সংযোজন: ক্লাসঘরে লাগানো হয়েছে ডিজিট্যাল স্ক্রিন। নিজস্ব চিত্র
শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিজেরা চাঁদা দিয়েছেন একাধিকবার। তারপরে হাত পেতেছেন অভিভাবক-গ্রামবাসীদের কাছে। তাঁরাও কার্পণ্য করেননি। সেই সব চাঁদায় ডোমজুড়ের দক্ষিণ ঝাঁপড়দহ মুসলিমপাড়া প্রাথমিক স্কুলটির যেন নবজন্ম হল!
সোমবার, শিশু দিবসে ওই স্কুলে গড়ে তোলা স্ক্রিন-প্রোজেক্টর সমৃদ্ধ স্মার্ট ক্লাস, লাইব্রেরি এবং প্লে স্কুলের উদ্বোধন করলেন জেলা প্রাথমিক স্কুল সংসদের চেয়ারম্যান কৃষ্ণ ঘোষ। তিনি বলেন, "কোনও সন্দেহ নেই এই স্কুলটি শিশু দিবসে শিশুদের কাছে সেরা উপহার। যে ভাবে শিক্ষক ও গ্রামবাসীদের যৌথ উদ্যোগে স্কুলটিকে নতুন রূপ দেওয়া হয়েছে, তা অন্যদের কাছে অনুকরণযোগ্য।’’
প্রধান শিক্ষিকা বন্দনা পোল্যে মণ্ডল বলেন, ‘‘শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উদ্যোগ তো ছিলই। কিন্তু গ্রামবাসীরা এগিয়ে না এলে আমাদের উদ্যোগ সফল হত না।’’ গ্রামবাসীরা উদ্বোধনের দিনেও সহায়তার ঝুলি নিয়ে হাজির ছিলেন। এ দিনই স্কুলে একটি কম্পিউটার দান করেন শেখ মিন্টু নামে এক গ্রামবাসী। তিনি বলেন, ‘‘এই স্কুলে আমাদের বাড়ির ছেলেমেয়েরাই পড়বে। আমরা চাই স্কুলের পরিবেশ এমন হোক, যাতে গ্রামের ছেলেমেয়েদের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে যেতে না হয়।’’
১৯৫৪ সালে স্কুলটি যাত্রা শুরু করেছিল এক গ্রামবাসীর বাড়ির দাওয়ায়। চটের বস্তা ঘিরে চলত পঠনপাঠন। ১৯৭০ সাল নাগাদ কয়েকজন গ্রামবাসীর দানের জমিতে গড়ে ওঠে স্কুলভবন। কিন্তু পড়ুয়া ধীরে ধীরে কমতে থাকে। বহু অভিভাবক এখান থেকে ছেলেমেয়েদের ছাড়িয়ে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করা শুরু করেন। ২০১৮ সালে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ১২১।
শিক্ষক-শিক্ষিকারা পরিকল্পনা করেন, পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়াতে স্কুলের ভোল পাল্টাতে হবে। পঠনপাঠনের উন্নতি যেমন করতে হবে, তেমনই স্কুলের পরিকাঠামোগত পরিবর্তনও প্রয়োজন। সেইমতো তাঁরা ঠিক করেন, স্মার্ট ক্লাসরুম, লাইব্রেরি এবং প্লে স্কুল গড়ার। সংস্কার করতে হবে জীর্ণ স্কুলভবনেরও। তাঁরা হিসেব করেন, এ সবের জন্য খরচ পড়বে প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা।
এই উদ্যোগে কোনও সরকারি সাহায্য আসেনি। ‘আপনি আচরি ধর্ম’ মেনে শিক্ষক-শিক্ষিকারাই প্রথমে চাঁদা দিয়ে কাজ শুরু করেন। এই স্কুলে স্থায়ী শিক্ষকের সংখ্যা ৭। পার্শ্বশিক্ষক ৩ জন। তাঁরা বেতনের অর্ধেক টাকা চাঁদা হিসেবে দেন। সেই টাকায় লাইব্রেরি গড়ার কাজ শুরু হয়। তারপরে তাঁরা অভিভাবক ও গ্রামবাসীদের নিয়ে বৈঠক করে পরিকল্পনার কথা জানান। গ্রামবাসীদের কেউ ৫ হাজার টাকা চাঁদা দেন, কেউ ১০ হাজার টাকা।
২০১৯ সাল থেকে কাজ শুরু হয়। পরের দু’বছর অতিমারির কারণে কাজে তেমন গতি ছিল না। এ বছরের গোড়া থেকে পুরোদমে কাজ শুরু হয়। স্মার্ট ক্লাসের জন্য আসে স্ক্রিন ও প্রোজেক্টর। আনা হয়েছে তিনটি কম্পিউটার। গড়া হয় প্রাক-প্রাথমিকের জন্য প্লে স্কুল। দোতলা স্কুলভবন সংস্কার করে রং করা হয়েছে। দেওয়াল ভরেছে শিক্ষিকাদেরই আঁকা ছবিতে। ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে। সব মিলিয়ে স্কুলে এলে চোখজুড়িয়ে যায়।
এই পরিকল্পনা মূলত যাঁর উদ্যোগে, সেই শিক্ষক সুব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের পঠনপাঠনে বরাবর গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু সেটাই বড় কথা নয়। স্কুলকে পড়ুয়াদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে আরও কিছুর দরকার হয়। সেটা স্কুলের পরিবেশ। আমাদের পরিকল্পনা যে সঠিক ছিল, তার প্রমাণ স্কুলের ভোল পাল্টাতে পড়ুয়ার সংখ্যা বেড়ে যাওয়া।’’ বর্তমানে স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৩৮।
জগৎবল্লভপুরের বিধায়ক সীতানাথ ঘোষও এ দিনের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন। তিনি এবং জেলা প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা সংসদের সভাপতি কৃষ্ণ ঘোষ জানান, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং গ্রামবাসীরা স্কুলের উন্নয়নে নয়া নজির সৃষ্টি করেছেন। স্কুলের তরফে কোনও সহায়তা চাওয়া হলে তাঁরা করতে প্রস্তুত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy