অসমাপ্ত রেলপথ। নিজস্ব চিত্র।
হাওড়া থেকে মশাগ্রাম হয়ে সরাসরি একই ট্রেনে বাঁকুড়া পৌঁছনো কার্যত সময়ের অপেক্ষা। বিস্তর জটিলতা কাটিয়ে পৃথক দু’টি লাইন মিশিয়ে দেওয়ার পরে চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ চলছে। এই সংযুক্তিতে রেলপথে হাওড়া থেকে বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়ার দূরত্ব কমে যাবে। বাঁচবে সময়। কিন্তু হাওড়া থেকে বিষ্ণুপুর রেলপথে ভাবাদিঘির জট একই জায়গায়।
হুগলির গোঘাটে প্রায় ৫২ বিঘার ওই দিঘির একাংশ বুজিয়ে রেলপথ নিয়ে আপত্তি তুলে দীর্ঘ আন্দোলন চলছে। গ্রামের মানুষের দাবি, দিঘি বাঁচিয়ে তার উত্তর পাড় বরাবর রেলপথ পাতা হোক। তবে প্রযুক্তিগত কারণের যুক্তি দেখিয়ে রেল তাতে রাজি নয়। দ্রুত কাজ সারতে তাঁরা রাজ্যের সাহায্য চেয়েছে। পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, রেলবোর্ডের চেয়ারম্যান সতীশ কুমার এ ব্যাপারে গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়েছেন। হুগলি জেলা প্রশসানের এক কর্তার দাবি, বিষয়টি নিয়ে রেল বা রাজ্যের কোনও বার্তা তাঁদের কাছে আসেনি।
গ্রামবাসীদের দাবি, তারকেশ্বর থেকে বিষ্ণুপুর ৮২.৪৭ কিমি রেলপথ জরিপের সময়ে ভাবাদিঘির উত্তর পাড় দিয়েই নক্শা করা হয়। অস্থায়ী সীমানাও নির্ধারণ করা হয়। ২০০৮ সাল নাগাদ জমি অধিগ্রহণ হলে জানা যায়, রেললাইন হবে দিঘির একাংশ বুজিয়ে। ২০১০ সালে ক্ষতিপূরণের টাকা নেওয়ার নোটিস পাওয়া থেকেই ‘দিঘি বাঁচাও কমিটি’ গড়ে আন্দোলন শুরু। দিঘির ২৬৮ জন অংশীদারের মধ্যে ১৭৭ জন ক্ষতিপূরণ নিলেও ৯১ জন নেননি। কমিটির দাবি, ভুল বুঝিয়েই ওই গ্রামবাসীদের চেক দেওয়া হয়েছিল।
কমিটির সম্পাদক সুকুমার রায় বলেন, ‘‘দাবির সুরাহা নিয়ে সরকারি ভাবে আমাদের কোনও বার্তা দেওয়া হয়নি। দিঘি বাঁচিয়ে রেলপথের দাবিতেই আমরা অনঢ়। দিঘির উত্তর পাড় দিয়ে রেলপথ হলে গ্রামবাসী পুরোপুরি সহযোগিতা করবেন।’’
প্রস্তাবিত রেলপথে হুগলিতে তারকেশ্বর থেকে আরামবাগ হয়ে গোঘাট পর্যন্ত ৩৩.৯৪ কিমি অংশে ট্রেন চলছে। অন্য দিকে, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর থেকে ময়নাপুর ২২.৪৮ কিমি অংশেও ট্রেন চলছে। সমস্যা গোঘাট থেকে ভাবাদিঘির ৯৫০ মিটারে। ভাবাদিঘির পরে কামারপুকুর পর্যন্ত ৫.৫০ কিমির কাজ শেষ। কামারপুকুর থেকে বাঁকুড়ার জয়রামবাটি পর্যন্ত ৩.৩০ কিমির কাজ বাকি। এর মধ্যে ০.৭৫৫ কিমি জমি রেলকে হস্তান্তর করা হয়েছে। গোঘাট ২ ব্লকের পশ্চিম অমরপুরে ২.৫৪৫ কিমি অধিগ্রহণের পরে ক্ষতিপূরণ বিলি করা হচ্ছে।
তবে গ্রামবাসীরা অনঢ় থাকলে এবং রাজ্য প্রশাসন ‘নিষ্ক্রিয়’ থাকলে সমস্যা কাটানো কঠিন বলে পূর্ব রেলের মত। প্রকল্পের তদারকিতে থাকা রেলের এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘ভাবাদিঘির দু’দিকে রেলপথের কাজ সম্পূর্ণ। ফলে নতুন করে নকশা বা অ্যালায়েনমেন্ট বদল করা যাবে না। দিঘির পূর্বে ৩০০ মিটার এবং পশ্চিমে ৩৫০ মিটার দূরে দু’টি সেতু করা হয়েছে। আন্দোলনকারীদের দাবি মানলে মাত্র সাড়ে ৬০০ মিটারের মধ্যে ১০ থেকে ১২ ডিগ্রি লাইন বাঁকাতে হবে। এটা সম্ভব নয়।’’
ভাবাদিঘি বাঁচাও সহযোগী মঞ্চের দাবি, এখানকার মানুষও চান বাকি থাকা রেলপথ অবিলম্বে জুড়ে যাক। তাঁরা শুধু চান দিঘিটিকে বাঁচাতে। কারণ, দিঘির সঙ্গে জড়িয়ে পরিবেশ, প্রকৃতি থেকে তাঁদের জীবন-জীবিকা। পরিবেশ ও জীবিকা রক্ষার তাগিদেই তাঁদের লড়াই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy