করোনা আবহে গরিব পরিবারের শিশুরা কেমন আছে? অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। সেখানে পড়াশোনা শেখার পাশাপাশি রান্না করা পুষ্টিকর খাবার পেত শিশুরা। কিন্তু এখন? খোঁজ নিল আনন্দবাজার। আজ, হুগলির পরিস্থিতি।
অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বন্ধ। শিশু সেখানে রান্না করা খাবার পাচ্ছে না। বদলে কিছু খাদ্যসামগ্রী পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাড়িতে। কিন্তু ভাগের সেটুকু খাবারও শিশু পাচ্ছে কি?
না। শিশুর খাবারে ভাগ বসছে বাড়িতে। ফলে, পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশু। হুগলি জেলার সব এলাকাতেই কমবেশি এই ছবি ভাবিয়ে তুলছে প্রশাসনকে। পরিস্থিতির জেরে অনেক শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে বলে সমীক্ষায় ধরা পড়ছে।
সম্প্রতি গোঘাট-২ ব্লকের ৯টি পঞ্চায়েতে অপুষ্ট শিশু চিহ্নিত করতে প্রশাসন সমীক্ষা করে। দেখা যাচ্ছে, এখানে চরম অপুষ্ট শিশু চিহ্নিত হয়েছে ৭২ জন। আংশিক এবং মাঝারি অপুষ্ট ১৫৫ জন। কামারপুকুর গ্রামীণ হাসপাতালে পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্র করে চরম অপুষ্ট শিশুদের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। ডিসেম্বর মাসের গোড়া থেকে জেলার পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্রের জন্য গঠিত পরিদর্শক দল অপুষ্ট শিশু চিহ্নিতকরণের কাজ করছে বলে জানান সেখানকার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক বীরেশ্বর বল্লভ। স্বাভাবিক শিশু এবং মাঝারি অপুষ্টদের জন্য রেশন বরাদ্দ মাথাপিছু ৮ টাকা। চরম অপুষ্টদের জন্য পোষ্টিক লাড্ডুর জন্য ৪ টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ।
জেলা নারী-শিশু উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রের খবর, অগস্ট থেকে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মাধ্যমে সেই কাজ চলছে। অপুষ্ট শিশু চিহ্নিত হয় বয়সের সঙ্গে উচ্চতা, ওজন, হাতের দৈর্ঘ্য বিচার করে। যেমন, ১৫ মাস বয়সের শিশুর হাতের দৈর্ঘ্য ১৪-১৫ সেমির কম, ওজন ৯-১০ কেজির কম এবং উচ্চতা ৭০ সেমির কম হলে তাকে অপুষ্ট ধরা হয়।
জেলায় মোট কত শিশু অপুষ্ট রয়েছে, তার সার্বিক হিসেব মেলেনি। তবে, সরকারি সূত্রের খবর, গত বছর করোনা পর্বের আগে পর্যন্ত জেলায় চরম অপুষ্ট শিশুর সংখ্যা ছিল মোট ১৪০ জন। মাঝারি অপুষ্ট ছিল প্রায় ১২ হাজার। সেই সংখ্যা অনেক বাড়বে বলেই ব্লক শিশু বিকাশ প্রল্প আধিকারিকদের (সিডিপিও) আশঙ্কা। হুগলিতে ৬৭০৭টি অঙ্গনওয়াড়কেন্দ্র রয়েছে।
করোনা পর্বে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বন্ধ থাকায় শিশুর বাড়িতে দু’কেজি চাল, দু’কেজি আলু ও ৩০০ গ্রাম ডাল দেওয়া হয়। রান্না খাবারে ডিম বা সয়াবিন দেওয়া হতো। তা এখন দেওয়া হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকরা মনে করছেন, এমনিতেই পুষ্টিকর খাবারে টান পড়েছে। তার উপরে বাড়িতে সবাই খাবার ভাগ করে খাওয়ায় শিশুর পুষ্টিতে আরও ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। অপুষ্টির এটাই মূল কারণ।
বিভিন্ন এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে এই বক্তব্যের সত্যতা মিলেছে। সিমলাগরের বাসিন্দা ফকির হেমব্রমের সাড়ে তিন বছরের ছেলে অঙ্গনওয়াড়ির খাবার পায়। ফকির বলেন, ‘‘আমার আর এক ছেলের বয়স ৬ বছর পেরিয়েছে। ওর মুখে না দিয়ে শুধু ছোট ছেলেকে দেওয়া যায়!’’ কেউ কেউ জানিয়েছেন, সন্তানের এক মাসের খাবারে অভাবের সংসারে একাধিক দিন চলে যায়।
সিমলাগড়-ভিটাসিন পঞ্চায়েতের চাঁপাহাটি গ্রামের বাসিন্দা বাসন্তী বৈরাগ্য, রুমেলা বিবিরা রাখঢাক না করেই জানাচ্ছেন, বাড়িতে সকলের জন্যই এই খাবার রান্না করে নেন। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘আগে বাচ্চাকে ডিম আর সয়াবিন খাওয়ালেও এখন তা দেয় না। ফলে, এমনিতেই পুষ্টির ঘাটতি। যাই দিক, বাড়িতে শুধু শিশুর জন্য রান্না করা যায় না।’’ পুষ্টির জন্য ফের ডিম-সয়াবিন চালুর দাবি করছেন অনেকেই। বৈদ্যবাটীর কৈবর্তপাড়ার বাসিন্দা পূজা মণ্ডলের সন্তানের বয়স ৬ মাস। পূজা বলেন, ‘‘অঙ্গনওয়াড়িতে রান্না করা খাবার দিলেই ভাল। এতে পুষ্টির
ঘাটতি অনেকটাই পূরণ হয়। বাড়িতে সেটা সম্ভব নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy