Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
কলকাতা থেকে ফিরতে ঘাম ছুটল ক্যানসার আক্রান্তের
Jagaddhatri Puja

Jagaddhatri Puja: পঞ্চমীতেই ‘নো এন্ট্রি’, শহরে ঢুকতে দুর্ভোগ

মঙ্গলবার রাতে, জগদ্ধাত্রী পুজোর পঞ্চমীতেই পুলিশের জন্য চূড়ান্ত দুর্ভোগে পড়তে হল বহু শহরবাসীকে।

নো এন্ট্রিতে আটক। জিটি রোডের খাদিনা মোড়ে।

নো এন্ট্রিতে আটক। জিটি রোডের খাদিনা মোড়ে। নিজস্ব চিত্র।

তাপস ঘোষ
চন্দননগর শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২১ ০৮:৩৫
Share: Save:

শহরে ঢোকার প্রতিটি মুখে গার্ডরেল। পুলিশের ধমক। ‘নো-এন্ট্রি’।

মঙ্গলবার রাতে, জগদ্ধাত্রী পুজোর পঞ্চমীতেই পুলিশের জন্য চূড়ান্ত দুর্ভোগে পড়তে হল বহু শহরবাসীকে। বিশেষ করে যাঁরা গাড়ি বা মোটরবাইকে করে অফিস-কাছারি বা কলকাতা থেকে ফিরছিলেন। নিজের বাড়িতে ঢুকতে যে বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হবে, কেউ আন্দাজ করতে পারেননি।

জগদ্ধাত্রী পুজো উপলক্ষে প্রতি বছর ষষ্ঠী-দশমী পর্যন্ত বিকেল থেকে সকাল ছ’টা পর্যন্ত গাড়ি চলাচল বন্ধ (নো-এন্ট্রি) থাকে চন্দননগরে। ছাড় থাকে শুধু জরুরি ক্ষেত্রে। এ বার ‘নো-এন্ট্রি’ শুরু হচ্ছে বেলা দু’টো থেকে। মঙ্গলবার পঞ্চমীতে, অর্থাৎ এক দিন আগেই তা কার্যকর হয়েছে। কিন্তু ক’জনকে তা জানানো হয়েছে? কী ভাবেই বা জানানো হয়েছে?

উঠছে প্রশ্ন।

কেমন দুর্ভোগ?

চন্দননগরের ছবিঘরের বাসিন্দা বছর তেষট্টির কৃষ্ণা মুখোপাধ্যায় ক্যানসারে আক্রান্ত। মঙ্গলবার গাড়িতে নিউটাউনে বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে ডায়ালিসিস করাতে নিয়ে গিয়েছিলেন ছেলে সুমিত। তিনি বলেন, ‘‘সন্ধ্যায় ফেরার সময় চন্দননগরে ঢোকার বিভিন্ন রাস্তায় পুলিশ আটকায়। গাড়িতে অসুস্থ বৃদ্ধা মাকে দেখেও ওরা ঢুকতে দিতে চাইছিল না। অনেক অনুনয়-বিনয় করতে হয়েছে।’’

কিডনির রোগে আক্রান্ত ভগ্নিপতিকে কলকাতায় হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে ওই বিকেলে বাড়ি ফিরতে নাকাল হন পাদ্রিপাড়ার বাসিন্দা, প্রাক্তন জাতীয় কবাডি খেলোয়াড় বিশ্বনাথ চক্রবর্তীও। পুলিশের ব্যারিকেডে শহরের নবগ্রাম সেতু, ভাগাড়ধার মোড়, চন্দননগর স্টেশন রোডে আটকাতে হয়।

বিশ্বনাথ জানান, তিনি দিল্লি রোড ধরে ফিরছিলেন। নবগ্রাম সেতুর কাছে পুলিশ আটকায়। অনুনয়-বিনয় করে সেখান থেকে ছাড় পেলেও ভাগাড়ধারে ফের আটকাতে হয়। অনেক অনুরোধের পরে সেখান থেকে বেরোতে পারেন। তবে, পুলিশ নির্দেশ দেয়— স্টেশন রোড ধরে জিটি রোডে উঠে যেতে হবে। তিনি তা-ই করেন। কিন্তু স্টেশন রোডে ফটকগোড়ায় ফের আটকে যান পুলিশি ব্যুহে। বিশ্বনাথের অভিযোগ, এখানে পুলিশ বলে, তিনি যেন স্টেশনের কাছে গাড়ি রেখে হেঁটে বাড়ি যান। সেই সময় কয়েক জন পরিচিত এসে তাঁকে ছেড়ে দিতে পুলিশকে অনুরোধ করেন। তার পরে তাঁকে ছাড়া হয়। তবে, বাড়িতে পৌঁছতে হয় ঘুরপথে।

বিশ্বনাথ বলেন, ‘‘কোথায় থাকি, কোথায় গিয়েছিলাম, কেন গিয়েছিলাম— সব বলা সত্বেও পুলিশ ছাড়তে চাইছিল না। অসুস্থ বোধ করি। অনেক অনুরোধ করে, নিজের পরিচয় দিয়ে গাড়ি নিয়ে বাড়িতে যেতে পারি।’’

পদে পদে এত নিষেধ এবং দুর্ভোগে চন্দননগরের মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে শহরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আইন সহায়তা কেন্দ্র’। চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘চিকিৎসা বা অন্য কোনও জরুরি প্রয়োজনে যাতায়াতে ছাড় রয়েছে। অন্য জায়গা থেকে আসা পুলিশকর্মীদের ক্ষেত্রে অসুবিধা হতে পারে। এমন হলে কমিশনারেটের আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই হবে।’’

পুলিশকর্তা যা-ই বলুন, স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রয়োজনীয় কাজে যাতায়াতের জন্য শহরবাসীকে গাড়ি বা মোটরবাইকের ছাড়পত্র (এন্ট্রি পাস) দেওয়া হলেও তা পেতে বহু মানুষকে নাকাল হতে হয়েছে। অনেকে পাননি।

সুমিত এবং বিশ্বজিৎ দু’জনেই আইন সহায়তা কেন্দ্রে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানান। সংগঠনের কর্ণধার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হঠাৎ করেই পঞ্চমী থেকে নো-এন্ট্রি করা হল। পাস দিতেও টালবাহানা করা হয়। চিকিৎসার জন্য বেরিয়ে ফেরার সময় পুলিশ লোকজনকে আটকে দেয়। নাগরিকদের এই হয়রানি কেন হবে? প্রশাসন দেখুক।’’ বিশ্বজিৎবাবুর স্ত্রী মঞ্জুদেবীকেও একই সমস্যায় পড়তে হয় বলে অভিযোগ।

সুমিত এবং বিশ্বনাথ জানিয়েছে‌ন, কমিশনারেটের দফতরে গাড়ির পাসের জন্য গিয়েও তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়। কয়েক ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। পুলিশ তাঁদের বলে, রোগীকে নিয়ে প্রতিদিন কলকাতায় যেতে হলে, প্রতিদিনই নতুন অনুমতি নিতে হবে। বিশ্বনাথ বলেন, ‘‘অনেকটা সময় নষ্ট করে এক দিনের ছাড়পত্র মিলছে। রোজই আবেদনের জন্য সময় নষ্ট করা সম্ভব!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Jagaddhatri Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy