—প্রতীকী চিত্র।
লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে চেনা বৃত্তের বাইরে যাচ্ছে হুগলি সিপিএম। ই-মেল ঠিকানা দিয়ে মানুষের মতামত জানতে চাইছে ৩৪ বছর রাজ্য শাসন করা দল। দলের অভ্যন্তরেও উঠে আসছে নানা ভাষ্য। এখনও পর্যন্ত যে তথ্য জেলা সিপিএমের কাছে এসেছে, তার নির্যাস, তৃণমূল স্তরে সংগঠন পোক্ত না হওয়ায় তৃণমূল-বিজেপির মেরুকরণ ভাঙা যায়নি।
জেলা সিপিএমের এক নেতা বলেন, ‘‘সমাজমাধ্যম-সহ নানা ভাবে আমরা মানুষের সঙ্গে সংযোগ করার চেষ্টা করছি। ই-মেল করতে বলা হচ্ছে তাঁদের। জানতে চাওয়া হচ্ছে, কেন তাঁরা আমাদের ভোট দিলেন না? সামগ্রিক যে সব কারণ উঠে আসবে, তা পর্যালোচনা করা হবে।’’
পঞ্চায়েত ভোটে হুগলিতে ২৩৯টি আসনে জিতেছিল বামেরা। ভোট পেয়েছিল ২২ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে লোকসভা নির্বাচনে সেই ভোট নেমে এসেছে ১১ শতাংশে। জেলা সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, বিপর্যয়ের কিছু কারণ প্রাথমিক ভাবে চিহ্নিত হয়েছে। প্রথমত, গ্রামের দিকে হয় সংগঠন নেই, অথবা থাকলেও তা দুর্বল। রাস্তায় ধারাবাহিক ভাবে বামেদের দেখতে না পাওয়ার কারণে মানুষ তৃণমূল-বিজেপির মেরুকরণের ভাষ্যকেই বাস্তব বলে ধরে নিয়েছেন।
দ্বিতীয়ত, প্রচারেও বহু জায়গায় বিজেপির পরিবর্তে তৃণমূলকেই আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য করেছিলেন কর্মীরা। এর ফল ঘরে তুলেছে তৃণমূল। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও যাঁরা বামেদের ভোট দিয়েছিলেন, তাঁদের একাংশ বিজেপিকে হারাতে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন।
তৃতীয়ত, হুগলি কৃষিপ্রধান জেলা হলেও সেখানে সিপিএমের কৃষক ও খেতমজুরদের সংগঠন খুবই দুর্বল। ফসলের ন্যায্য দাম না পাওয়া, চাষ ও সারের খরচ বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলি কৃষক ও খেতমজুরদের কাছে নিয়ে যাওয়া যায়নি।
চতুর্থত, রাজ্যের এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কে নথিভুক্ত বেকারের সংখ্যা প্রায় ৪০ লক্ষ। অথচ, রাজ্য সরকারের ‘যুবশ্রী ভাতা’ পান মাত্র এক লক্ষ বেকার। কেন বাকি ৩৯ লক্ষ বেকার ভাতা পাবেন না, সেই প্রশ্ন নিয়ে বেকারদের সামনে যাওয়া যায়নি।
পঞ্চমত, মহিলা সংগঠনকে যথেষ্ট সক্রিয় করা যায়নি। অন্য দিকে, লক্ষ্মীর ভান্ডারকে হাতিয়ার করে ভোটব্যাঙ্ক স্ফীত করেছে তৃণমূল। উপভোক্তাদের ভোটের প্রচারে কাজে লাগিয়েছে। লক্ষ্মীর ভান্ডারের জেরে বাম মহিলা সংগঠনের অনেকে শিবির বদল করেছেন।
ষষ্ঠত, পাঁচটি পঞ্চায়েত বাদ দিলে জেলায় আর কোনও প্রতিষ্ঠানই এখন বামেদের দখলে নেই। সে কারণে মানুষের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতা থেকে গিয়েছে। অন্য দিকে, সরকারের নানা প্রকল্প নিয়ে মানুষের কাছে যাওয়ার সুযোগ বেড়েছে তৃণমূলের। নিরাপত্তাকর্মীদের বাধায় আবাসনগুলিতে কার্যত প্রচার করতে পারে না বাম গণসংগঠনগুলি। পক্ষান্তরে, ক্ষমতায় থাকার সুবাদে আবাসনে অবাধে যাতায়াত করেন তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য ও পুর-প্রতিনিধিরা।
সিপিএম জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষের প্রশ্ন, ‘‘শুধু সংগঠন পোক্ত না হওয়াই একমাত্র কারণ নয়। কিছু রাজনৈতিক কারণও রয়েছে। শুধু সংগঠন কারণ হলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে এত লুট সত্ত্বেও ২২ শতাংশ ভোট পেয়েছিলাম কী ভাবে?’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘দলীয় স্তরে পর্যালোচনা চলছে। মানুষের মতামত নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এখনই বলার মতো জায়গায় আসিনি।’’
এক জেলা সিপিএম নেতার কথায়, ‘‘উত্তরপাড়া ও শ্রীরামপুর বিধানসভা এলাকার মতো যেখানে সংগঠন বেড়েছে, সেখানে ভোটও বেড়েছে। মানুষ আমাদের ভালবাসলেও তৃণমূল-বিজেপির মেরুকরণ ভাঙার মতো পোক্ত সংগঠন গড়া যায়নি। পরিস্থিতি বদলাতে হলে গণসংগঠনগুলিকে মজবুত করতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy