক জনের মধ্যে রক্তারক্তি হওয়ার নজির রয়েছে। এলাকার এক মহিলা বলেন, “একটা সময়ে মেলা উপলক্ষে বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন আসতেন। বছর কয়েক ধরে অশান্তির কথা শুনে তাঁরা আর আসেন না।”
মঙ্গলবার কয়েকটি পরিবার গড়িয়া থেকে এই মেলা ঘুরতে আসে। তাঁদের এক জন বলেন, “মাছের মেলায় এই প্রথম এলাম। ভেবেছিলাম, মাছ কিনে এখানেই ভেজে খাব। সেই মতো সরঞ্জামও এনেছিলাম। কিন্তু সরস্বতী নদীর পাড়ের যা অবস্থা! এই মাতালদের মধ্যে পরিবারের লোকজনকে নিয়ে বসা যায় না!”
জনশ্রুতি, নিমাই ভক্ত রঘুনাথ দাস গোস্বামীর ঘরে ফেরাকে ঘিরে মাঘের প্রথম দিনে উত্তরায়ণ উৎসবের সূচনা। এ দিন স্থানীয় রাধামোহন জিউ মন্দিরে রাধা-কৃষ্ণের পুজোপাঠ চলে। পাশেই চলে মাছের মেলা। যেখানে হুগলির পাশাপাশি অন্য জেলা থেকেও মাছ ব্যবসায়ীরা ছোট-বড় হরেক মাছ নিয়ে হাজির হন। অনেকেই মাছ কিনে সেখানেই বন ভোজনে মাতেন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)