এ ভাবেই কেটে ফেলা হয়েছে গাছ, যেখানে অশ্রয় নিত ময়ূরের দল।
উধাও অন্তত ২৫টি আমগাছ। বুজিয়ে দেওয়া হয়েছে তিনটি পুকুর। প্রায় সাড়ে তিন ফুট পর্যন্ত গভীর করে কেটে নেওয়া হয়েছে মাটি।
এলাকাবাসীর অজান্তে হুগলির পোলবা-দাদপুর ব্লকের রাজহাট পঞ্চায়েতের নন্দীপুর গ্রামের প্রায় ১৫ বিঘার একটি আমবাগানের এমনই দশা হয়েছে। যার জেরে ওই বাগানে আশ্রয় নেওয়া বহু ময়ূর বিপন্ন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা পরিবেশপ্রেমীদের।
বৃহস্পতিবার সকালে এক গ্রামবাসী পাশে নিজের জমিতে যেতে গিয়ে বাগনটির তছনছ অবস্থা দেখেন। জানাজানি হতে বেলা ১১টা নাগাদ ঘটনাস্থলে আসেন চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার। আসে পুলিশও। ভিড় জমে। কিন্তু কারা কী উদ্দেশ্যে ওই তাণ্ডব চালাল, সে ব্যাপারে কেউ কিছু বলতে পারেননি। তাঁরা ঘুণাক্ষরেও কেউ কিছু টের পাননি বলে গ্রামবাসী দাবি করেছেন। দিল্লি রোডের ধারের ওই আমবাগানটি ব্যক্তি-মালিকাধীন। কিন্তু মালিকেরও খোঁজ মেলেনি। গ্রামবাসীরা জানান, বাগানটি বহুবার হাতবদল হয়েছে।
বিধায়ক ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে ভূমি দফতরে ফোন করে বিষয়টি জানান। পুলিশকে ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলেন। বিধায়কের কথায়, ‘‘আমি স্তম্ভিত! এ ভাবে প্রকৃতি ধ্বংস মেনে নেওয়া যায় না। এই অঞ্চলে আবার মযূরের বাস। আমি বিষয়টি বনমন্ত্রীকে জানাব। পাশাপাশি, পুলিশকে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’’ ঘটনাটি খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন বিভাগীয় বনাধিকারিক (হাওড়া) নিরঞ্জিতা মিত্র।
রাজহাট পঞ্চায়েতের গান্ধীগ্রাম, নন্দীপুর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় দেশের জাতীয় পাখি ময়ূরের অবাধ বিচরণ। বাম আমল থেকে শুরু করে বর্তমান সরকারের আমলে রাজহাটের ময়ূর সংরক্ষণ নিয়ে নেতা-মন্ত্রীরা ভুরি ভুরি আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। গান্ধীগ্রামের কয়েকটি পরিবারের প্রচেষ্টায় আজও কয়েকশো ময়ূর টিকে রয়েছে এই অঞ্চলে। বহু মানুষ শুধু ময়ূর দেখবেন বলে রাজহাটে আসেন। কিন্তু এ ভাবে প্রকৃতি ধ্বংস করা হলে এখান থেকে ময়ূর হারিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পরিবেশপ্রেমীরা।
ব্যান্ডেলের প্রকৃতিপ্রেমী চন্দন ক্লেমেন্ট সিংহ বলেন, "এ ভাবে বনাঞ্চল ধ্বংস হলে জীববৈচিত্রে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। যা রাজহাটের সাধারণ মানুষেরও সমস্যার কারণ হয়ে উঠবে। কারণ, ওই বনাঞ্চলে ময়ূরের প্রধান খাদ্য সাপ ও পোকামাকড় মেলে। ময়ূর না থাকলে সাপ-পোকামাকড়ের বংশবিস্তার হবে।’’
রাজহাটের বাসিন্দা রাজেন্দ্রনাথ কল্যা ও নারায়ণ আদকের বক্তব্য প্রায় সমান। তাঁরা বলেন, "ময়ূর রক্ষার্থে আমরা যে কোনও কিছু করতে রাজি। কিন্তু ভৌতিক কাণ্ডের মতো রাতারাতি বনাঞ্চল ধ্বংস হওয়ায় সত্যিই ময়ূরগুলি সঙ্কটে পড়বে। দেখা যাক, কী করতে পারি!’’
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, ১৫ বিঘার আমবাগান থেকে অন্তত ২৫টি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। গাছের গোড়া থেকে প্রায় সাড়ে তিন ফুট গভীর পর্যন্ত মাটি নেই। ওই জমিতে থাকা তিনটি জলাশয়ের চিহ্ন পর্যন্ত নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা বাপ্পা নিয়োগীই এ দিন প্রথম বাগানটির অবস্থা দেখে শিউরে ওঠেন। তিনি বলেন, ‘‘নিজের চারাজমিতে (আমগাছের চারা তৈরি হয় যে জমিতে) যাচ্ছিলাম। ওই বাগানের পাশেই আমার জমিটা। বিষয়টা নজরে না এলে আমার জমিটাও হয়তো শেষ হয়ে যেত! দিনতিনেক আগেও নিজের জমিতে গিয়েছিলাম। তখন কিন্তু বাগানটির এই দশা হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy