উদ্ধার করে আনা হচ্ছে জাহ্নবী সামন্তকে। —নিজস্ব চিত্র।
১০১ বছর বয়সে জীবনে এই প্রথম আকাশে ওঠা। প্রথমে ভয়। তার পর বিস্ময়, শিহরণ। কিন্তু সে সবই ছাপিয়ে উঠল পেটের জ্বালা। হেলিকপ্টার চড়ার ঘোর দ্রুত কেটে গেল দু’দিনের প্রায় না খেয়ে থাকা জাহ্নবীর। হুগলির খানাকুলের শতায়ু বৃদ্ধা জাহ্নবী সামন্তকে সোমবার সকালেই উদ্ধার করা হয় জলে ডোবা বাড়ির ছাদ থেকে।
রূপনারায়ণের বাঁধ ভেঙেছিল শনিবার রাতে। তার পরেই এলাকায় জল ঢুকতে শুরু করে। ধীরে ধীরে বাড়ির একতলা জলের গ্রাসে চলে যায়। বাধ্য হয়েই রবিবার সকালে বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়েছিলেন সপরিবার। খানাকুলের পূর্ব ঠাকুরানি চকের সামন্তপাড়ার সেই বাড়ির ছাদ থেকে হেলিকপ্টারে উদ্ধার করা হল ১০০ পেরনো জাহ্নবীকে। নিয়ে আসা হয় আরামবাগের ত্রাণশিবিরে। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর বৃদ্ধার প্রথম কথা, ‘‘বড্ড খিদে পেয়েছে। দু’দিন প্রায় কিছুই খাওয়া হয়নি।’’
জাহ্নবী জানালেন, ১০০ পেরিয়েছেন বছরখানেক আগে। প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছেন। রবিবার বাড়ির একতলা জলে ডুবে গেলেও ভিটে ছেড়ে আসতে চাননি। বাড়িতে গরু রয়েছে। তাদের এখন কী অবস্থা তা নিয়ে ত্রাণশিবিরে বসেও চিন্তিত জাহ্নবী। সকালেই জানতে পারেন হেলিকপ্টারে করে আরামবাগে নিয়ে যাওয়া হবে। ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। জীবনে কখনও কোনও ধরনের উড়োজাহাজে চড়েননি। ত্রাণশিবিরে বসে জাহ্নবী বললেন, ‘‘খুব ভয় করছিল শুনে। বলেছিলাম, খোকা-বৌমা যাক। আমি যাব না। ভাবছিলাম হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে। এ সব যন্ত্র আকাশে উড়তে দেখেছি অনেক। কিন্তু এই বয়সে এসে যে সেই যন্ত্রটা চড়তে হবে, কখনও ভাবিনি। উঠব কী করে, নামব কী করে, এ সব ভাবছিলাম।’’ হেলিকপ্টার থেকে যখন নামছেন নূব্জ জাহ্নবী, তখন তাঁর হাত ধরেছিলেন উদ্ধারকারী দলের অনেকে। বৃদ্ধার খালি পা। গায়ের কাপড় বার বার কাঁধ থেকে নেমে আসছে কপ্টারের পাখার-হাওয়ায়। তাঁর কথায়, ‘‘নামার পরেও তো মনে হচ্ছিল, উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কী হাওয়া! গায়ে কাপড় রাখা যাচ্ছিল না।’’
এ সব কথা যখন বলছেন বৃদ্ধা, চোখ দুটো কিছুটা যেন উদ্ভাসিত। কিন্তু পেটের টান মুহূর্তেই নিভিয়ে দিয়েছে সেই জ্যোতি। বৃদ্ধা বললেন, ‘‘কিছু খেতে চাই। বড্ড খিদে পেয়েছে। দু’দিন প্রায় কিছুই খাওয়া হয়নি। এত বড় বন্যা আমার এই জীবনে দেখিনি। চার দিকে খালি জল আর জল। ওই যন্ত্রটায় বসে নীচের দিকে তাকিয়েও দেখছিলাম, চার দিকে শুধুই জল। আমার গরুগুলো কেমন আছে কে জানে! বাড়ির জন্য মনখারাপ লাগছে। ওদের জন্যও।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy