এ ভাবেই খাটালের (উপরে) বর্জ্য জমা হচ্ছে সরস্বতী নদীতে। সুগন্ধ্যার জারুড়ায়। ছবি: তাপস ঘোষ।
নদীর পাড়েই খাটাল। গরু-মোষের গোবর থেকে অন্য বর্জ্য গিয়ে মিশছে নদীর জলে। হুগলির পোলবায় এ ভাবে সরস্বতী নদী দূষিত হচ্ছে এবং প্রবাহ বাধা পাচ্ছে বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সরকারি নানা দফতরে ঘুরছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে প্রশাসনিক দফতরে চিঠি চালাচালি ছাড়া নির্দিষ্ট কোনও ব্যবস্থা হয়নি। ফার্মের তরফে অবশ্য স্থানীয়দের একাংশের বিরুদ্ধে ‘অসহযোগিতা’র আভিযোগ তোলা হয়েছে।
পোলবা-দাদপুর ব্লকের সুগন্ধ্যা পঞ্চায়েতের জারুড়া উত্তর গ্রামে কয়েক জন মহিলা মিলে বছর কয়েক আগে একটি ডেয়ারি ফার্ম তৈরি করেন। তার খাটালে অনেকগুলি গরু রয়েছে। তাদের গোবর-সহ অন্যান্য বর্জ্য সরাসরি পাশের সরস্বতী নদীতে গিয়ে মিশছে। তাতে নদীতে গোবরের আস্তরণ পড়ে গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পরিবেশকর্মী এবং এলাকাবাসীর একাংশ উদ্বিগ্ন। তাঁদের বক্তব্য, কার্যত মজে যাওয়া সরস্বতী নদী সংস্কারের উদ্যোগ শুরু হয়েছে। গোবর জমলে সেই উদ্যোগ মাঠে মারা পড়বে।
জলাশয়ের ধারে খাটাল গজিয়ে উঠলে কতটা ক্ষতি হয়, তার উদাহরণ হাতের সামনেই রয়েছে। ডানকুনিতে খালের পাড়ে গত কয়েক দশক ধরে খাটাল গজিয়ে উঠেছে। সেখানে খাটালের গোবরে ডানকুনি খাল কার্যত গোবর-নদীতে পরিণত হয়েছে। ব্যবস্থা না নিলে পোলবায় সরস্বতী নদীর ক্ষেত্রেও একই বিপদের আশঙ্কা করছেন পরিবেশকর্মীরা।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ পেয়ে চন্দননগরের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আইন পরিষেবা কেন্দ্রের সদস্যরা ওই জায়গা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সংগঠনের কর্ণধার তথা পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নদী সংরক্ষণ করতে না পারলে সংস্কার তো অর্থহীন। খাটালের গোবর-সহ বর্জ্য এই ক্ষতিটাই করছে। শুধু ওখানে নয়, নদীর কোনও অংশে প্রবাহ যাতে বাধা না পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। ইতিমধ্যেই সংস্কার হওয়া বিভিন্ন অংশে ফের কচুরিপানা বা আগাছা জন্মেছে। নদীর জল ব্যবহারের রাস্তা খুঁজে এ সব আটকানো দরকার।’’ তিনি জানান, এর আগে দূষণ ছড়ানোর কারণে ভদ্রেশ্বরে একটি খাটাল তুলে দিয়েছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।
শুধু নদী দূষণই নয়, ওই ফার্মের আশপাশের লোকজনের একাংশের অভিযোগ, খাটালের বর্জ্যের দুর্গন্ধে তাঁরা টিকতে পারছেন না। তাঁদের শারীরিক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। গোটা বিষয়টি নিয়ে তাঁরা পঞ্চায়েত থেকে বিধায়ক, পরিবেশ দফতর-সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি দফতরে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু কিছু চিঠি চালাচালি বাদে বিশেষ কিছু হয়নি বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দা তরুণ সিংহের অভিযোগ, ‘‘বেআইনি ভাবে খাটালটা চলছে। দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হতে হচ্ছে। নদী দূষণ তো আছেই।’’
ওই ফার্মের এক সদস্যা বলেন, ‘‘নদীতে গোবর পড়া বন্ধ করতে আমরা গোবর গ্যাসের প্ল্যান্ট করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তাতে আমাদের বাধা দেওয়া হয়। সেটা হলে কিন্তু কোনও সমস্যা থাকত না। আর এখানে কোনও দুর্গন্ধ হয় না। আমাদের উচ্ছেদ করতে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।’’ অপর এক সদস্যার খেদ, ‘‘কয়েক জন মহিলা স্বনির্ভর হতে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে এই প্রকল্প খুলেছি। আরও অনেকের রুজি-রোজগার এর উপরে নির্ভরশীল। ব্যাঙ্কঋণ শোধের ব্যাপারও রয়েছে। অথচ কিছু লোক আমাদের তুলে দিতে এ সব করছেন। বাধ্য হয়ে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।’’ তরুণবাবুর দাবি, ‘‘গোবর গ্যাসের প্ল্যান্ট করতে কেউ বাধা দেননি। ওঁরাই করতে পারেননি। সরকারি দফতর থেকে ওদের খাটাল সরিয়ে নিতে বলা হলেও, করেননি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy