প্রতীকী ছবি।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কিছুটা স্তিমিত। তাতে দুশ্চিন্তা অনেকটা কমলেও ঝাড়া হাত-পা হওয়ার ভাবনা মাথায় নেই হুগলি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের। তাদের বরং চিকিৎসা পরিকাঠামো আরও ঢেলে সাজার ব্যবস্থার কথা ভাবতে হচ্ছে তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কার কথা মাথায় রেখে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের আশঙ্কা, তৃতীয় ঢেউয়ে ছোটরা অনেক বেশি সংখ্যায় সংক্রমিত হতে পারে। তাই, ছোটদের জন্য পৃথক ব্যবস্থার কথাও ভাবা হচ্ছে।
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী জানান, তিনটি বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রথমত, চুঁচুড়া ইমামবাড়া জেলা হাসপাতাল এবং আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ছোটদের জন্য আইসিইউ (পেডিয়াট্রিক আইসিইউ) বিভাগ তৈরি করা। দ্বিতীয়ত, পাঁচটি বড় হাসপাতালে (জেলা সদর, শ্রীরামপুর ওয়ালশ, চন্দননগর, আরামবাগ মহকুমা এবং উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল) অক্সিজেনের প্লান্ট তৈরি এবং পাইপলাইনের মাধ্যমে তা রোগীদের সরবরাহের ব্যবস্থা করা। তৃতীয়ত, জেলার চার মহকুমায় দু’টি বা একটি গ্রামীণ হাসপাতালে পাইপলাইনের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করা।
হুগলিতে কোনও সরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন প্লান্ট নেই। করোনার বাড়বৃদ্ধির সময় এর অভাব স্বাস্থ্য দফতর টের পেয়েছে। কেননা, বহু রোগীকেই অক্সিজেন দিতে হয়েছে। তাতে অক্সিজেনের চাহিদা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। সেই তুলনায় সিলিন্ডার জোগাড় করতে স্বাস্থ্যকর্তাদের নাজেহাল হতে হচ্ছিল। তাঁদের বক্তব্য, প্লান্টে অক্সিজেন তৈরি হবে। ফলে, এই সমস্যা থাকবে না। দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় আইসিইউ শয্যার অভাবও দেখা গিয়েছে। এ কথা স্বাস্থ্যকর্তারাও মানছেন। সেই খামতি দূর করে তৃতীয় ঢেউয়ের ক্ষেত্রে এই শয্যার সংখ্যা আরও বাড়ানো উচিত বলে চিকিৎসকদের একাংশ মনে করছেন।
এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, ‘‘প্রথম পর্বে ছোটদের সে ভাবে সংক্রমণ হয়নি। হলেও বিশেষ সমস্যা হয়নি। দ্বিতীয় ঢেউয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি সংখ্যক নাবালক সংক্রমিত হয়েছে। তৃতীয় ঢেউ ছোটদের আরও বেশি সংখ্যায় সংক্রমিত করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে তাদের চিকিৎসায় যাতে কোনও ফাঁক না থাকে, তা নিশ্চিত করা জরুরি।’’ বড়দের টিকাকরণ চললেও ছোটদের ভ্যাকসিন এখনও আসেনি।
দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে হুগলিতে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। গত ২৩ মে পর্যন্ত এই ঊর্ধ্বগতি বজায় ছিল। তার পরের দু’সপ্তাহে সংক্রমণ যে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে, পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। বেশ কিছু দিন দৈনিক সংক্রমণ হাজারের বেশি ছিল। এখন পাঁচশোর নীচে। শনিবারের বুলেটিনে দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ৪৭৭ জন।
এক সময় হাসপাতালে স্থানাভাবে রোগীদের ভর্তিতে নাজেহাল হতে হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরকে। সংক্রমণ হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে সেই আকালও অনেকটা কেটেছে। ওয়ালশ হাসপাতাল সূত্রের খবর, কিছু দিন আগেও কোভিড ওয়ার্ডের সমস্ত শয্যা ভর্তি থাকছিল। এখন সেই চাপ কমেছে। রবিবার ৬০-৬৫ শতাংশ শয্যা ভর্তি ছিল। জেলায় দৈনিক কোভিড মৃত্যুর সংখ্যাও কিছুটা হলেও কমেছে। তবে, এই সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনাই স্বাস্থ্যকর্তাদের লক্ষ্য।
চিকিৎসকদের একাংশ মনে করছেন, সংক্রমণ স্বাভাবিক কারণে কিছুটা কমেছে। জনজীবনে কড়া বিধিনিষেধ সংক্রমণ হ্রাসে অনেকটাই সাহায্য করেছে। এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘সংক্রমণ বাড়তে দেখে কিছু মানুষ সচেতন হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার উপরে জোর দিয়েছিলেন। অনেকে বিধিনিষেধের কারণে সতর্ক হয়েছেন। বিধিনিষেধের জন্য জমায়েতও কম হয়েছে।’’ এর পাশাপাশি তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সংক্রমণ কমছে বলে আগের মতো যেমন খুশি ভাবে ঘোরাঘুরি বা জমায়েত করলে ফের নিজেদের বিপদ ডেকে আনার শামিল হবে। তাই, মাস্ক পরা, দূরত্ববিধি বজায় রাখা এবং ঘনঘন হাত ধোওয়ার অভ্যাস চালিয়ে যেতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy