আরামবাগে ভেসে গিয়েছে প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র।
অতিমারির থাবায় গত বছর থেকেই বেসামাল মৃৎশিল্প। তার উপর ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে হাজির অতিবর্ষণ এবং বন্যা। কোথাও প্রবল বৃষ্টিতে গলে গিয়েছে প্রতিমার গায়ের মাটি। বন্যার জেরে কোথাও আবার বোধনের আগেই বিসর্জন হয়েছে দুর্গা, কালী, লক্ষ্মীদের। অতিমারি এবং বন্যার জোড়া ফলায় এ বছর বিদ্ধ মৃৎশিল্পীরা। দুর্গাপুজোর আর এক সপ্তাহও বাকি নেই। এই পরিস্থিতিতে এই পরিমাণ ক্ষতির মোকাবিলা কী ভাবে করবেন, তা ভেবেই কূলকিনারা পাচ্ছেন না তাঁরা।
আরামবাগের পারুল রথতলা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে প্রতিমা গড়েন মৃৎশিল্পীরা। করোনাকালে পুজোর বাজেট কমে যাওয়ায় প্রতিমার দাম কমাতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। তাও যেটুকু রোজগারের সুযোগ ছিল, তা কেড়ে নিয়েছে বন্যা। দ্বারকেশ্বর নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে আরামবাগ পুরসভার ১৬টি ওয়ার্ড। হঠাৎ জল ঢুকতে থাকায় মৃৎশিল্পীরা প্রতিমা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় পাননি। দুর্গা ছাড়াও লক্ষ্মী এবং কালী প্রতিমাও বানাতে শুরু করেছিলেন শিল্পীরা। কিন্তু সেই প্রতিমা সরিয়ে রাখার সুযোগ দেয়নি বন্যার জল। হুড়মুড়িয়ে ঢুকে ভাসিয়ে নিয়ে চলে গিয়েছে অধিকাংশ প্রতিমা। যেগুলি রয়েছে, তা থেকে ধুয়ে মুছে গিয়েছে মাটি।
ওই এলাকার মৃৎশিল্পী প্রশান্ত বর্ধন বলেছেন,‘‘তিন পরুষ ধরে ঠাকুর তৈরি আমাদের পেশা। এই রকম পরিস্থিতি আগে কোনও দিন হয়নি। এখন আর সময় হাতে নেই যে, খড় কিনে দড়ি বেঁধে কাঠামোয় মাটি লেপে ঠাকুর তৈরি করা যাবে। সময় থাকলেও হাতে পয়সা নেই।’’ উজ্জ্বল বর্ধন বলেছেন, ‘‘মহালয়ার প্রতিমার চোখ আঁকা হয়। সব বদলে দিল বন্যা। সব পরিশ্রম বৃথা গেল। সরকারি সাহায্য ছাড়া এই ক্ষতি পূরণ করা সম্ভব নয়।’’ হুগলির সব বানভাসি এলাকাতেই প্রতিমাশিল্পীদের অবস্থাটা এ রকই।
উত্তর ২৪ পরগনার অবস্থাও একই রকম। সেখানে বন্যা না হলেও প্রবল বৃষ্টিতে বহু এলাকা জলমগ্ন হয়েছিল। বৃষ্টির প্রকোপ থেকে বারাসত, বনগাঁ, বসিরহাটের অনেক শিল্পীই বাঁচাতে পারেননি প্রতিমাগুলিকে। ঝড়-বৃষ্টিতে চাল উড়ে চলে গিয়েছে। বৃষ্টির জলে ধুয়েছে প্রতিমার গায়ের মাটি। রাত জেগে প্রবল ব্যস্ততায় সেই সব প্রতিমা সারাইয়ের কাজ চালাচ্ছেন শিল্পীরা। কিন্তু এই ক’দিনের মধ্যে সেই কাজ কতটা করে উঠতে পারবেন, তা নিয়ে নিজেরাই সংশয়ে রয়েছেন।
বারাসতের শিল্পী সঞ্জীব পাল বলেছেন, ‘‘বৃষ্টি এমন ভাবে এসেছিল যে, প্রতিমার মাথার উপরে থাকা ত্রিপল খুলে বেরিয়ে যায়। সমস্ত প্রতিমা ভিজে গিয়েছে। কী ভাবে এই ক্ষতি সামাল দেব, নিজেও বুঝতে পারছি না।’’ শিল্পী রাকেশ পাল, গোপাল পাল, স্বপন ভট্টাচার্যের গলাতেও শোনা গিয়েছে একই সুর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy