Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Durga Puja Special

‘মা’-টির টানে

একাই বা বলি কী করে! কত স্মৃতি আমার সঙ্গী। একেবারে ছোটবেলায় প্রথমে যে স্কুলে যেতাম, তার পাশে একটা ছাতিম গাছ ছিল। পুজোর আগে ছাতিমের গন্ধে পুরো এলাকাটা ভরে থাকত।

অঙ্কন: রৌদ্র মিত্র

অঙ্কন: রৌদ্র মিত্র

শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২২ ০৯:২৩
Share: Save:

এবার আর তোমার কাছে ফিরতে পারব না মা।

সংসারে বড্ড জড়িয়ে গিয়েছি যে! মেয়েটা চাকরির জন্য সেই কবে থেকে বিদেশে পড়ে রয়েছে। এ বার পুজোয় বাড়ি আসতে পারবে না। তবে ছুটি নিয়ে দিল্লি থেকে ছেলেটা ফিরেছে মহালয়ার দিন। পুজোয় তার হাজার পরিকল্পনা। সেখানে আমি কোথায়! তবে তার আবদার, পুজোয় প্রতি দিন তাকে রান্না করে খাওয়াতে হবে। কর্তাও ব্যস্ত সোসাইটির পুজো নিয়ে। আমার যে চারপেয়েটি সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিল, পুজোর কয়েক সপ্তাহ আগে সেও আমাদের মায়া কাটিয়ে চলে গিয়েছে। তাই এ বার পুজোয় আমি বেশ একা।

একাই বা বলি কী করে! কত স্মৃতি আমার সঙ্গী। একেবারে ছোটবেলায় প্রথমে যে স্কুলে যেতাম, তার পাশে একটা ছাতিম গাছ ছিল। পুজোর আগে ছাতিমের গন্ধে পুরো এলাকাটা ভরে থাকত। জানো মা, প্রতি বছর পুজো এলে আমি সেই গন্ধটা খুঁজি। আবার শীতের রাতে কখনও ওই গন্ধ পেলে মনে হয়, পুজোর ছুটির আগের দিন স্কুলের গেটে দাঁড়িয়ে আছি। ওই গন্ধ দিয়ে আমি পুজোয় ফিরে যাই। কে জানে, আসলে হয়তো আমি ফিরতে চাই তোমার কাছে।

পুজো আসার আগে থেকে তোমার ব্যস্ততা যে কী বাড়ত! ভাদ্রের রোদে জামাকাপড়, বিছানা শুকোতে দিতে তুমি। তুলতে যেতাম আমি। তারপর একসঙ্গে সেগুলো গুছিয়ে রাখা। ভাদ্রের শেষে রান্নাপুজোর ব্যস্ততা। সেটা মিটলে পুজোর কেনাকাটা। পুজোর বিকেলে ঠাকুর দেখতে বেরনো। কলেজে পড়ার সময় আমার এক বিশেষ বন্ধুকে নিয়ে এসেছিলাম, মনে আছে? অষ্টমীরসেই রাতে তুমি তাকে না খাইয়ে ছাড়োনি। পরের পুজোয় বৃষ্টির দমকের সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে গিয়েছিল সেই সম্পর্কও। পাশে ছিলে তুমি।

আচ্ছা, বিয়ের পর আমি তো প্রতি বছর পুজোয় তোমার কাছে যেতাম না। তুমি আসার জন্য কখনও জোর করোনি কেন? মায়েরা কি এমন মেনে নিতেই অভ্যস্ত? মেয়েটা এ বছর বাড়ি ফেরেনি বলেই কি আমার এমন মন খারাপ? কতই মেয়েই তো ফেরে না! তাদের মায়েদের কী অবস্থা হয়? হৃষিকেশে যে অঙ্কিতা ভাণ্ডারী হারিয়ে গেল, তার মায়ের বয়স তো আমারই মতো হবে? তাই না? উনিশ বছরের মেয়েকে ছাড়া কী করে থাকবে ওর মা? হৃষিকেশ থেকে ইরান কত দূর? ইরানের আকাশও তো এখন আমাদের শরতের আকাশের মতো নীল। সেখানকার মাহশা আমিনি তো আমার মেয়ের বয়সিই হবে। তার মৃত্যুর প্রতিবাদে কত মেয়ে চুল কেটে ফেলছে। গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাচ্ছে। তাদের মায়েদের কোলগুলোও খালি হয়ে গেল!

পুজো এলে সব মা-ই আসলে সন্তানের জন্য এমন অপেক্ষা করে! গত বছর শীতে তুমি না ফেরার দেশে চলে গেছ বলেই কি এ বার পুজোয় বারবার গলার কাছটা দলা পাকিয়ে উঠছে। সত্যিই তো, ইচ্ছে করলেই আর তোমাকে দেখতে পাব না। ফোন করলে গলাটাও শুনতে পাব না। হারিয়ে গেলেই কি তবে আমরা কারও কদর বুঝতে পারি!

আমাদের আঠারো তলার ফ্ল্যাট থেকে আকাশটা যেন খুব কাছে। কিন্তু আমার মনে হয়, উচ্চতা মানে নিঃসঙ্গতাও। মাটি থেকে অনেকটা দূরে। যা কিছু অপূর্ণ, অধরা, তার দীর্ঘশ্বাস যেন কখনও ব্যাকুল না করে— শিখিয়েছিলে তুমি। পুজো তো আসলে ফেরা। সকলে তার শিকড়ে ফিরুক। প্রার্থনা এইটুকুই।

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja Special Durga Puja 2022
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy