মুখ ঢেকে যায়...: ছোট-বড় অজস্র হোর্ডিং হাওড়ার সালকিয়ার অরবিন্দ রোডে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
বড় বড় লোহার কাঠামো। নিয়মের পরোয়া না করে কোনওটি দাঁড়িয়ে রয়েছে বহুতলের ছাদে। কোনওটি ফুটপাত দখল করে ভাঙাচোরা অবস্থায় ঝুলছে। বড় ঘূর্ণিঝড় বা কালবৈশাখীর দাপট সহ্য করার মতো শক্তি না থাকা এই সব হোর্ডিং হাওড়া শহর জুড়ে কার্যত মৃত্যু-ফাঁদ তৈরি করেছে। তবুও হুঁশ নেই প্রশাসনের।
হাওড়ায় জিটি রোড ঘেঁষা বালি থেকে সালকিয়া চৌরাস্তা এবং হাওড়া ময়দান থেকে হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকা জুড়ে বিজ্ঞাপনী হোর্ডিংয়ের এমন বিপজ্জনক ছবি দেখা যায়। হাওড়া পুরসভা সূত্রের খবর, হোর্ডিং দু’রকমের হয়। সরকারি এবং বেসরকারি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, হোর্ডিংয়ের সর্বাধিক উচ্চতা, মাটি থেকে হোর্ডিং বসানোর উচ্চতা প্রভৃতি দু’ক্ষেত্রে একই থাকে। সেই সঙ্গে হোর্ডিংয়ের লোহার কাঠামোর স্থায়িত্ব, হাওয়ার গতির সহনশীলতা— সব কিছুই নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরীক্ষা করতে হয়। অভিযোগ, রাস্তার ধারে বা অফিস ও বাড়ির ছাদে লাগানো গগনচুম্বী অতিকায় লোহার কাঠামোগুলির কোনও পরীক্ষা বা রক্ষণাবেক্ষণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হয় না। তাই হাওড়া শহরে জালের মতো বিছিয়ে থাকা এই সমস্ত হোর্ডিং আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সব থেকে খারাপ অবস্থা হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন জিআর রোড, হাওড়া সেতু, গোলাবাড়ি এলাকার ডবসন রোড এবং উত্তর হাওড়ার জিটি রোডের আশপাশের এলাকা। সর্বত্রই হোর্ডিংয়ের লোহার কাঠামো ছড়িয়ে রয়েছে। পুরসভার নিয়ম অনুয়ায়ী, যে কোনও হোর্ডিং মাটি থেকে কমপক্ষে ১১ ফুট উপরে থাকবে। চওড়ায় সর্বাধিক ২০ ফুট। তবে কোনও ভাবেই হোর্ডিংয়ের কাঠামোর উচ্চতা ৬০ ফুট ছাড়াবে না। কিন্তু সেই সব নিয়ম আছে নামেই।
যেমন, হাওড়া স্টেশনের দিক থেকে ওঠার মুখে দেখা গেল, এক সময়ে ফুটপাত দখল করে তৈরি হওয়া কম উচ্চতার ডিজিটাল বোর্ডের কঙ্কাল। সদা ব্যস্ত ফুটপাতের উপরে নিয়ম ভেঙে তৈরি ওই বোর্ড পরে ভেঙে দিয়েছিল পুরসভা। কিন্তু রয়ে গিয়েছে তার লোহার কাঠামো। মরচে ধরে বিপজ্জনক অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে সেটি। অনিয়মের একই ছবি ডবসন রোড, হরিমোহন বসু লেন এবং আনাজ বাজারের সামনের রাস্তার। ন্যূনতম ১১ ফুট উচ্চতার নিয়ম না মেনেই রাস্তার পাশে তৈরি হয়েছে পর পর হোর্ডিং। সেগুলির না হয় কোনও রক্ষণাবেক্ষণ, পুরসভার ঘরে না ঢোকে ভাড়ার টাকা।
অভিযোগ, অধিকাংশ সময়ে পুরসভার হোর্ডিংগুলি দখল করে নেন শাসকদলের স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি বা নেতারা। যেমন, সালকিয়া এলাকার অনেক হোর্ডিং এই ভাবে দখল করে নেওয়ায় তৃণমূলের এক যুব নেতার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই পুরসভায় একাধিক অভিযোগও জমা পড়েছে।
‘হাওড়া আউটডোর অ্যাডভার্টাইজ়ার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক হেমন্ত চৌধুরীর দাবি, ‘‘পুরসভা থেকে ভাড়া নেওয়া সরকারি হোর্ডিং রাজনৈতিক দলগুলি দখল করে নেওয়ায় আমাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ক্লায়েন্টরা টাকা দিচ্ছেন না। আয় কমছে। এ সবের জন্যই অনেক সময়ে হোর্ডিংগুলির রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না।’’ সেই সঙ্গে ওই অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দাবি করেছেন, সরকারি হোর্ডিং থেকে বেসরকারি হোর্ডিংগুলির রক্ষণাবেক্ষণ ভাল হয়।
হাওড়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে ৪৫টি হোর্ডিং নিলাম ডেকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এখনও ফাঁকা অবস্থায় পড়ে রয়েছে ২০টির বেশি। পুরসভার এক কর্তা বলেন, ‘‘এটা ঠিকই যে, দরপত্র ডাকার পরেও হোর্ডিং কেউ নেয়নি। সেগুলি রোদে-জলে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। আসলে ওই দফতরের মাত্র দু’জন অফিসার থাকায় এ সব দেখাশোনা ঠিক মতো হচ্ছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy