Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
কালবৈশাখীতে ভাঙল পাঁচিল, বেআব্রু কারখানার হাল
dunlop factory

ডানলপ এখন খণ্ডহর

দেশের প্রথম টায়ার কারখানায় একসময়ে কী ছিল না! আনাজ থেকে মাছ-মাংস, মুদি থেকে মিষ্টির দোকান, সেলুন, গয়নার দোকান, সুইমিং পুল, টেনিস কোর্ট, সিনেমা হল— সব ছিল।

Current condition of Dunlop factory

সাহাগঞ্জের ডানলপ কারখানা এখন যেমন। ছবি: তাপস ঘোষ Sourced by the ABP

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাহাগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২৩ ০৭:৩১
Share: Save:

রয়ে গিয়েছে শুধু লম্বা ইটের চিমনি, নিরাপত্তারক্ষীদের আবাস, ভগ্ন লিফটঘর। আর একরাশ শূন্যতা!

বহুদিন ধরেই হুগলির সাহাগঞ্জের বন্ধ ডানলপ কারখানায় চুরির অভিয়োগ শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আটকে যেত উঁচু পাঁচিলে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার কালবৈশাখীতে কারখানার দক্ষিণ দিকের বিশাল পাঁচিলের একটি বড় অংশ ভেঙে পড়ে। তাতেই সামনে এসেছে কারখানার বর্তমান ছবিটা। কোনও জাদুবলে যেন সব কিছু লোপাট হয়ে গিয়েছে। বহু গাছপালা উধাও। গোটা এলাকাযেন খণ্ডহর!

দেশের প্রথম টায়ার কারখানায় একসময়ে কী ছিল না! আনাজ থেকে মাছ-মাংস, মুদি থেকে মিষ্টির দোকান, সেলুন, গয়নার দোকান, সুইমিং পুল, টেনিস কোর্ট, সিনেমা হল— সব ছিল। রাস্তাঘাট ছিল ঝাঁ-চকচকে। বুধবার সুনসান কারখানা চত্বরে দাঁড়িয়ে তার চিহ্নমাত্র দেখা গেল না।

এই কারখানায় শেষবারের মতো তালা ঝোলে ২০১১-তে। তখন প্রায় ২২০০ কর্মী ছিলেন। তারপর থেকে বারেবারেই যন্ত্রপাতি এবং জিনিসপত্র চুরির অভিযোগ করেছেন বিরোধীরা। শাসক দল দায় ঠেলেছে বিরোধীদের দিকে। রাজনৈতিক চাপান-উতোরের মধ্যে এলাকাবাসী বলেছেন, সব কিছু লুটপাট হয়ে গিয়েছে। এতদিন ঝোপজঙ্গলে ঢাকা পরিত্যক্ত জানলায় চোখ মেলে দুর্দশা ঠাওর হলেও সবটা বোঝা যেত না। এ বার সব কিছু চোখের সামনে এনে দিল এক কালবৈশাখী।

বুধবার সেই কারখানার দিকে চেয়ে এলাকার এক বৃদ্ধের দীর্ঘশ্বাস, ‘‘এটাই আমাদের সাধের ডানলপ ছিল! বিশ্বাসই হচ্ছে না! ভাগ্যিস কালবৈশাখীতে পাঁচিলটা ভেঙেছিল।’’

প্রশাসন সূত্রের খবর, বিভিন্ন সংস্থা, ঋণদাতা ও শ্রমিকদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে ২০১২ সালেই ডানলপকে লিকুইডেশনের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। নানা আইনি প্রক্রিয়ার পরে শেষ পর্যন্ত ২০১৭ সালে লিকুইডেটরের নোটিস ঝোলে কারখানার গেটে। গত বছরের গোড়ায় হাই কোর্ট নিযুক্ত লিকুইডেটরের তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়েছিল ডানলপের যন্ত্রপাতি বিক্রি করা হবে। সেই মতো কারখানার যন্ত্রপাতি, আচ্ছাদন (শেড) ইত্যাদি প্রথম দফায় নিলামে ওঠে।

সূত্রের খবর, মাস দুয়েক আগে নিলামে মহারাষ্ট্রের একটি সংস্থা সেই সব জিনিসপত্র খুলে নিয়ে চলে যায়। অভিযোগ, তারপর থেকেই শুরু হয় পড়ে থাকা সব কিছু চুরি। সেই তালিকায় বিভিন্ন ভবনের ইট-কাঠও বাদ যায়নি।

পাঁচিলটি ভেঙে পড়ায় রাস্তার ধারের পাঁচটি বিদ্যুতের খুঁটিও ভেঙে যায় বুধবার। গোটা এলাকা অন্ধকারে ডুবে যায়। রাতে সে ভাবে কিছু বোঝা যায়নি। বুধবার সকাল হতেই বহু মানুষ ওই খণ্ডহর দেখতে ভিড় জমান। স্থানীয় বাসিন্দা বিনোদ দাস বলেন, "যথেচ্ছ পরিমাণে মাটি চুরির ফলেই পাঁচিলের ভিত আলগা হয়ে ঝড়ে পড়ে গিয়েছে। বাকি অংশও যখন-তখন ভেঙে পড়তে পারে।’’ এ দিন কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, সবচেয়ে খারাপ অবস্থা পাঁচিল ঘেঁষা লিফটঘরের। এমনই হাল, রাস্তার দিকে থাকা বাড়ির উপর সেই ঘর ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

দীর্ঘ ৪০ বছর ডানলপে কাজ করা অভিজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘লিকুইডেটরকে চুরির বিষয়টি জানানো হয়েছিল। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’’ জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশে কারখানা লিকুইডেটরের হাতে। এমতাবস্থায় আমাদের কিছু করার নেই।’’

সাফ হয়ে গিয়েছে এক সময়ের কয়েক হাজার মানুষের রুজিরুটির ঠিকানা।

অন্য বিষয়গুলি:

dunlop factory sahaganj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy