Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Imambara District Hospital

রাতে অবারিত দ্বার বহিরাগতদের, দুশ্চিন্তা

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক ছাত্রীকে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় রাজ্য। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে জেলার হাসপাতালেও রাতের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে সেই বন্দোবস্ত কেমন, সরেজমিনে দেখল আনন্দবাজার। 

রাতের চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতাল। ছবি: তাপস ঘোষ

রাতের চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতাল। ছবি: তাপস ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২৪ ০৯:০২
Share: Save:

শনিবার রাত সাড়ে ১২টা। চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালের নার্স হস্টেলের সামনে হাফ প্যান্ট পরা চার যুবক। জিজ্ঞাসা করায় এক জন জানালেন, সামনেই বাড়ি। তাই দাঁড়িয়ে আছেন। সঙ্গী যোগ করলেন, ‘‘রাতে খাওয়ার পরে একটু সুখটান না দিলে হয়! বিড়ি টানতে রোজ এই সময়ে আসি।’’

একে হাসপাতাল, তায় মহিলা হস্টেলের সামনে কেন? সটান জবাব, ‘‘কিসের সমস্যা! রাত-বিরেতে মহিলারা বাইরে বেরোন না। বেরোলেও মাথা নিচু করে হাসপাতালের দিকে চলে যান।’’ পুলিশ এলে? এ বার উত্তর, ‘‘ওরা আলে-কালে আসে। সামনে বাড়ি জেনে চলে যেতে বলে। ওরাও চলে যায়।’’

কিছুক্ষণের কথোপকথনে সাংবাদিক পরিচয় জেনে এক যুবক বললেন, ‘‘আরজি করের জন্য খোঁজখবর নিচ্ছেন তো! পুকুরপাড়ের দিকটা দেখুন। অন্ধকার ওই জায়গায় অনেকেই দাঁড়িয়ে মদ খায়। দু’এক জন রোগীর আত্মীয় থাকলেও বেশিরভাগ দিনেই বহিরাগতরা ঠেক জমায়।’’

হাসপাতালে গেট চারটি। সামনে দু’টি প্রধান গেট। উত্তরে মর্গের কাছে একটি গেট। অন্যটি পূর্বে হাসপাতালের পিছনে মোঘলটুলির দিকে। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাতে ওই দু’টি গেট দিয়ে অবাঞ্ছিত লোকেদের অবাধ যাতায়াত। ওই সময়ে ‘অপ্রয়োজনীয়’ গেট দু’টিতে তালা পড়ে না। জরুরি বিভাগের সামনে গাছতলায় বসার জায়গা। রাতে রোগীর আত্মীয়েরা সেখানে ঘুমোন। তাঁদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

হাসপাতাল সুপার অমিতাভ মণ্ডল বলেন, ‘‘কিছু কর্মী মোঘলটুলির দিক দিয়ে যাতায়াত করেন। রাতে ওই দিকে নিরাপত্তার বিষয়টিতে জোর দেওয়া হচ্ছে।’’ রাতে হাসপাতাল চত্বরে অবাঞ্ছিত লোকেদের আনাগোনা এবং মদ্যপানের বিষয়টিও মেনে নেন সুপার। বলেন, ‘‘পুলিশের সঙ্গে কথা চলছে। রাতে টহল বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। জরুরি বিভাগের সামনে ২৪ ঘণ্টা পুলিশ ক্যাম্প তৈরির বিষয়টিও দেখা হচ্ছে। সিসি ক্যামেরা বাড়ানোর কথা জেলা স্বাস্থ্য দফতরে জানানো হয়েছে।’’

রাতে হাসপাতাল চত্বরে নিরাপত্তা জোরদার করা উচিত বলে অভিমত সিনিয়র চিকিৎসক পার্থ ত্রিপাঠীর। তিনি বলেন, ‘‘আপাতত পুলিশ বলেছে রাতে দু’ঘণ্টা অন্তর খোঁজ নিয়ে যাবে। একটি মোবাইল নম্বরও দিয়েছে। প্রয়োজনে ফোন করলেই দ্রুত হাজির হবে জানিয়েছে।’’

চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘হাসপাতালগুলির নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা চলছে। আগে চুঁচুড়া হাসপাতাল ভবনের সামনে দিনে এক জন এএসআই থাকতেন। দু’তিন দিন ধরে দিন-রাত দু’জন এএসআই-কে রাখা হচ্ছে। রাতে টহল বাড়ানো হয়েছে।’’

হাসপাতাল সূত্রে খবর, ভবনের অন্দরে একটি বেসরকারি সংস্থার ৩২ জন নিরাপত্তারক্ষী থাকেন তিনটি শিফট মিলিয়ে। অভিযোগ, তাঁদের দিয়ে কখনও কখনও রোগীর শয্যার চাদর পাল্টানো, রোগীকে নিয়ে যাওয়া, অক্সিজেন দেওয়ার মতো কাজও করানো হয়। অভিযোগ উড়িয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, রোগী নামানো-ওঠানোর সময় লোক কম থাকলে কোনও নিরাপত্তাকর্মী স্বেচ্ছায় এগিয়ে যান। এর বেশি কিছু তাঁরা করেন না।

ওই নিরাপত্তারক্ষীদের মধ্যে তিন শিফটে তিন জন থাকেন নার্সিং হস্টেলে। তাঁদেরই এক জন সকালে কিছুটা দূরে নার্সিং ট্রেনিং স্কুলে ‘ডিউটি’ করেন। স্কুলের অধ্যক্ষ অনুপমা ভড় জানান, হস্টেলে ছাত্রীর সংখ্যা দেড়শোর বেশি। তিনি বলেন, ‘‘রাতে কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব থাকে এক জন মহিলা নিরাপত্তাকর্মীর উপরে। আরজি কর কাণ্ডের পরে বিষয়টি ভাবাচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Imambara District Hospital R G Kar Medical College And Hospital Incident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy