Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
coronavirus

রাস্তায় সংক্রমিত মহিলা, সহায় টোটো-চালক

করোনা-আতঙ্ক অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। আবার এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ত্রাতার ভূমিকাতেও দেখা যাচ্ছে অনেককে।

টোটো নিয়ে সন্টু। — নিজস্ব চিত্র।

টোটো নিয়ে সন্টু। — নিজস্ব চিত্র।

প্রকাশ পাল
রিষড়া শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২১ ০৭:৩০
Share: Save:

রাস্তায় যেন দেবদূতেরই দেখা পেলেন ডানকুনির এক সংক্রমিত যুবতী!

বৃহস্পতিবারের সকাল। যুবতী শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে যেতে চান। সঙ্গে কেউ নেই। তাঁর হাত নাড়া দেখে একের পর এক টোটো থামছিল ঠিকই। কিন্তু তিনি কোভিড পজ়িটিভ জানাতেই মুহূর্তে ভ্যানিশ। অপেক্ষার পালা দীর্ঘ হচ্ছিল। ভাগ্যিস ওই পথে টোটো নিয়ে এসে পড়েছিলেন ডানকুনির রথতলার সন্টু সিংহ!

বছর ছাব্বিশের যুবকটি শুধু ওই যুবতীকে টোটোতেই তুললেন না, হাসপাতাল ঘুরে মহিলাকে পৌঁছে দিলেন রিষড়া সেবাসদন হাসপাতালের ‘সেফ হাউস’-এ। তারপরে নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে এ-ও বললেন, ‘‘দিদি, প্রয়োজন পড়লে নিজের ভাই মনে করে ফোন করবে।’’ দুশ্চিন্তা কেটে যাওয়ার পরে সন্টুর প্রতি কী ভাবে কৃতজ্ঞতা জানাবেন, ভেবে পাচ্ছিলেন না যুবতী। শুধু বলেন, ‘‘ওঁর আবির্ভাবটা দেবদূতের মতো। খুব যত্ন করে আমাকে নিয়ে এল। ভরসা দিল। আমি একা হয়তো পারতাম না।’’

করোনা-আতঙ্ক অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। আবার এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ত্রাতার ভূমিকাতেও দেখা যাচ্ছে অনেককে। সংক্রমণের ভয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা যুবতীর সঙ্গে যাননি। তাঁরা হুগলিতেই তাঁকে বাপের বাড়িতে গিয়ে থাকার পরামর্শ দেন বলে যুবতী জানান। কিন্তু যুবতীর বাপের বাড়িতে থাকার উপযুক্ত জায়গা নেই। তাই তিনি একাই বেরিয়ে পড়েন ওয়ালশে ভর্তি হওয়ার জন্য।

ওয়ালশে ঢোকার আগে যুবতী অবশ্য বাপের বাড়ির এক আত্মীয়কে পেয়ে যান। সন্টু তাঁদের হাসপাতালে নামিয়ে দিয়েও অপেক্ষা করতে থাকেন। যদি কোনও
প্রয়োজন পড়ে!

শারীরিক অবস্থা জটিল না-থাকায় যুবতীকে বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যুবতী আতান্তরে পড়েন। তখনই খোঁজ পান, রিষড়া সেবাসদন হাসপাতালে ‘সেফ হাউস’ চালু হয়েছে। সন্টু যুবতীকে সেখানে নিয়ে যান।

না, এ বারও যুবতীকে নামিয়ে চলে যাননি সন্টু। দাঁড়িয়ে থাকেন। যদি কোনও প্রয়োজন পড়ে! ‘সেফ হাউস’ থেকে প্রথমে বলা হয়েছিল, যুবতীকে ভর্তিতে অনেকটা সময় লাগতে পারে। যুবতী সন্টুকে ফিরে যেতে বলেন। সন্টু নড়েননি। বেলা ১টা নাগাদ যুবতীর ভর্তির ব্যবস্থা হলে সন্টু ফেরেন। তাঁকে ৫০০ টাকা দিয়েছিলেন যুবতী। সন্টু ২০০ টাকা ফিরিয়ে দেন।

সেবাসদনের সেফ হাউসের দায়িত্বে থাকা রিষড়া পুরসভার কোভিড নোডাল অফিসার অসিতাভ গঙ্গোপাধ্যায় এক টোটো-চালকের এই মানবিকতায় মুগ্ধ। তাঁর কথায়, ‘‘যুবতী গৃহ নিভৃতবাসে থাকলেই হত। কিন্তু ওঁর সমস্যা শুনে ভর্তি নেওয়া হয়। ওঁকে পরিবারে যে পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে, সেটা মানবিকতার পরিচয় নয়। অন্যদিকে, এক টোটো-চালক তাঁর সমস্ত মানবিক গুণ নিয়ে একাকী যুবতীকে ভরসা দিয়েছেন। এমন ছেলেদের আজকের কঠিন দিনে অনেক বেশি প্রয়োজন।’’ অসিতাভবাবুর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন যুবতী।

সন্টু কৃতিত্ব নিতে নারাজ। বছর তিনেক টোটো চালাচ্ছেন। তাঁর উপলব্ধি, ‘‘এখন যা পরিস্থিতি, তাতে মানুষের পাশে দাঁড়ানোটাই প্রথম কর্তব্য। টোটোটা না হয় স্যানিটাইজ় করে নেব। তা বলে সংক্রমিতকে দেখে পিছিয়ে যাব কেন? নিজে সবসময় সচেতন থাকার চেষ্টা করি। মাস্ক পরি। বারবার হাত ধুই।’’

এই কঠিন সময়ে আবার রাস্তাঘাটে কোনও সংক্রমিত সওয়ার হতে চাইলে?

‘‘টোটো থামিয়ে দেব। পিছপা হব কেন?’’—পাল্টা প্রশ্নে ভবিষ্যতেও কর্তব্যে অবিচল থাকার বার্তা যুবকের।

অন্য বিষয়গুলি:

COVID-19 coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy